২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুমোদন পরবর্তী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি’র সংবাদ সম্মেলন

2638

Published on জুলাই 2, 2020
  • Details Image

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

আপনারা জানেন, গত ২৯ জুন মহান জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা গত ২৯ জুন মহান জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে এই বাজেটের প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ দেশীয় বাস্তবতা, করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এদেশের মানুষের জন্য তাঁর সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও সহায়তা এবং বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ তথা বিশ্ব মানবতার এই ক্রান্তিলগ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই ভাষণ বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পেনডেমিকের সময়ই আমাদের বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের আর্থিক বছরের গণনা আমাদের চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় (যেমন জানুয়ারি টু ডিসেম্বর, এপ্রিল টু মার্চ, অক্টোবর টু সেপ্টেম্বর) তাদের এই সময়ে বাজেট করতে হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ এবং দক্ষিণ গোলার্ধের কিছু দেশে আমাদের মতো জুলাই থেকে জুন আর্থিক বছর ধরা হয়। গত ১১ জুন ২০২০ মহান জাতীয় সংসদে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে তাঁর অর্থমন্ত্রী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এই সময়ে যে সকল দেশ বাজেট প্রণয়ন করেছে, তাঁদের অধিকাংশই করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁদের বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে সংকোচন করেছে। কোন কোন দেশ বাজেট দিতে ব্যর্থ হয়ে বিশেষ আইনের সহায়তায় বাজেট প্রণয়ন স্থগিত করেছে। এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুই একটি দেশসহ (যেমন পাকিস্তান) পৃথিবীর অনেক দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, ১৯৭২ সালে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে যখন কিছুই ছিল না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন সাহসী বাজেট দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির সুফল এই বাজেট। জাতির পিতার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের দেশ) ও রূপকল্প-২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকার গত ১১ বছরে দেশে ব্যাপক পরিসরে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সবক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন।

কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে সাময়িক প্রয়োজন উদ্ভুত হয়েছে তা মেটানো এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়-ক্ষতি সৃষ্টি হবে তা পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম এবং বর্তমান মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। এ বাজেটে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসৃজন ও সামাজিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের প্রয়াস আরো জোরদার করা হবে। আমাদের সরকার দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) অনুমোদন করেছে। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
মানুষে মানুষে বৈষম্য দূরীকরণ ও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বিধান করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছর হতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ৫ বছর মেয়াদি ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। যার মূল প্রতিপাদ্য হবে দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য কমিয়ে এনে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবেলা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্রণোদনা প্যাকেজ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ, যা জিডিপি’র ৩.৭ শতাংশ। বিগত ১২ বছরে ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের হার ছিল গড়ে ১.৪ শতাংশ। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সুবিশাল আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নের কারণে কোভিড ১৯ মহামারির ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ার প্রভাবে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সরকার তা অনেকটাই রোধ করতে পারবে বলে আশা করি।

দেশের অতি দরিদ্র পরিবারসমূহকে সরাসরি নগদ অনুদান, বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারিদের চাকুরি সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ইত্যাদি সময়োপযোগী পদক্ষেপের দ্বারা আমরা দারিদ্র্য হারের বৃদ্ধিকে রোধ করতে সক্ষম হবো। আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার মাধ্যমে আমরা দারিদ্র্য বিমোচনের হার পূর্বের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যখাতকে এবার সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জনজীবনকে সুরক্ষার লক্ষ্যে ন্যাশনাল প্রিপেয়ার্ডনেস এন্ড রেসপন্স প্ল্যান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বর্তমানে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দের দিক দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অবস্থান পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে যা গত অর্থবছরে ছিল অষ্টম স্থানে।

বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ৫.০১ শতাংশ। আক্রান্তের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ১.২৬ শতাংশ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ভারতে ৩.০৮, পাকিস্তানে ২.০৩, যুক্তরাজ্যে ১৪.০৩ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫.০ শতাংশ। এই তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যুহার নি¤œ পর্যায়ে রাখা গেছে, যদিও একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। তবে প্রকৃত মৃত্যুর হার এর চেয়ে আরও কম। বাংলাদেশে করোনা টেস্টের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সুস্থতার হার বেড়ে যাবে এবং মৃত্যুর হার কমতে থাকবে; কারণ করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কোন টেস্ট ও চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ্য হয়ে যাচ্ছেন, তাদের কোন তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
এটি আমাদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, গত এক দশকেরও অধিক সময় ধরে রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যদি দেশের এই অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন না করতেন, তাহলে এই পেনডেমিক পরিস্থিতিতে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হতো। অন্যদিকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যদি ২০০৯ এর পর দেশে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর উৎপাদন বৃদ্ধি না করতেন, তাহলে এই পেনডেমিকে এদেশের মানুষ বিদ্যুৎবিহীন দুঃসহ পরিস্থিতি কীভাবে সহ্য করতো আর হাসপাতালগুলো কীভাবে চলতো, সেটি আমরা চিন্তাও করতে পারছি না ।
এই বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হচ্ছে কৃষি। কৃষিতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে আমরা চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাত্তোর কৃষিখাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উৎপাদন, বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার মাধ্যমে খাদ্য সঙ্কট যাতে তৈরি না হয় সেদিকে নজর দেওয়াই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনভাবেই যাতে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি না হয় সে জন্য এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে না রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে আমি কৃষি মন্ত্রণালয় ও তার সকল সহযোগী সংস্থাগুলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন।

জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সামনে যে সংকটই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবেলা করবে এবং দেশের কোন মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেবে না’’।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করার লক্ষ্যে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিগত এপ্রিল ২০২০ হতে নতুন ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯% কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ঋণের ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবং মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাগণের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি এবং করহার কিছুটা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ২.৫ শতাংশ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য আসবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।

করোনা ভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক অভিঘাত হতে উত্তরণের লক্ষ্যে ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাজেট সহায়তায় এগিয়ে এসেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উন্নয়ন সহযোগী। তারা ইতোমধ্যে ৫.১৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ১.৭৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সরকারি খাতে জমা হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতে কখনও ব্যর্থ হইনি এবং ভবিষ্যতেও হবো না। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর তার মধ্যেই আমরা প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ এর মত বৈশ্বিক মহামারীর মোকাবেলা করছি। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, আমরা সফলভাবে এ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অভিযাত্রায় পুনরায় শামিল হবো। কারণ, বিশ্ব মানদণ্ডে আমাদের রয়েছে শক্তিশালী আর্থ-সামাজিক অবস্থান। চলতি জুন মাসেই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৩৫ বিলিয়ন এবং প্রবাস আয় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
এ বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে অধিকতর বহুমুখীকরণের সুযোগ সৃষ্টি ও নতুন সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে সংকটকালীন ও সংকট পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার গতিপথ নির্ণয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই গৃহীত হয়েছে এবারের বাজেট। এটি জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শীর্ষক যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী বাজেট অনুমোদনের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মানননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।

করোনা মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা ও কর্মোদ্যোগ বিশ^খ্যাত দ্যা ইকোনমিস্ট, ফোর্বস, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামসহ অন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। দ্যা ইকোনমিস্ট গত ২ মে গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে ৪টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ৬৬টি উদীয়মান সফল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে। এই বাজেট প্রণয়নে দুটি অনিশ্চয়তা ছিল, যা জয় করা ছিল দুরূহ। অনিশ্চয়তা দুটি হচ্ছে- বাংলাদেশে করোনা মহামারি চুড়ান্ত পর্যায়ে কী হবে, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো স্বচ্ছ ধারণা না থাকা এবং করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি কী হবে- তা সুনির্দিষ্ট করে এখনই বলতে না পারা। এই অনিশ্চয়তা জয় করে দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলার একমাত্র ত্রাণকর্তা সাহসী নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলভাবে বাজেট প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা দেখেছেন, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যগণ এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করার নামে সংসদ ভবনের সামনে মহান সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বাজেটের কপি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। এটি মহান সংসদের প্রতি চরম অবমাননা। এটি তাদের শপথ ভঙ্গেরও শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। জাতির এই ক্রান্তিকালে তারা দায়িত্বশীল আচরণ করে নি। তারা চেয়েছিল, সংসদ যাতে কোন বাজেট পাশ না করে। বাজেট ছাড়া একটি রাষ্ট্র তারা দেখতে চেয়েছিলেন। তারা দেশে একটি হতাশাজনক অবস্থা দেখতে চেয়েছিল। আমরা মানুষের মধ্যে আশার আলোর সঞ্চার করতে পেরেছি, যা এই পেনডেমিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রয়োজন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাঙালির সকল অর্জনের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতাই এনে দেয়নি, এই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা যা করা প্রয়োজন ছিল তার সবকিছুই করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়।

মোটা দাগে বলতে গেলে, বাঙালি জাতি হিসেবে এ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে, তার সবকিছুই দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ; দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের সব অর্জন জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই। এ দেশের সব মানুষের কল্যাণের কথা, বিশেষভাবে দরিদ্র-অসহায় মানুষদের কথা, প্রিয় নেত্রীর চিন্তা-চেতনায় সবসময় থাকে। পিতার মতো এ দেশের মানুষকে ভালোবেসে তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। সাম্প্রতিককালে সংসদে উচ্চারিত জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি উক্তি দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। তিনি বলেন, ‘আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি, এটাতে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিজের দর্শন-চিন্তা-কর্মপ্রচেষ্টা দিয়ে সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন বাঙালির হৃদয়ে।

আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

তারিখ : ২ জুলাই ২০২০
প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত