কৃষিঃ অর্থনীতির প্রাণশক্তি

2662

Published on ডিসেম্বর 25, 2013
  • Details Image

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মুলত কৃষিখাতের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কৃষিভিত্তিক খাত ও কৃষিশিল্প দেশের অর্থনীতি মুল চালিকাশক্তি। দেশের কৃষিখাতের শ্রমশক্তি প্রায় পুরোটাই গ্রামাঞ্চলে এবং এই শক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমেই কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব। একই সাথে খাদ্য আমদানীর উপর নির্ভরশীলতাও কমবে। গত পাঁচ বছরে দেশের কৃষিখাতে বিপুল উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্নতা অর্জন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই আমলে কৃষিখাতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

কৃষকের কষ্ট লাঘব

কৃষি খাতে টেকসই উন্নয়ন সাধন করতে সরকার কৃষকদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার কৃষকদের সবধরনের সহযোগিতা পাওয়ার সুবিধার্থে কৃষিউপকরন সহায়তা কার্ডের প্রণয়ন করেছে যা দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার কৃষিখাতে ২৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রধান করেছে। দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ কৃষি উপকরন সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। ৩৫টি জেলায় সরকার ট্রাক্টর, ফসল কাটার যন্ত্র, শক্তিচালিত লাঙ্গল এবং অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দামে সরবরাহ করে। বর্তমান সরকারের আমলে কৃষিখাতে সর্বমোট ৩২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়।

কৃষি পুনর্বাসন কর্মসুচীর আওতায় সরকার বিনামুল্যে বীজ ও সার সরবরাহ অব্যাহত রাখে। এই কর্মসুচীর অংশ হিসেবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ লক্ষ ৩২,৫০০ কৃষককে ৪৩ কোটি টাকা মুল্যের সার ও বীজ বিনামুল্যে সরবরাহ করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে সারের মুল্য ৩ দফা কমানো হয়। সেপ্টেম্বর ২০১৩ তে সারের মুল্য ৪ টাকা কমানো হয়। ২০০৬ সালে মিউরেট অফ পটাস সারের দাম ছিল ৭০ টাকা যা ২০১২ সালে ১৫ টাকায় নেমে আসে। ট্রিপল সুপার ফসফেট সারের দাম ২০০৬ সালে ৮০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০১২ সালে ২২ টাকা করা হয়। ডিএপি সার এখন ২৭ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে যা ২০০৬ সালে ছিল ৯০ টাকা।

সারের মুল্য কৃষকদের হাতের নাগালে রাখার পাশাপাশি সারের যথার্থ ব্যবহারের উপরও গুরুত্বারোপ করে মহাজোট সরকার। মাটির উর্বরতা ধরে রাখতে কৃত্রিম সারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সারের উৎপাদন ও ব্যবহারের উপরও গুরুত্ব দেয় সরকার। এই লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছর ১৮ লক্ষ কৃষকদের ঘরে মিশ্রসারের গাদা তৈরী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

নতুন যুগের সুচনা

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কৃষকদের ডিজিটাল সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারছে। উপকূলীয় এলাকা আমতলিতে সরকার একটি কমিউনিটি রেডিও সেন্টার চালু করেছে যেখানে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়। ১০টি ইন্টারনেট সুবিধাসম্পন্ন ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য ১৫টি মাল্টিমিডিয়া ই-বুক তৈরী করা হয়েছে। কৃষি কল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যেখানে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক সেবা পেয়েছেন। খুদেবার্তা সেবার মাধ্যমে ৭০ হাজারেরও বেশি কৃষক আজ কৃষি সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারছেন। এই সরকারের আমলেই কৃষিভিত্তিক ওয়েবসাইট চালু হয়েছে।

একটি স্বনির্ভর জাতি

খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আওয়ামী লীগ সরকার গত পাঁচ বছরে অনেক গুরুত্বপুর্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সরকারী প্রচেষ্টায় দেশের মোট খাদ্য চাহিদার ৩৯ শতাংশ মেটানো সম্ভব হয়।২০১২-১৩ অর্থবছরে এসে এই হার ৫৯ শতাংশে উন্নীত হয়। ৩ কোটি ৭২ লক্ষ ৬৬ হাজার চাল উৎপাদনের ফলে গত দুই বছর চাল আমদানীর প্রয়োজন পড়েনি। কৃষকদের মাঝে ৪৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা কৃষিঋণ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত সার ও বিদ্যুতের জন্য ৩২ হাজার ১৫০ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা এবং কৃষিকাজের আধুনিকায়নের জন্য ১৬৩ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। মোট খাদ্য উৎপাদন হয়েছে ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের সময়ে কৃষিখাতে ব্যাপক ও সুদুরপ্রসারী উন্নয়নের ফলে প্রথমবারের মত সারাবিশ্বে বাংলাদেশে উৎপাদিত উচ্চফলনশীল ধান ও শস্যের বীজ রপ্তানি শুরু হয়েছে। খাদ্য মজুদের পরিমান ১৩ লক্ষ থেকে ২০১৩তে এসে ২০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। একটি আধুনিক খাদ্যনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সফল হয়েছে সরকার।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত