বাঙালি জাতির গৌরবের কাল

6000

Published on মার্চ 1, 2018
  • Details Image

‘তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো, সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর’। মার্চ মাস বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক পরম গৌরবের কাল। এই মার্চ মাসেই ঘোষিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এই মার্চেই মুক্তিকামী বাঙালিকে স্বাধীনতার পথ নির্দেশ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে। স্বাধীনতার জন্য মূল্য দিতে হয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণ। বাংলাদেশের এ স্বাধীনতা একদিনের অর্জন নয়। বাঙালি জাতির ইতিহাস প্রায় তিন হাজার বছরের। খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগেই এই ভূখণ্ড জনবসতি গড়ে ওঠে। গ্রিক ইতিহাসবিদদের লেখায় গঙ্গারাইডিস নামে যে শক্তিশালী জাতি এবং গঙ্গাহৃদয় নামে যে রাষ্ট্রের কথা পাওয়া যায় তা এই বঙ্গদেশেই গঙ্গানদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান। পরবর্তীকালে এই ভূখণ্ড পূর্বনগর বা পূর্ববর্ধনে এক সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে ওঠে। খ্রিস্টপরবর্তী যুগে বঙ্গের স্বাধীন নৃপতি ছিলেন শশাঙ্ক। গোপাল এবং পাল বংশের বিভিন্ন রাজার শাসনামলেও বঙ্গদেশ ছিল স্বাধীন। বাংলার স্বাধীন পাঠান সুলতানরা এক সময় রাজত্ব করেছেন। বাংলার বারো ভুঁইয়ারা এক সময় মোগল শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাহকে পরাজিত করে বাংলায় কায়েম হয় ইংরেজ রাজত্ব। পলাশীর প্রান্তরে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয় তার পুনরুদয় ঘটে ১৯৭১ সালে।

 

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু বাংলার মানুষের স্বাধীনতা তখন অর্জিত হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানিরা নিজেদের বাংলার নতুন প্রভু মনে করে এখানে অর্থনৈতিক শোষণ চালাতে থাকে। সেই সঙ্গে বাঙালিকে অবদমিত করে রাখার জন্য শুরু হয় তার ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আঘাত। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন যা চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৫২ সালে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ দেন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালির স্বাধিকার চেতনার উন্মেষ ঘটে। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয় দফা আন্দোলন এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে বাঙালি। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির চেতনার প্রতীক আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করে। নিয়মানুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রধান এবং বাঙালির প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠন করতে না দিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্র তৈরি করতে থাকে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ প্রদান করেন, যা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ইতিহাসে নিজ মহিমায় স্থান করে নিয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

বাঙালিকে বিশ্বের বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তা মেতে ওঠে চক্রান্তে। ২৫ মার্চের কালরাতে পূর্ববাংলার নিরস্ত্র বেসামরিক জনগণের ওপর ইতিহাসের ভয়ালতম গণহত্যায় মেতে ওঠে পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী। ২৬ মার্চ ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার মাস শুরু হলো। এই মাসে জাতি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে স্বাধীনতার বীর শহীদদের।
 
লেখকঃ শান্তা মারিয়া

সৌজন্যেঃ আমাদের সময়  

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত