৩৫ হাজার কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন গাজীপুর-৩ এর সাংসদ

1808

Published on জুন 24, 2020
  • Details Image

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামের এক মুদি দোকানির ঘরে খাবার নেই। স্ত্রী তিন শিশু ছেলেমেয়ে নিয়ে গত ১৯ জুন অভুক্তই কাটছিল রাত। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে আচমকা ডাক শোনা গেল, ‘ভাই দরজা খোলেন, আমি আপনাদের এমপি।’ দরজা খুলেই ওই মুদি দোকানির চোখ ছানাবড়া। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ। সঙ্গে কেউ নেই-একা, কাঁধে খাদ্যসামগ্রীর বস্তা। অবাকবিস্ময়ে মুদি দোকানি জানালেন, তার ঘরে খাবার নেই-এটা সংসদ সদস্য কীভাবে জানলেন! তিনি স্বপ্ন দেখছেন না তো!

পাশের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের পোশাক কারখানার তরুণী শ্রমিক (২৪) কভিড-১৯ পজিটিভ। ভাড়া বাসায় হোম আইসোলেশনে রয়েছেন তিনি। বছর খানেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ওই তরুণীর স্বামী মারা গেছেন। নিঃসন্তান ওই তরুণী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর স্বজনদের পাশে পাচ্ছেন না। সহকর্মী ও প্রতিবেশীরাও সংক্রমণের ভয়ে দূরে সরে গেছেন। গত শনিবার রাতে ওই তরুণীর বাসায় দরজায় কড়া নড়ে উঠে। বাইরে থেকে দরদভরা ডাক, ‘বোন, দরজা খোলেন। আমি আপনাদের এমপি।’ দরজা খুলে ওই তরুণীও হতবাক। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য। তাঁর দুই হাতে নানা ফলের প্যাকেট। সঙ্গে থাকা তাঁর গাড়িচালকের কাঁধে খাদ্যসামগ্রীর বস্তা।

অভুক্ত ওই মুদি দোকানি আর নিঃসহায় কভিড-১৯ রোগী তরুণীই নয়, করোনা মহামারির এই সংকটকালে প্রায় প্রতিরাতেই কারো-না কারো বাড়িতে হাজির হচ্ছেন ইকবাল হোসেন সবুজ। কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, গত ৩১ মার্চ কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ই তিনি কথা দিয়েছিলেন, শ্রীপুর উপজেলাসহ গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়নে একজন মানুষও অভুক্ত থাকবে না। পরে ওই তালিকা আরো দীর্ঘ করে ৩৫ হাজার কর্মহীন মানুষের ঘরে বিভিন্ন দফায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন তিনি।

গ্রামপর্যায়ে নেতাকর্মী ছাড়াও শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। কর্মহীন হয়ে পড়া কেউ অভুক্ত কিনা, কভিড-১৯ রোগীরা অবহেলার শিকার কিনা তিনি খোঁজ রাখছেন।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস জানান, এর আগে গত ১২ মে করোনাজয়ী ১৮ জনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ইকবাল হোসেন সবুজ। শুধু তাই নয়, তাঁদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেন চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি, হরেক ফল, লেবু ও দুটি করে দেশি মুরগি। ডা. প্রণয় ভূষণ দাস আরো জানান, মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মীদেরও পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছেন সংসদ সদস্য।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানায়, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিদিন কভিড-১৯ রোগীদের হালনাগাদ তথ্য নিচ্ছেন ইকবাল হোসেন সবুজ। রোগীদের কার-কী অবস্থা তাও জেনে নিচ্ছেন। অবস্থা খারাপ হলে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করে রোগীকে গাজীপুর কিংবা ঢাকায় পাঠানোরও ব্যবস্থা করছেন।

শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান জানান, কভিড-১৯ রোগী যেন অবহেলার শিকার না হোন, এই জন্য নিজেই অনেক রোগীর বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হন ইকবাল হোসেন সবুজ। তাঁদের চিকিৎসার খোঁজ নেন। দেন সহায়তা।

এইসব প্রসঙ্গে ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, ‘সবাই মিলে একসঙ্গে সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। আর এরই জন্য যুদ্ধ করছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন যুদ্ধে আছি। রাতে কারো বাসায় গিয়ে যখন ডাক দেই, দরজা খুলেই কেঁদে ফেলেন অনেকে। সহায়তা হিসেবে যা দিচ্ছি এটা বড় নয়, আমাকে কাছে পেয়ে তাঁরা সাহসী হয়ে উঠছে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত