মুজিববর্ষে শেখ হাসিনার জন্মদিনে তাঁর প্রতি প্রাণঢালা শুভেচ্ছা

3423

Published on সেপ্টেম্বর 14, 2020
  • Details Image
কাজী খলীকুজ্জামান আহমদঃ
 
একজন রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, একজন প্রধানমন্ত্রী, একজন জনদরদী নেত্রী, একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে শ্রদ্ধায় অধিষ্ঠিত একজন বিশ্বনেতার কথা বলছি। শেখ হাসিনার কথা বলছি। এই লেখাটি তাঁর জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ উপলক্ষ্যে। তাঁর আরো একটি অতি গৌরবের পরিচয় তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা-পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-এর কন্যা। বাবার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হলো। কন্যার নেতৃত্বে দেশ গড়ার কাজ এগিয়ে চলেছে।
 
করোনা মহামারির পূর্বকালে বাংলাদেশ বিগত এক দশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করে। তাঁরই নেতৃত্বে এই বিশাল অর্জন। ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ লক্ষ্য নির্ধারণ করে, বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। কিন্তু নানা চ্যালেজ্ঞের মুখোমুখি একটি দারিদ্রপীড়িত স্বল্পোন্নত দেশকে ঐ লক্ষ্যে পৌঁছানো একটি কঠিন কাজ। এগোতে হবে ধাপে ধাপে। সেভাবেই বিগত এগারো বছরে দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারা নানা কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ত্বরান্তিত করা হয়। এগিয়ে যাওয়ার জন্য নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি উপযুক্ত আবহ ও পারিপার্শ্বিকতা তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তৈরী করা হয়। মানুষ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেই অনুকূল পরিবেশে শ্রম দেয়, উদ্যোগ গ্রহণ করে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতে ও স্তরে। কৃষক, কৃষিশ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোক্তাগণ ক্ষেত্রে কাজে ব্যাপৃত হোন। অন্যান্য পেশার লোকজনও।
 
অগ্রগতির মূল ভিত তৈরি হয় গ্রামীণ অর্থনীতিতে। কৃষির উন্নতি (ধান,সবজি, মাছ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল) ও নানাবিধ কৃষি বহির্ভূত শিল্প ও ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলাকে সুসংহত করে তরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়নের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে স্লোগান গ্রহণ করা হয় ‘‘আমার গ্রাম আমার শহর”। অর্থ্যাৎ গ্রামে শহরের সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ করে গ্রামে বসবাসকারীদের জীবনের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। অবশ্যই এর মধ্যে শহরে ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। ক্রমবর্দ্ধমান আর্থ-সামাজিক বৈষ্যমকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করে তা দ্রুত কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে এই ইশতেহারে।
 
পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশে দুর্নীতি ও ধান্দাবাজি একটি বড় সমস্যা। এর ফলে গৃহীত নীতি, কর্মসূচী ও প্রকল্পসমূহ থেকে যতটা সুফল পাওয়ার কথা ততটা পাওয়া যাচ্ছে না। এরা দুর্নীতির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ও সম্পদ অনেকাংশে বিদেশে পাচারওকরে দেয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূণ্য সহনশীলতা ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারী নীতিও তাই। দুর্নীতি-ধান্দাবাজি নিরসণের লক্ষ্যে, কোনো কোনো সামাজিক ক্যান্সারসম ক্ষেত্রে, যেমন ক্যাসিনো দুষ্টচক্র, কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করা হয়। তবে এক পর্যায়ে এসে, এই ক্যাসিনো উচ্ছেদ অভিযানে স্থবিরতা দেখা দেয়, হয়তোবা করোনা মহামারির কারণে জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবিকার দিকে অধিক নজর দেয়া অতি জরুরি হয়ে পড়ে বলে। সুফল পেতে হলে এবং আস্থার পরিবেশ তৈরী করার জন্য এই অভিযানের কার্যকর পরিসমাপ্তি জরুরি। নদী ও নদী তীর দখলদারিত্ব মুক্ত করার অভিযান প্রশংসনীয়ভাবে এগিয়েছে এ পর্যন্ত, তবে এক্ষেত্রে দখলদারিত্ব সারা দেশে এত ব্যাপক যে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযান আরো জোরদার করতে হবে এবং অবশ্যই সময় লাগবে। উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানি খাতে ক্রমবর্দ্ধমান বিরূপ অভিঘাতের মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে নদী ও নদীর তীর উদ্ধার আরো অধিক জরুরি।
 
করোনা মহামারি-কালে স্বাস্থ্যসেবা এবং সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে দূর্নীতির ছড়াছড়ি দুর্নীতিবাজদের অমানবিকতার, বলা যায় পাশবিকতার বহি:প্রকাশ। এ সকল দুর্নীতি-ধান্দাবাজি দমনে প্রসংশনীয় সরকারি উদ্যোগ লক্ষ্যণীয়। এই পদক্ষেপসমূহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন। কিন্তু সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তখন দেখা যায় অন্যান্য দুর্নীতিবাজ সক্রিয়। মনে হচ্ছে, সমাজে বিভিন্ন পেশার এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থানের অনেকে দুর্নীতি-ধান্দাবাজিতেনেশাগ্রস্থ বা আসক্ত হয়ে পড়েছে। নানা ক্ষেত্রে নানা ধরণের এবং নানা আকারের দুর্নীতি-ধান্দাবাজি দূর করেই সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করে দেশের টেকসই উন্নয়নে অগ্রগতি অর্জন সম্ভব। এ বিষয়েপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত শূণ্য সহনশীলতানীতি যাদের বাস্তবায়ন করার কথা তাদেরকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদের কারো কারো মধ্যে যদি দুর্নীতি শেকড় গেড়ে থাকে বা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
 
মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুর্নীতি-ধান্দাবাজি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতাগুলোর অন্যতম। এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে অত্যন্ত দূরদর্শী ও সাহসী নীতি গ্রহণ করেছেন বলে আমি বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বললাম, তাঁর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে।
 
করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকারাবদ্ধ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। এই বছরের মার্চের ৮ তারিখ প্রথম তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয় বাংলাদেশে। প্রথম একমাস সনাক্তকৃত আক্রান্তের সংখ্যা তেমননা বাড়লেও মার্চ মাসের শেষের দিকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে লকডাউন এবং জীবন-জীবিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করা হয়। এই করোনা মহামারির জন্য উন্নত বা উন্নয়নশীল কোনো দেশই প্রস্তুত ছিল না। হঠাৎ করে চীনে এর প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কি ইউরোপীয় দেশসমূহ, কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কি ভারত, কি বাংলাদেশ সব দেশই আক্রান্ত হওয়ার পর করোনা মহামারী মোকাবেলার সক্ষমতা গড়তে শুরু করে। একদিকে করোনার ছোবল থেকে জীবন রক্ষা আর অপর দিকে লকডাউন এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলার কারণে অর্থনীতিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও। এই পরিপ্রেক্ষিতে, জীবন রক্ষা, জীবিকা নিশ্চিতকরণ এবং আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার ও পূর্ণজাগরণে ভূমিকা রাখার জন্য ১৩ এপ্রিল ২০২০, অর্থাৎ দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার একমাস যেতেই, প্রায় এক লাখ কোটি টাকার একটি অত্যন্ত দূরদর্শী সহায়তা ও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে আরো কিছু পদক্ষেপ যুক্ত করা হয়। আমি পুরো প্যাকেজটি বিশ্লেষণ করে দেখেছি, প্রত্যেকটি খাত যেখানে কিছু করতে হবে তা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হওয়া সত্তে¡ও সুফল আসতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, রপ্তানিখাত ঘুরে দাড়াচ্ছে। যে অসংখ্য মানুষের জীবিকা বিধ্বস্ত হয় তাদের জীবিকা নিশ্চিতকরণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য বিত্তবান মানুষ এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে। দুর্নীতিবাজরা নানাভাবে সমস্যা সৃষ্টি করলেও তারা তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। দুর্নীতি না ঘটলে অবশ্য অনেক মানুষের দুর্দশা আরো দ্রুত লাঘব করা সম্ভব হতো। একদিকে দুর্নীতিবাজদের দমন এবং অপরদিকে দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌছাঁনো উভয় কাজই পাশাপাশি চালানো হয়। তবে এই সহায়তা ও প্রণোদনা প্যাকেজের কিছু কিছু বিষয়ে বাস্তবায়ন এখনও হয়নি, কিছু কিছু বিষয়ে অল্প হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালকে যুদ্ধাবস্থা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সহায়তা ও প্রণোদনাউদ্দীষ্ট মানুষের কােছে পৌঁছে দিতে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা ও সহমর্মিতার অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসার জন্য চলতি মূলধন হিসাবে সহজ শর্তে যে বিশ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার ঘোষণা করা হয় তা বাস্তবয়নে সংকট এখনও কাটেনি। যুদ্ধাবস্থায় এক মিনিট,এমনকি এক সেকেন্ড সময়ও নষ্ট করার সুযোগ নাই। তাই করোনাকালে দীর্ঘসূত্রিতা এবং গাফিলতী গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও যথাসময়ে গৃহীত পদক্ষেপ যতটা সুফল আনতে পারত ঘোষিত সব সহায়তা ও প্রণোদনাদ্রুত বাস্তবায়িত না হওয়ায় তাতে ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত অবশ্যই দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
 
আরো দু’টি বিষয়ে কিছু কথা বলব। একটি হচ্ছে, তরুণ প্রজন্মকে তাদের নিজেদের ও দেশের অগ্রগতি অর্জনে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে শুধু সরকারি নয়, দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও তিনি নিয়েছেন। পরিকল্পনা ও সরকারী নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিলে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভূক্ত করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিষয়টির উপর। জনমিতিক যে সুযোগ বাংলাদেশে বিদ্যমান এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্রমবর্দ্ধমান থাকবে তা যথাযতভাবে কাজে লাগানো টেকসই উন্নয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। চলমান জনমিতিক বিবর্তন এমনভাবে ঘটছে যে, ২০৩০ সালের পর এই সুযোগ আস্তে আস্তে কমতে থাকবে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ তরুণদের অনুপাত বয়স্ক (সিনিয়র)-দের তুলনায় কমে যাবে। তরুণদের নিজেদের উন্নতি ও দেশের অগ্রগতিতে তাদেরকে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গৃহীত নীতি অনুসারেতরুণদের মধ্যে দক্ষতা এবং মানবিক-সামাজিক গুণাবলি সৃষ্টির ক্ষেত্রে কার্যক্রম আরো জোরদার করা প্রয়োজন। মানবিক-সামাজিক গুণাবলির দিকে বিশেষ নজর দেয়া জরুরি যাতে তারা ‘প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে’ এই ধারণার বশবর্তী হয়ে কাজ করে। বর্তমানে দুর্নীতি-ধান্দাবাজির ব্যাপকতার একটি মূল কারণ মূল্যবোধের অবক্ষয়। তরুণ প্রজন্ম যাতে এই মূল্যবোধহীন পথ অনুসরণকরা থেকে বিরত থাকে এবং দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলের মানবাধিকার ও মানব-মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অনুকূলে কাজ করার চারিত্রিক ও দার্শনিক মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনায় এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে রয়েছে বলে তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়। উল্লেখ্য, ২০১৮ নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ এই স্লোগান গ্রহণ করেছেন।
 
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী-২০৩০ বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছে। ২০১৬ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর বাস্তবয়নে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দিকনির্দেশিনা তৈরি করার জন্য তাঁরই অফিসে আগেভাগেই একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি উল্লেখযোগ্য কাজ করছে। টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচীর ১৭টি লক্ষ্যের আওতায় ১৬৯ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৩৯টি বাংলাদেশের বাস্তবতায় অধিক প্রযোজ্য বিবেচনা করে এগুলো পরিমার্জন করে অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ করা হচ্ছে। আসলে বলা হয়েছে ৩৯+১। এই শেষোক্ত ‘যোগ এক’ হচ্ছে কাউকে বাদ না দেয়া, যা টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচীর একটি প্রধান মৌলনীতি। অর্থাৎ পিছিয়েপড়া ও পিছিয়েথাকা সকল মানুষকে ন্যায্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হবে। এবং প্রত্যেকটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কার্যক্রমে এই অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করা হবে। এখানে উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেনÑ তিনি প্রায়শ বলেন যার খাদ্য নাই তার খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, যার শিক্ষার সুযোগ নাই তার জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যার ঘর নাই তাকে ঘর দিতে হবে। এই সকলএবং আনুসঙ্গিক অন্যান্য ক্ষেত্রে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, হচ্ছে। একটি উদাহরণ,আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে২০০১ এবং ২০০৯ এ পর্যন্ত কয়েক লাখ ছিন্নমূল পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জীবিকা অর্জনের জন্য তাদেরকে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ারও পদক্ষেপ নেয়া হয়। মুজিববর্ষে এই কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এই খাতে দুই হাজার একশত ত্রিশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
 
টেকসই উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভ পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে। অভিযোজন অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশে^ নেতৃস্থানীয় পর্যায় অর্জন করেছে। তার স্বীকৃতিস্বরূপ Global Centre on Adaptation (GCA)-এর দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্র বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জিসিএ বোর্ডের সভাপতি এবং প্রাক্তন জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেল বানকি মুন ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে যৌথভাবে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ ও এর অভিঘাত মোকাবেলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একজন প্রথম সারির সোচ্চার নেতা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের দুরদর্শী পদক্ষেপসমূহ এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এ বিষয়ে তাঁর বলিষ্ঠ ভ‚মিকার জন্য তাঁকে জাতিসংঘ এতদসংক্রান্ত সর্বোচ্চ সম্মাননা নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে Champions of the Earth-এ ভূষিত করে ২০১৫ সালে।
 
টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন অবশ্যই ব্যয়সাপেক্ষ। হিসেব করা হয়েছে ২০১৭ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে ৯২৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাগবে। বছরে গড়ে লাগবে ৬৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও সক্ষমতায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা, অঙ্গীকার ও পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তবায়নের চ্যানেলসমূহ অতিক্রম করে এগিয়ে চলার অঙ্গীকারও তাঁর রয়েছে। যারা বাস্তবায়নে নিয়োজিত তাদের অনেকের মধ্যে দীর্ঘসূত্রিতা, আত্মতুষ্টি, গাফিলতি বা দুর্নীতি থাকায় কাক্সিখত সফলতা পাওয়া যায় না তা আমরা দেখে আসছি। এক্ষেত্রে অর্থাৎ সুশাসনে উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় আরো পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। অন্যথায় টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য সম্পদ যতটুকুই আহরণ করা সম্ভব হোক, তা থেকে সম্ভাব্য সফলতাপ্রাপ্তিতে ঘাটতি থাকবে, বিশেষ করে পিছিয়েপড়া ও পিছিয়েথাকাদের ভাগ্য উন্নয়নে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও স্তরে দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম আরো জোরদার করা জরুরি। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে মানবিক ও সামাজিক গুণাবলির বিকাশে এবং প্রয়োগেও জোর দিতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব কাক্সিখত সুফল বয়ে আনবে এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে আকাক্সখা বঙ্গবন্ধু বার বার উচ্চারণ করেছেন তা বাস্তবে রূপলাভ করবে। দেশে ন্যায্যভাবে অন্তর্ভূক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যমাত্রায় অগ্রগতি হবে।
 
সবশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ খুবই সৌভাগ্যবান যে শেখ হাসিনা একটানা দেশের কান্ডারি বিগত এগারো বছরের অধিক কাল ধরে। তাঁর প্রগতিশীল, মানবিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, বাস্তববাদী ও সুদক্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে অনেকদূর। তিনি সুস্থ্য দীর্ঘজীবন লাভ করুন এবং দেশকে আরো অনেক বছর ধরে নেতৃত্ব দিতে থাকুন, এই কামনা করি।
শুভ হোক তাঁর জন্মদিন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত