বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চ ও রেসকোর্সের মহাকাব্য

জিয়া আহমেদঃ বঙ্গবন্ধু, ৭ই মার্চ ও স্বাধীনতা এই তিনটি শব্দের সমার্থক রূপ হচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ এই ৭ই মার্চের ভাষণ একটা সময়ে এই স্বাধীন দেশে প্রচার ও বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। একটা ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী ভয় পেত পূর্ব পাকিস্তানের সাময়িক জান্তাদের মতো, যেমন ভয় পেয়ে ১৯৪৭ এর পর থেকে বঙ্গবন্ধুকে ১২ বার জেলে আটকে রেখেছিল জিন্নাহ, আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার মতো শাসকরা, যার উপর নজরবন্দী রেখেছিল ১...

উত্তাল মার্চ, ১৯৭১- মিছিলকারীদের উদ্দেশে সারাদিন প্রায় বিরামহীন ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু

২৪ মার্চ, ১৯৭১। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সমাগত বিভিন্ন মিছিলকারীর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় বিরামহীনভাবে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। তিনি বলেন, আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোনো সমাধান না হলে বাঙালিরা নিজেদের পথ বেছে নেবে। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সরকা...

পহেলা মার্চ থেকেই বঙ্গবন্ধুর শাসন শুরু

একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের ১ তারিখ থেকেই বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির নিয়ন্তা। কারণ মার্চের প্রথম দিন থেকেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো দেশ চলতে শুরু করেছিল। সেদিনের রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৭ মার্চের ভাষণটিকে কেন্দ্র করে দশ লাখেরও বেশি মানুষের সমাবেশ মানব ইতিহাসের বিরল ঘটনা। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭...

পহেলা মার্চ দুপুর থেকেই শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘যদি আমরা নিজেদের প্রথমত বাঙালি, পাঞ্জাবি ও সিন্ধি ভাবতে শুরু করি এবং শুধুই ঘটনাচক্রে নিজেদের মুসলমান ও পাকিস্তানি ভাবি, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়া অনিবার্য।’ ২৩ বছর পর জিন্নাহর সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়; পাকিস্তান ভেঙে ১৯৭১ সালে ...

অসহযোগ আন্দোলন- ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ এর ঘটনাবলি

ভাষণ শেষে আড়াইটা বাজে বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও বঙ্গবন্ধু কিছুটা দেরিতে মঞ্চে ওঠেন। স্বাধীনতার ডাকসহ ঐতিহাসিক ভাষণটি দেন ঠিকই, কিন্তু সেটি সর্বস্তরে তখনো পৌঁছায়নি। কারণ পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের হস্তক্ষেপে বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের লাইভ সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন বেতারের কর্মকর্তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। পরদিন (৮ মার্চ) পাকিস্তান বেতারে...

মার্চে বাঙালি জাতির হৃদয়ে জমাট বেঁধেছে স্বাধীনতার চেতনা

অগ্নিঝরা মার্চ ছিল একটি জাতির অধিকার আদায়ের জন্মসূত্র। ১৯৭১ সালের পর প্রতিটি মার্চ মাস আমাদের কাছে একটি বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হয়। বিশেষ করে ভাষা আন্দোলনের মাসের পর এ মার্চের আন্দোলন আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। এ গুরুত্ব আজও সমানভাবে আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতি হিসেবে যে আকাঙ্ক্ষা ছিল সেটা এ মার্চ আমাদের দিয়েছে। মার্চ হচ্ছে বাঙ...

সবকিছু চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে

অগ্নিঝরা মার্চের নবম দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকা শহর যেন মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। যেখানে-সেখানে জটলা, মিছিল, মিটিং চলতেই থাকে। লাগাতার আন্দোলনে দেশ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা...

পহেলা মার্চ দুপুর থেকেই শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘যদি আমরা নিজেদের প্রথমত বাঙালি, পাঞ্জাবি ও সিন্ধি ভাবতে শুরু করি এবং শুধুই ঘটনাচক্রে নিজেদের মুসলমান ও পাকিস্তানি ভাবি, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়া অনিবার্য।’ ২৩ বছর পর জিন্নাহ্র সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়; পাকিস্তান ভেঙে ১৯৭১ সালে ...

যাঁর নেতৃত্বে নিপীড়িত মানুষের মুক্তি

মোঃ রুহুল আমীনঃ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব আজ বিশ্ব স্বীকৃত। তাঁরই নেতৃত্বে বাঙালী জাতি অর্জন করেছিল বহুল কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। এ মহান নেতার চিন্তা-চেতনায় সবসময় কাজ করত বাঙালীর মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিনি ছিলেন বাঙালী জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাঙালী জাতীয়তা বাদের প্রবক্তা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬-দফা, &rsqu...

শরণার্থী ১৯৭১ঃ সীমান্তজুড়ে একেকটি বাংলাদেশ

'ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের একটি কর্দমাক্ত শহর বারাসাত। এর স্বাভাবিক জনসংখ্যা ২১ হাজার। এশীয় মানদণ্ডে বিচার করলে এখানকার হাসপাতালটি কোনোরকমে এই অধিবাসীদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করতে পারে। গত সপ্তাহে দেড়-দুই লাখ লোক বানের জলের মতো বারাসাত শহরে ঢুকে পড়েছে। তারা শহরের চারদিকে ধানি জমিতে গিজগিজ করছে। স্কুল, কলেজ, সিনেমা হল এবং পতিত জমিতে তাদের আশ্রয়ের ব্যব...

জয় বাংলা স্লোগানে প্রকম্পিত বাংলাদেশ

তোফায়েল আহমেদঃ ১৯৭১-এর ২০ মার্চ দিনটি ছিল শনিবার। আজ লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের ১৯তম দিবস অতিবাহিত হয়। আজও রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি সব বাসভবন এবং যানবাহনে কালো পতাকা উত্তোলিত ছিল। যেসব অফিস খোলা রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেগুলো ছাড়া আর সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বর্জন কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাব...

কি দিয়ে আমরা তাঁর ঋণ শোধ করব?

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীঃ মার্চ মাস এলেই আনন্দের পাশাপাশি বেদনা উঁকিঝুঁকি মারে; আবার এক ধরনের আতঙ্ক অনেককে পেয়ে বসে। এই আতঙ্কের কোনো নির্দিষ্ট নাম দেয়া না গেলেও তাকে মার্চ আতঙ্ক নামে অভিহিত করছি। যারা এই আতঙ্কে ভোগেন ও কাবু হন তাদের চেনা কঠিন। তাদের মধ্যে যেমন আছে রাজাকার, আলবদর, আল শামস, পাকিস্তানি এজেন্ট, তেমনি আছেন এমন কিছু ব্যক্তি যারা ১৯৭১ সালে মুক্...

বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার অদম্য যাত্রাপথ

নাজনীন বেগমঃ বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শৈশব-কৈশোর অতিক্রান্ত করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিভাবে বাঙালীর ঐতিহ্যিক সত্তায় চিরস্থায়ী ব্যক্তিত্বের শীর্ষস্থানে চলে আসলেন সেও যেন এক ঐতিহাসিক পথপরিক্রমা। প্রভাতের সূর্যোদয় সারাদিনের যে বার্তা দেয়, সেটা যেন জাতির জনকের জীবনযাত্রায় উজ্জ্বলভাবে প্রতিভাত হয়ে আছে। তাই বাল্যকাল থেকেই দেশ, মাটি আর মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ...

জয়দেবপুরে সশস্ত্র বিদ্রোহ

তোফায়েল আহমেদঃ ১৯৭১-এর ১৯ মার্চ দিনটি ছিল শুক্রবার। আজ লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টাদশ দিবস অতিবাহিত হয়। আজও রাজধানীর সব সরকারি-বেসরকারি বাসভবন এবং যানবাহনগুলোয় কালো পতাকা উড্ডীন থাকে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনানুযায়ী বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা অব্যাহত থাকে। স্বাধিকার আদায়ের দাবি এবং বঙ্...

এক অসাধারণ মানুষের সাধারণ কয়েকটি গল্প

নিশম সরকারঃ  ১.১৯৭৫ সালের সাতৈ মে। ৮ দিন আগে পিতা শেখ লুতফর রহমানকে হারিয়েছেন। শোকে মুহ্যমান সে সময়, তবুও নেতা কর্মীদের সকলকে নিয়ে জাহাজে করে রওনা দিলেন টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে, পিতার চেহলাম এর জন্য। রাতের খাবার সেরে সিনিয়র নেতারা যে যে যার কেবিনে চলে গেলেন। কেউ কেউ ডেক এই বিছানা পেতে শুয়ে পড়লেন। জাহাজের ঢুলুনিতে মধ্যরাতে মাহবুব তালুকদার এর ঘুম ভেঙ্...

বঙ্গবন্ধুর বাসভবন হয়ে ওঠে বাঙালির তীর্থকেন্দ্র

তোফায়েল আহমেদঃ ১৯৭১-এর ১৮ মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবস। স্বাধিকারকামী অসহযোগ আন্দোলনের ধারাক্রমে প্রবীণ-নবীন নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ৩২নং বাসভবনে। বাসভবনটি যেন বাংলার মুক্তিকামী মানুষের তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত অবধি শত শত মিছিলের লাখ লাখ লোকের উপস্...

মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ড. মোহাম্মদ হাসান খানঃ বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে ছোট্ট একটি গ্রাম, টুঙ্গিপাড়া। এই গ্রামে জন্ম নেন এক মহানায়ক। শুধু তা-ই নয়, জন্ম নেন একটি কিংবদন্তি, যার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বাঙালির জন্য কাঁদতেন, ভালোবাসতেন। বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দিতেন তার জনগণ ও নেতাকর্মীদের। ছিলেন ’৭১-এর অনেক পিতৃহীন পরিবারের আশ্রয়। বীরাঙ্গনাদের তিনি দিয়েছিলেন মায়ের মর্যাদা, দিয়েছিলেন ...

মার্চ মাস, বঙ্গবন্ধু ও আজকের বাংলাদেশ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.) -  ১৯৭১ সাল থেকে মার্চ মাস হয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতার মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের মার্চ মাসে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতা অর্জনের পথ বাতলিয়ে দিয়েছিলেন। তার নির্দেশগত পথ ধরে মাত্র ৯ মাসের মাথায় আমরা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সশস্ত্র যুদ্ধে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম।...

মহিমান্বিত মার্চ- ইতিহাসের মাইলফলক

নাজনীন বেগমঃ ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় কালপর্ব অতিক্রম করে আবারও নতুন এক পথপরিক্রমা বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে বিরাজ করছে। বসন্তের মিষ্টি হাওয়া প্রকৃতির মাঝে তার স্নিগ্ধ আমেজ নিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে। নব বসন্তের পাতায় পাতায় সবুজের সমারোহ, দক্ষিণা বাতাসের সুবাসিত শিহরণ- সব মিলিয়ে নিসর্গের বাতাবরণ এক অনন্য রূপে সজ্জিত। এমন সুশোভিত, মনোমুগ্ধকর পরিবে...

১৯৭১, ছুটি খাঁ দীঘি গণহত্যা

মাসুদ রানাঃ ২৬ ও ২৭ মার্চ বিকেলে পাকিস্তানী বাহিনী চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলাধীন জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে প্রবেশ করে ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৭-২৮ মার্চ থেকে পাকিস্তানী বাহিনী এলাকার অসহায় বাঙালী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াতরত মানুষকে এখানে ধরে এনে অত্যাচার-নিপীড়ন করে হত্যা করতে থাকে। অসহায় বাঙালীদের হত্যার পরে তাদের মৃতদেহ ফেলার জন্য জোরারগঞ্জ বাজারের আধা কিলোমিটা...