আমার জীবনের প্রিয় দুটি শব্দ

3813

Published on আগস্ট 16, 2018
  • Details Image

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ

আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় দুটি শব্দ হলো বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ। এই শব্দদ্বয় একটি অপরটির পরিপূরক। বঙ্গবন্ধু ছাড়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আবির্ভাব যেমন কল্পনাতীত ঠিক একইভাবে আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক চিন্তারই ফসল।

আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। ছোটবেলায় জানতে পারি, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জনক। স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার আলাদা রকমের ভালো লাগা কাজ করতো এবং একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার একটা অসম্ভব রকমের আগ্রহও তৈরি হয়েছিল— যা আমার পরবর্তী জীবনকে বহুলাংশে সমৃদ্ধ করেছে। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের নড়বড়ে ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান। এই নব্য পাকিস্তান রূপ নেয় বাঙালির শোষণ-বঞ্চনার লীলাভূমি হিসেবে। আর সেই পাকিস্তানের শোষণ নিপীড়ন বঞ্চনা থেকে বাঙালিদের মুক্ত করাই বঙ্গবন্ধুর একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর নির্বাচন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়েছেন তিনি। নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ১৮-১৯ মিনিটের ভাষণে বাঙালি জাতির মুক্তির বার্তা প্রেরণ করেন—যা স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য গোটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়— যেটি ইতিহাসের পাতায় ঘৃণিত ‘ অপারেশন সার্চ লাইট ’ নামে পরিচিত। সেই রাতেই পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক ধানমন্ডিস্থ স্বীয় বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ দমে যায়নি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের শক্তিতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এবং শুরু করেছিল মুক্তিযুদ্ধ।

স্বাধীনতার কয়েক বছর পর বঙ্গবন্ধুর রক্তে ভিজেছিল এদেশের বুক— যা গোটা বিশ্বকে বিচলিত করেছিল। কারণ পাকিস্তানিরা বারবার হত্যার চেষ্টা করেও জাতির জনককে হত্যা করতে পারেনি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছিল নিজ দেশের ঘাতকদের বুলেটে। বাঙালি জাতির জন্য এটা ছিল বড়ই গ্লানির।

অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ন্যায্য ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠনের তীব্র ইচ্ছা এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর একাগ্রতাই স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মত গর্হিত কাজে প্ররোচিত করেছিল। তবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

আজ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের ৪৩ বছর পর এই দেশকে পুরনো কায়দায় অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি। কিন্তু সেটি এই পবিত্র ভুখণ্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কঠোরহস্তে প্রতিরোধ করতে সদা বদ্ধপরিকর।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত