ছাত্রলীগের উদ্যোগে চালু হলো বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’

2858

Published on জুন 30, 2020
  • Details Image

নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। পাশাপাশি অনেকেই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাসায় চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদাও বেড়েছে। সামর্থ্যবানেরা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে ব্যবহার করতে পারলেও অনেকেরই সেই সামর্থ্য নেই। আর তাদের জন্য রাজধানীতে ভরসা হয়ে এলো জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সদ্য সাবেক স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীর উদ্যোগে ১২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এ সেবা শুরু হয়েছে রাজধানীতে।

২৫ জুন থেকে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাদ বিন কাদের চৌধুরী। এই কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে সংকটময় সময়ে অসহায় মানুষের পাশে থেকে সেবা নিশ্চিত করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।

সাদ বিন কাদের চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ছয়টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করেছেন জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা কার্যক্রমের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান জামাল। শুরু থেকে এই কার্যক্রমের সঙ্গে আছেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে আরও প্রদান করা হবে। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আরও ৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করেছি। মোট ১২টি দিয়ে প্রাথমিকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হলো।’

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরাই নয়, বর্তমান অবস্থায় অন্যান্য অনেক রোগীরই এখন বাসায় অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য বেশি হওয়ায় অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে অক্সিজেন সেবা গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারছে না। সেই সমস্যা সমাধানে আমরা জরুরি প্রয়োজনে মানুষকে সেবা দিতে চাই। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। তাই প্রাথমিক সাপোর্টের জন্য আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আপাতত এই সেবা কার্যক্রমের আওতায় আমরা ১২ ঘণ্টা সাপোর্ট দেব। এরপরে আমরা ধীরে ধীরে কার্যপরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করবো। অন্তত যাতে প্রাথমিকভাবে জরুরি প্রয়োজনে সেবা দেওয়া যায় সেইজন্যেই আমাদের এই উদ্যোগ।’

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের একটি চিকিৎসক দল আছে। একই সঙ্গে নার্সও থাকছে। কেউ যদি বাসায় আমাদের অক্সিজেন সাপোর্ট নেয় তবে সেখানে গিয়ে এই সেবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। এক্ষেত্রে সেবাপ্রত্যাশী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আমরা এই অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা ব্যবহার করার জন্য কিছু নীতিমালা নিয়ে এগুচ্ছি। নীতিমালাগুলো হলো–

১. আমাদের অক্সিজেন সেবা গ্রহণ করার একমাত্র শর্ত হলো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। চিকিৎসকের লিখিত পরামর্শ ব্যতীত আমরা অক্সিজেন সরবরাহ করবো না। আর অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়ার সময় বাহককে অবশ্যই তার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিয়ে আসতে হবে। অথবা পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখলেই হবে।

২. যেহেতু আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে ফলে কেবল জরুরি প্রয়োজনে সেবাটি দেয়া হবে। তাৎক্ষণিকভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না, তাই প্রাথমিক সাপোর্টের জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অক্সিজেন প্রদান করার পর সেবাগ্রহীতার কাছে ১২ ঘণ্টা থাকবে এবং এর মধ্যে নতুন কোথাও হতে সিলিন্ডার ব্যবস্থা করবার অনুরোধ থাকবে।

৩. অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না এবং কোনো জামানতও জমা দিতে হবে না।

৪. সিলিন্ডার এবং সম্পূর্ণ সেট বুঝিয়ে দেয়া হবে। আমাদের উদ্যোগে শামিল স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকরা প্রয়োজনে সঠিকভাবে অক্সিজেন দেয়া এবং ফ্লো-নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন কিন্তু ব্যবহারকারীদের ভুলের জন্য কোনো দুর্ঘটনা হলে সেজন্য আমাদের দায়ী করা যাবে না, এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর করতে হবে। অথবা সেবাগ্রহণকারী নিজস্ব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেটি লাগাতে পারেন।

৫. প্রাথমিকভাবে সেবাটি কেবলমাত্র ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

৬. সিলিন্ডার চালানোর জন্য একজন প্রশিক্ষিত অপারেটর আমাদের দলে থাকবেন। তবে যদি আমাদের অপারেটর ব্যস্ত থাকেন তাহলে আপনাদের অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও যথাযথ নিয়ম মেনে প্রশিক্ষিত অপারেটর বা স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা তা ব্যবহার করতে হবে।

সাদ বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে অক্সিজেন সিলিন্ডার খুব সাবধানে পরিচালনা করতে হয়। একটু অসাবধানতা রোগীর মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। আর তাই সবাইকে আমরা সুর্নিদিষ্ট নীতিমালা সেবা দিয়ে যেতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন সোনার বাংলা গড়তে। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আমাদের জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে। দেশের সকল নাগরিকের এগিয়ে আসতে হবে এই লক্ষ্য নিয়েই। একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর সেই লক্ষ্যে জাতির জনকের আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে আমরা চেষ্টা করছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আমরা সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। এই দুর্যোগে আমরা ভাই-বন্ধু হয়ে একে অপরের পাশে থাকবো। আমরা সবাই মিলে এই সংকট মোকাবেলা করবো ইনশাল্লাহ।’

ধীরে ধীরে এই সেবা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার কথা জানিয়েছেন সাদ বিন কাদের চৌধুরী। নির্দিষ্ট কিছু মোবাইল নম্বরে কল করলেই এই অক্সিজেন সেবা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। মোবাইল নম্বরগুলো হলো– সাদ বিন কাদের চৌধুরী (০১৬২৩০০০১০০), সবুর খান কলিন্স (০১৬৭৭১২৫৭৫৮), রফিকুল ইসলাম সবুজ (০১৭২৫৩৪৩০৩৮)। এছাড়াও ০১৭৭৬৯০৪৯৯৩ এই নাম্বারে হোয়াটস অ্যাপ বা কল করে সেবাটি নেয়া যাবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত