গণশুনানি, গণতামাশা ও গণনিদ্রা- জাফর ওয়াজেদ

4408

Published on ফেব্রুয়ারি 26, 2019
  • Details Image

কৃতকর্মের জন্য দুঃখ এবং লজ্জাবোধের মধ্যেই মনুষ্যত্বের প্রকাশ। তখন স্পষ্ট হয় মুহূর্তের উন্মাদনায় যারা আত্মবিস্মৃত হয়েছিল তারাও মনুষ্যজাতি। অযথা উন্মাদনার সৃষ্টি করে যারা মানুষকে মনুষ্যত্ব থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে তারা মানুষের এবং সমাজের ঘোরতর শত্রু। স্বাধীনতা বিরোধীরা যেখানেই গিয়েছে সেখানেই মানুষকে দু’ভাগ করে দিয়েছে। একাত্তরে যখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ তখন কতিপয় বাঙালীবিদ্বেষী বঙ্গদেশে জন্ম নিয়ে বঙ্গবাসীকে হত্যা শুধু নয়, গণহত্যায় সক্রিয় ছিল। তারা একটি ক্ষুদ্রাংশকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত করেছিল। তারা বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করেছিল। কিন্তু তারা পরাজিত হয়েছিল বাঙালী মুক্তিসেনাদের কাছে। তারপর আত্মগোপনে যায় কেউ, কেউ দেশত্যাগ করে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই ষড়যন্ত্র সফল করতে তারা সহায়তা পায় সামরিক-বেসামরিক একটি গোষ্ঠীর, যারা আবার মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি। তাদের অপতৎপরতায় দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইলেও সর্বত্রগামী হতে পারেনি। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের আক্রোশ চরিতার্থ করতে পেরেছিল বলা যায়। এসব ঘটনা এবং ইতিহাস এদেশের অনেক মানুষের জানা। তবে নয়া প্রজন্ম সেভাবে অবহিত হতে পারেনি। পঁচাত্তর পরবর্তী ক্ষমতার দখলদার সামরিক জান্তারা স্বৈরশাসকে রূপান্তরিত হয়ে সবকিছু তছনছ করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল। যদিও তারা ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, মানুষের মনোজগতে যে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ফল্গুধারা প্রবাহিত করতে চেয়েছে তার ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান। থেমে নেই তাদের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা। আর তাতে শামিল হয়েছেন মুুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কতিপয় ব্যক্তি এবং যুদ্ধকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণকারীজনরাও। তারা এখনও নসিহত করে যাচ্ছে স্বাধীনতা রক্ষার এবং দেশকে উদ্ধার করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম চালানোর। জনগণ তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করলেও তারা থেমে নেই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে পর্যুদস্ত করার জন্য তারা নানা কিসিমের ঘোঁট এখনও পাকিয়ে চলছে। নির্বাচনে জনগণের প্রদত্ত রায়কে বানচাল করতে তাদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা হালে পানি পায়নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটে প্রত্যাখ্যাত যারা হয়েছে, তারা পরাজয়ের কার্যকারণ খতিয়ে না দেখে, বরং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য শুরু থেকেই চেঁচামেচি করে আসছিল। কিন্তু তাদের সেসব হ্রেষাধ্বনি বা সদম্ভ চিৎকার সাধারণ মানুষের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। ফলে জনসমর্থন শূন্যের কোটায় এসে ঠেকেছে। কিন্তু সেই উপলব্ধি তাদের না ঘটলেও তারা হম্বিতম্বি অব্যাহত রেখেছে। গত ত্রিশে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার প্রায় দু’মাসের মাথায় এসে বাগাড়ম্বর টানছে এই বলে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আর এ বাক্য নিঃসৃত হচ্ছে তাদের মুখেই, যারা অতীতে কখনও গণরায় মেনে নিতে পারেনি। নির্বাচনে ভরাডুবি থেকে যে প্রমাদ গুনছে, সেখানে নির্বাচনকে ‘কলঙ্কজনক’ বলা অতিসাধারণ ভাষ্য বলেই অনুমেয়। পঁচাত্তর পরবর্তী যেসব নির্বাচন হয়েছে জান্তা শাসকদের তত্ত্বাবধানে সেসব নির্বাচনের একটিও সুষ্ঠু, অবাধ হয়েছে বলে স্বয়ং বিজয়ীরাও মনে করেনি। এবারের নির্বাচন নিয়ে কটু কথা বলছেন তিনি, যিনি ভিকারুননিসা নূন কলেজ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দান শেষে হাসি হাসি মুখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। অপ্রীতিকর কোন দৃশ্যই তার চোখে পড়েনি। সেই তিনি ভোটের তিপ্পান্ন দিন পর এসে গণশুনানির আয়োজন করে বলছেন, এটাকে নির্বাচন বলা যায় না, এটা প্রহসন। হেরে গেলে এমন কথা বলা স্বভাবজাত। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা ভোটের অনেক আগে থেকেই মাতম তুলে আসছিল, সংবিধানবহির্ভূত অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অথচ সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়েছে এবং প্রমাণিত হয়েছে, অতীতের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এটা তো সত্যি, কোন হাঙ্গামা, হানাহানি, সংঘর্ষ, হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটেনি অতীতের মতো। কেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মতো ঘটনাও দৃশ্যমান ছিল না। আর তা যে ছিল না, তার প্রমাণ তারা রেখেছেন গণশুনানিতে। যার বিচারক ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে গঠিত ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডক্টর কামাল হোসেন। কিন্তু কি দেখলাম আমরা এই শুনানি নামক গণতামাশায়? নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি বা ‘কলঙ্কজনক’ বলে কামাল হোসেন যেসব বাক্যবাণ ছুড়েছেন তার কোন বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়নি। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া ৪১ প্রার্থী যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে ভোটে কারচুপির কোন প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে পারেননি। তিন শ’ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪১ জনের উপস্থিতি প্রমাণ করে বাকি ২৫৯ আসনের প্রার্থীদের কোন অভিযোগ বা ভাষ্য নেই। নির্বাচনে প্রচারকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন বলেছিলেন, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করেছি (বিস্ময়কর যে, তিনি একাত্তরের মার্চেই হানাদার বাহিনীর জেনারেল মিঠঠা খানের কাছে আত্মসমর্úণ করে শ্বশুরালয় পাকিস্তান চলে যান। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা করেনি পাকি হানাদাররা। বরং সেখানে তিনি আইন পেশায় জড়িত ছিলেন। ভুট্টো তাকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল, সেই তিনি পরাজিত করেছেন হানাদারদের?)। স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। ভীতি উপেক্ষা করেই গণতন্ত্রের মুক্তি নিশ্চিত করতে ত্রিশে ডিসেম্বর ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে। ভোটের অধিকার আদায়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে। কামাল হোসেন হয়ত জানেন না যে, যত গর্জে তত বর্ষে না। তাই তার ‘খামোশ’, জানোয়ার, ‘আওয়ামী লীগারদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে’ জাতীয় হুমকিধমকি ব্যুমেরাঙে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতকে যে তিনি তলে তলে ইন্ধন দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছিলেন তাদের পুনর্বাসনের জন্য। সেই কামাল হোসেন স্বাধীনতা রক্ষা করতে চান বলে যত জোরেই গলা হাঁকান না কেন, জনগণের সন্দেহ তাতে বেড়েছেই। মানুষ বুঝতে পেরেছে, ২০০১ সালের মতো বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় এনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ, নাশকতা, হানাহানির পথ উন্মোচন করতে চান কামাল হোসেন ও তদীয় সাগরেদরা। তদুপরি বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ অন্যান্য অপকর্ম মানুষের চোখের সামনে এখনও ভাসতে থাকে। তাই মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কামালের ডাকে ঐক্যফ্রন্টের কোন প্রার্থীই সাড়া দেয়নি। যে কারণে বিএনপি ভোটকেন্দ্রে কোন এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেনি। গণমাধ্যমকে তারা বলেছে, এজেন্টদের নামধাম গোপন রাখা হয়েছে। যথাসময়ে ঘোষিত হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ফলে কোন এজেন্টের দেখা মেলেনি। তিনি তো এটাও জানেন, সন্ত্রাসী, বোমায় মানুষ হত্যাকারী, গণধিক্কৃত, ঋণখেলাপীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলের অনেক প্রার্থীই গণরোষের ভয়ে প্রচারে নামেনি। জামায়াতকে ২২ আসন দেয়া হলেও কামাল হোসেন অবলীলায় অসত্য ভাষণ দেন যে, এই মনোনয়ন সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তেলে-জলে না মেশা ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হয়ে তিনি জানেনই না কারা প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়নকালে কামাল হোসেন বধিরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কোন প্রার্থীই তিনি নির্ধারণ করতে পারেননি। জামায়াত যেখানে ২২ আসন পায়, কামাল হোসেন সেখানে হাতে গোনা কয়েকটি আসনে নিজ দলের প্রার্থী দিতে পেরেছেন। ‘লেজে গোবরে’ অবস্থায় পতিতদের দিয়ে যে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যায় না, সে বোধ শীর্ষ নেতার না থাকারই কথা। নির্বাচনে হেরে যাবার ইতিহাস তার বড়ই সকরুণ। জনগণ তার প্রতি আগ্রহী হলে নির্বাচনে জামানত হারানোর মতো অবস্থার শিকার তাকে হতে হতো না। গণবিচ্ছিন্ন এই নেতা যখন ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’ বলে উচ্চকণ্ঠ হন, তখন জনগণ একে গণতামাশাই মনে করে।

তাদের পরাজয় সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দিনকয়েক আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে গালফ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘বিরোধী দলগুলো গত ত্রিশে ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে একেবারেই ‘সিরিয়াস’ ছিল না। তারা প্রায় নয় শ’ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। একটি আসনে যদি তারা দুই থেকে তিনজনকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে কীভাবে জিতবে? উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, দুবাইয়ের এক বাংলাদেশী প্রবাসীকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার কথা বলে একটি বিরোধী দল তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সেই প্রবাসী আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়েছিলেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে। দূতাবাস তা গ্রহণ করতে পারে না। তাকে বাংলাদেশে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। দূতাবাসও এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছিল। ওই ভদ্রলোক এতে মর্মাহত হন। এজন্য তিনি অনেক টাকা খরচ করেছেন। লন্ডনেও দিয়েছেন। তাকে বলা হয়েছিল দূতাবাসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। এ ঘটনা বিরোধীদের অদক্ষতার পরিচয় দেয়।’ কামাল হোসেন এসব জানেন না, শোনেননি, তা নয়। তিনি জানতেন যে, মনোনয়ন বাণিজ্য চলছে তার নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষদল বিএনপিতে। তিনি নীরবতা অবলম্বন করেছিলেন তখন।

গণশুনানিতে ভোট কারচুপি নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বা প্রমাণাদি কেউ হাজির করতে পারেনি। মনগড়া সব গল্পকাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। বরং প্রার্থীরা শীর্ষনেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, যাতে তাদের অদক্ষতা, অযোগ্যতা উঠে এসেছে। তারা দলের ও ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সমালোচনায় নির্বাচনী গণশুনানির আগে দল নিয়ে শুনানির কথা বলেন। এতে ঘটনাস্থলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। অধিকাংশ প্রার্থী নির্বাচন পরবর্তী কোন আন্দোলন কর্মসূচী না দেয়ায় ক্ষোভ জানান। তারা বলেন, সাত দফা দাবি না মানার পরও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ফ্রন্ট। বোমাসহ অন্যান্য অপরাধের মামলার বিরুদ্ধে কঠোর কোন প্রতিবাদ করেনি কেন্দ্রীয় নেতারা। এমনকি ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করা হলেও আন্দোলনের কোন কর্মসূচী দেয়া হয়নি। কামাল হোসেন গণশুনানির বক্তব্য গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে বিদেশীদের প্রদান করবেন। বিদেশনির্ভরতা তার পুরনো। ভোটের আগে-পরে বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে হাবিজাবি সব অভিযোগ করেও কোন ফলোদয় হয়নি যদিও। একদা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার জানা থাকার কথা কূটনীতিকদের সীমা-পরিসীমা কতটুকু। সেসব ভুলে বার বার বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিতে হচ্ছে এই কারণে যে, দেশের জনগণের কাছে তার এসব কার্যকলাপের কানাকড়ি মূল্যও নেই।

ঢাকঢোল পিটিয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে একটাই লাভ হয়েছে কামাল হোসেনের, তা হচ্ছে, দুর্নীতির মামলায় আদালতের সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তাকে আন্দোলন করতে হবে। আইনের শাসন ও সুশাসনের দাবিদার কামাল হোসেনের ‘মতিভ্রম’ না হলে তিনি আদালতে প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত বলতে পারেন? গণশুনানিতে অনেকেই ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নির্বাচনে দুর্বলতর দিককে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। এই শুনানিতে কিছুই মেলেনি কারও। বরং বলা যায়, এ-ও একধরনের গণতামাশা। যা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শুনানির দু’দিন আগে তিনি অবশ্য হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, গণশুনানির নামে গণতামাশা করা হলে পুলিশকে বলা হবে ব্যবস্থা নিতে। এখানে প্রশ্ন থাকে, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা না করে এভাবে পুলিশী ব্যবহার কতটা যৌক্তিক। রাজনীতিতে দেউলিয়া হলে গণতামাশায় নামা স্বাভাবিক। গণতামাশার সবচেয়ে কৌতুককর দিক ছিল, গণনিদ্রা। কামাল হোসেনসহ সাত সদস্যের প্যানেলের সদস্যদের গণনিদ্রার দৃশ্যপটটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক’ বলে অশীতিপর কামাল হোসেন ঘুমাতেই পারেন। কিন্তু বাকিরা! সামাজিক মাধ্যমে এই চিত্রাবলীকে ব্যাপক তুলোধুনো করা হয়েছে। রাজনৈতিক এসব এতিমের সামনে কোন যৌক্তিক পথ খোলা নেই। থাকলে ভাল হতো। কিন্তু সব পথই তাদের রুদ্ধ।

নির্বাচনে হেরে গিয়ে কামালরা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে পারেন, ‘যা কিছু হারায়, গিন্নি বলে কেষ্টা বেটাই চোর।’ নির্বাচনে হেরে গিয়ে তাই প্রলাপবাক্য নির্গলিত হচ্ছে গণশুনানির নামে গণতামাশা আয়োজকদের। এই করুণ অবস্থার যেন হয় অবসান।

সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত