জনগণের নেত্রীর নন্দিত পথচলা

2936

Published on সেপ্টেম্বর 15, 2020
  • Details Image

ফকির আলমগীরঃ

রূপকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৪ তম জন্মদিনে আমার অতল শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা। নিবন্ধের শুরুতেই তার জন্মদিন উপলক্ষে শামস আরেফিনের কথায় হাবিব মোস্তফার সুরে যে গান গেয়েছি সেই গানের বাণীই এখানে তুলে ধরছি।

" জনগনের নেত্রী তুমি, নন্দিত পথচলা
মা মাটি আর জন্মভুমি, চেতনার কথা বলা
উন্নতশির বাংলাদেশ, একদিন হবে নিশচয়
সারা দুনিয়া অবাক হয়ে তোমাতে তাকিয়ে রয়
জয় জয় জয় শেখ হাসিনার জয়
জয় জয় জয় শেখ হাসিনার জয় ।।

প্রতিটি বাড়ী খামার হবে
সে ছবি তোমার আকা
উন্নয়নের মহাসড়কে
ঘুরছে দেশের চাকা ।

পদ্মাসেতু মেট্রোরেল
সোনালি দিনের সাথে
বিদ্যুৎ ভরা আলোকিত দেশ
গড়ছো আপোশ হাতে।

দুর্যোগ মহামারী শংকায়
আগলে রেখেছো তুমি
আঁধার কেটে আলোর জোয়ারে
ভাসবে স্বদেশ ভূমি ।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা
আজ আর নয় তো স্বপ্ন
দেশটাকে এগিয়ে নিতে
আছো সদা তুমি মগ্ন ।।

প্রাসঙ্গিকভাবেই আমি এখানে গানটি তুলে ধরলাম। কারন গণতন্ত্র, বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা একই সুত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় ও ক্ষমতার বাইরে থেকে দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ এমনই একটি সংগঠন যার রয়েছে চির অম্লান গৌরব।

সেই ভাষা আন্দোলন থেকে ৬০ দশকের আন্দোলন সংগ্রামের সিড়ি বেয়ে বাঙালীর চির কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনের সংগ্রামকে সংগঠগিত করা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অস্তিত্ব বিপন্নতার মুখ থেকে উদ্ধার করেছেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠা করেছেন গনমানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার। পিছিয়ে পড়া দলকে নিয়ে গেছেন রাষ্ট্রক্ষমতায়, ভিন্ন এক উচ্চতায়। একাধিকবার তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন আসন আলংকৃত করেছেন কেবল নয়, তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র অশিক্ষা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন বিপুল কার্যকর গণআন্দোলন। দেশ আজ খাদ্যে অর্জন করেছে স্বয়ংসম্পূর্নতা। বিস্তারিতভাবে বলা যায় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের ক্ষমতায়নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে ক্ষুদা ও দারিদ্রমুক্তির দিকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, নারীর ক্ষমতায়ন জননিরাপত্তা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিন এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে এগিয়ে গেছে। জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনশক্তি রপ্তানী, শিল্পায়ন, প্রবাসীদের আয় মিলিয়ে দেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে।

এ প্রসঙ্গে আমার এক স্বপ্নদ্রষ্টার কথা বিশেষভাবে মনে পরে গেল আজ থেকে ৫৫ বছরের ও আগে আমেরিকার ওয়াশিংটন শহরে মার্কিন মানবতা কর্মী মার্টিন লুথার কিং অবহেলিত মার্কিন জনগোষ্ঠীকে আলোর ইশারা দেখিয়েছিলো এবং বলেছিলো- আই হ্যাভ এ ড্রিম। ঠিক তেমনি আমাদের দেশেও যখন চারপাশে হতাশা, নৈরাজ্য, অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের জনগনকে অন্ধকারের ঠেলে দিছিল, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিয়ে এলো রূপকল্প ২০২১। যার একটি স্বপ্ন হলো দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ তম বছরে বাংলাদেশের একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হওয়া। ২০২১ সালে দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করবে এবং ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে। মুজিববর্ষে করোনা ক্রান্তি কালের মধ্যেও সীমিত পরিসরে সেই শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানসূচী অব্যাহত রয়েছে। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে বঙ্গবন্ধুর দুরদর্শিতার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠিত করেন। যা বিশ্বে নজিরবিহীন। বিশ্ব দরবারে আজ একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশের মডেল হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয় মডেল। এবং এসব সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পর পশ্চিমা বিশ্বের অনেকের মধ্যেই বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারনা ছিল। কেউ কেউ এমনও মনে করতেন, বাংলাদেশ বেশি দিন টিকবে না। তারাই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে "তলাবিহীন ঝুড়ি" বলতেও দ্বিধা করেননি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার।

তবে বিদেশীদের সেই ধারনা সেই মানসিকতা পাল্টাতে বেশি সময় লাগেনি। আর এই পাল্টে যাওয়া বদলে যাওয়ার বিষয়টি বিদেশীদের চোখেও এখন ধরা পড়েছে। মাঝে মধ্যেই আসছে বিদেশী সরকারের তরফ থেকে এই বদলে যাওয়ার স্বীকৃতি। আর এসব সম্ভব হয়েছে মাদার অফ হিউম্যানিটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবিরাম প্রচেষ্টা আর সার্বিক নেতৃত্বে। আর তার এই সাফল্যে একটি মহলের গাত্রদাহের কারন হয়েছেন তিনি।

তার অনেক স্বপ্নের বাস্তবায়ন বানচাল করার জন্য এখনও বাংলার বুকে অনেক ঘৃণ্য দালাল রয়েছে। যদিও আমরা জানি খ্যাতিমান ব্যক্তি কিংবা রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাবশালীদের হত্যাচেষ্টা পৃথিবীতে কোনো ঘটনা নয়। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় গণতন্ত্রের প্রবক্তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন আব্রাহাম লিংকন, কিংবদন্তী নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, ভারতের জাতির পিতা মোহনদাশ করমচাঁদ গান্ধী হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত ইতিহাস আলোচিতকর মানুষ নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন।

আর উন্নয়ন অগ্রগতির মহান কারিগর দেশরত্ন দেশরত্ন শেখ হাসিনার ওপর হামলা ও প্রাণনাশের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকে অসংখ্য বার তার ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় তিনি তার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানী থাকায় বেঁচে যান। তারপর রক্তাক্ত ২১ শে আগস্ট এর কথা আমাদের সবার জানা। সে হত্যা প্রচেষ্টা একই সূত্রে গাঁথা। কিন্তু বার বার হত্যা চেষ্টায় ষড়যন্ত্র হলেও ঘাতকের বুলেট কিংবা ঘাতক গ্রেনেড তাঁর কিছু করতে পারেনি।

কথায় আছে " রাখে আল্লাহ্ মারে কে?" তাই তিনি নব জীবনে আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।

বিশ্ব নেতৃত্বে শেখ হাসিনা এখন একটি অনুকরণীয় নাম। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে দুর্যোগ দুর্বিপাক যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের গভীর আঁধার থেকে দেশের মানুষকে নতুন দিনের সূর্যালোকে নিয়ে আসতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বৈশ্বিক এই দূর্যোগ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পরার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যার সাহস ও বাস্তবমুখি পদক্ষেপ এবং দ্রুত সিদ্ধান্তের কারনে উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অনেক কম। অন্যদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ছোবল থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষায় সুদূর ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। একাধিক ভিডিও কনফারেন্স করেছেন বিশ্বনেতাসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের সাথে। আহ্বান জানিয়েছেন বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবেলায় একসাথে কাজ করার। সার্ক দেশগুলোর জন্য ১৫ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান ঘোষণা করেছেন তিনি। যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারের উপর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নির্ভরশীল, সেই ইইউর একটি উদ্যোগে জুনের শেষ সপ্তাহে ৫০ হাজার ডলার দেওয়ার ঘোষণা দেন।

করোনার কারনে সে মুহুর্তে অনেক দেশ বিশ্ব থেকে আইসোলেশনে চলে আসছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে করোনাকালীন বাংলাদেশ এবং বিশ্বের মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে চলছে মুজিববর্ষ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল অনেক বনার্ঢ্য কর্মসূচী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা সে সব অনুষ্ঠান স্থগিত করে নয়, তাঁর ৭৪ তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানও বাতিল করেছেন বন্যা আর করোনা মহামারীর কারনে।

তাই পরিশেষে বলা যায় বাংলাদেশ আর জননেত্রী শেখ হাসিনা যোগ অভিন্ন অবয়ব। জলপাই রঙ এর এই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে বাঙালী জাতি যতদিন থাকবে বাংলা ভাষা ততদিন থাকবে। ততদিন এই জাতি আপনাকে স্মরন করবে অশেষ কৃতজ্ঞতায়, কালের প্রবাহ পজন্ম থেকে প্রজন্মে দৃপ্ত ভাবেই উচ্চারিত হবে" জয় শেখ হাসিনা"

সব শেষে আমার নিবন্ধে তুলে ধরলাম জন্মনেত্রী শেখ হাসিনার উপর লেখা ডঃ কবি মুহঃ সামাদের লেখা আমার সুরারোপিত একটি গানের চরণ।

প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা-জননেত্রী শেখ হাসিনা
তুমি নন্দিত নেত্রী এই সোনার বাংলার
ভয় নেই বোন, ভয় নেই মা, তোমার ভয় নেই
তোমার জীবন বাঁচাতে আমরা তৈরি রেখেছি প্রাণ
আমরা আছি লক্ষ কোটি মুজিবের সন্তান।
জেগেছে ছাত্র জেগেছে জনতা
জেগেছে কৃষক শ্রমিক
বিক্ষোভে আর বিদ্রোহে আজ উত্তাল চারদিক
তোমার নামেই গর্জে ওঠে, ভায়ের খুনে
বোনের সম্ভ্রমে, মায়ের কান্নায়
পিতার রক্তে

রাঙানো লাল বাংলাদেশ- বাংলাদেশ
তুমি আজ তাই আলো হাতে
আঁধারের যাত্রী।।

লেখকঃ গণসংগীত শিল্পী

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত