নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়ন ধরে রাখুনঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

20740

Published on এপ্রিল 1, 2018
  • Details Image
    চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল)
  • Details Image
    চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল)
  • Details Image
    চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য নৌকায় ভোট চেয়ে বলেছেন, ‘নৌকা জনগণের প্রতীক’। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীতে যে নির্বাচন হবে, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণানুযায়ী আগামী ডিসেম্বরেই হবে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে উন্নয়নের ধারবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’

শেখ হাসিনা রোববার বিকেলে চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণকালে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার আহ্বান- নৌকা মার্কা আপনাদের মার্কা, এই নৌকা মার্কা সবসময় মানুষকে উদ্ধার করে। নূহ নবীর নৌকা মানবজাতি এবং পশুপাখি সব রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের উন্নয়নের ধারবাহিকতা ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হত্যাকান্ড, খুন-খারাবি নয়, দেশের মানুষ যাতে শান্তি পায় সেই ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম বলেই আজকে সে উন্নয়নের সুফল আপনারা পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেই ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে চাই। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। এ জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা জাতির পিতার খুনীদেরকে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল, ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসায়, যারা যুদ্ধাপরাধী, সাজাপ্রাপ্ত আসামী, তাদের হাতে যারা লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দেয় তারা এদেশের কোন উন্নয়নে বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন, তারা অতীতে কোন উন্নয়ন করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর অন্যান্য প্রাক নির্বাচনী জনসভার মত নৌকায় ভোট প্রদানের জন্য উপস্থিত জনগণের দুই হাত তুলে ওয়াদা চাইলে জনগণ দুই হাত তুলে এবং চিৎকার করে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করে।

চাঁদপুর বাসীর উন্নয়নে তাঁদের কোন কিছু দাবি করা লাগবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখানে আড়াইশ’ বেডের একটি হাসপাতাল করে দিয়েছি এবং একটি মেডিকেল কলেজও করে দেব। আর চাঁদপুরের হাইমচরে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেব, পর্যটনের কেন্দ্র এখানে গড়ে তোলা হবে, নৌ ভ্রমণের জন্য বন্দোবস্ত সেখানে থাকবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপুমনি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম জনসভায় বক্তৃতা করেন। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া স্থানীয় সাংসদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও জনসভায় বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদপুরের জন্য স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে যা যা প্রয়োজন, সব কিছুর উন্নয়নেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আজ ৪৭ টি উন্নয়ন প্রকল্পে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থপন করা হয়েছে।

চাঁদপুরের উন্নয়নে তাঁর সরকার কিছুই বাদ রাখেনি, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর সরকারের উদ্যোগে সারাদেশে ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান এবং ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর বৃত্তির টাকা মায়েদের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া এবং এজন্য ২০ লাখ মা’কে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়া, সারাদেশে ৫২৭৫ টি ডিজিটাল সেন্টার করে উদ্যোক্তা তৈরীর মাধ্যমে যুবসমাজের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের নিদেন পক্ষে একটি টিনের ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগসহ পোষ্ট অফিসগুলো ডিজিটাইজেশনের তথ্য তুলে ধরেন।

বেকারদের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য অর্থায়ন করতে কর্মসংস্থান ব্যাংক করা, শ্রমিকদেরকে যেন জমি বিক্রি করে বিদেশে যেতে না হয়, সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করা, বর্গাচাষীদেরকে বিনা জামানতে ঋণ দেয়া, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রাম এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা দেয়া, সব হাসপাতালে শয্যা বৃদ্ধি, বয়স্ক মহিলা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা এবং দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালুর তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খন্ড চিত্র তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, এই আওয়ামী লীগকে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন, আমরা আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আর নৌকায় ভোট দিলে কেউ খালি হাতে ফেরে না। এই নৌকায় ভোট দিয়েই এদেশের মানুষ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। আর এই নৌকাই যখন ক্ষমতায় আসে তখনই উন্নয়ন হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ গড়ে তুলেছি। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস করেছি। এখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করছি, জেলায় জেলায় আইটি পার্ক করে দিচ্ছি।’

মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনিদের চাকরির জন্য কোটার সুযোগ রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এই মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। অনেকে জীবন দিয়েছে, অনেকে পঙ্গু হয়ে আছেন, তাদের সম্মান করা। তাদের পরিবারকে সম্মান করা-এটা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করেছি, তাই সম্মান করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নে বিশ্বাস করি। আর সে উন্নয়ন গ্রাম পর্যায় থেকে, সে উন্নয়ন সাধারণ মানুষের উন্নয়ন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য যে, এই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে। কিন্তুু আপনারা জানেন এই বিএনপি-জামাত যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের ওপর অকথ্য অত্যাচার করে, লুটপাট করে, দুর্নীতি করে, মানি লন্ডারিং করে, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে, জনগণের ঘর-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই কেড়ে নেয়, লুটে খাওয়াটাই ওদের চরিত্র।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা- ওরা এগুলোতেই পারদর্শী। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা-এটাই তাদের আন্দোলন। আপনারা দেখেছেন ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের মত মানুষকে আগুনে পুড়িয়েছে, ৫শ’ মানুষ মারা গেছে, প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার গাড়ি, বাস ট্রাক, লঞ্চ, রেল, সিএনজি-সব আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। আর আওয়ামী গড়ে তোলে, উন্নয়ন সাধন করে কারণ, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এই আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ে তুলে দেশের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। আমরা যা যা ওয়াদা দিয়েছিলাম প্রত্যেকটা ওয়াদা আমরা রক্ষা করেছি। পাশাপাশি তার থেকে বেশি কাজ করেছি। আজকে আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এই চাঁদপুরে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে এবং আরও নতুন একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্রও হচ্ছে। যেখানে বিদ্যুতের লাইন নাই সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুতের লাইন দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।

ইনশাল্লাহ কোন ঘর অন্ধকারে থাকবে না, প্রতি ঘরে আমরা আলো জ্বালবো, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিলাম। ২০১৪ সালে খালেদা জিয়া আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করেছিল তারপরও জনগণ ভোট দিয়েছে, আপনারা ভোট দিয়েছেন, চাঁদপুরবাসী ভোট দিয়ে প্রত্যেকটা সিটে নৌকা মার্কাকে জয়যুক্ত করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলে গেছেন, ভিক্ষুকের জাতির কোন ইজ্জত থাকে না। আমরা সব জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করবো। বাংলাদেশ হবে ভিক্ষুকমুক্ত। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো, কারোর কাছে হাত পাতবো না।

জনসভায় খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা মেরে দিয়েছে। এতিমের হক মেরে না খাওয়ার জন্য যেখানে পবিত্র কোরআন শরীফে পর্যন্ত নিষেধ আছে। তার জন্য আবার কিসের আন্দোলন।’

তিনি বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগে বিদেশে মামলা হয়েছে। আমরা সে টাকা সেখান থেকে ফেরত এনেছি।

প্রধানমন্ত্রী জনসভায় তাঁর সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী জিরো টলারেন্সনীতির পুনরুল্লেখ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে পুত্র ও পোষ্যদের দূরে রাখতে অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং ধর্মগুরুদের প্রতি আহবান জানান।

তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সন্তান কোথায় যায়, কেন যায় সে বিষয়ে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত