দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতেই হবেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

5389

Published on মার্চ 3, 2018
  • Details Image
    খুলনায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল)

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের রায় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করলে শাস্তি ‘পেতেই হবে’।

 

খুলনায় এক দিনের সফরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়ে তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোটও চেয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া করাপশন করেছে। কোর্ট রায় দিয়েছে। সেই রায়ে সে কারাগারে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। করাপশন করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।”

শনিবার সকালে খুলনায় পৌঁছে প্রথমে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৫৮তম কনভেনশন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

দুপুরের পর সার্কিট হাউজে বসে ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৫১টির ভিত্তি স্থাপন করে সার্কিট হাউজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন তিনি।

বক্তৃতার শুরুতেই তিনি বলেন, মার্চ আমাদের জন্য ঐতিহাসিক মাস। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিন। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। আমরা বিজয়ী হই।

 ‘বিজয়ী জাতি হিসেবে আজ বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আপনারা জানেন, পদ্মাসেতু থেকে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট হয়ে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলসেবা চালুর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি আমরা।’

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সরকারের হত্যা-লুটপাট কার্যক্রমের চিত্র বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ভোলা থেকে পাইপ লাইনে বরিশাল এবং খুলনায় গ্যাসের ব্যবস্থা করা হবে। অচিরেই এর প্রক্রিয়া শুরু হবে। ভোলায় গ্যাসের সন্ধান পুরো জাতির জন্য সুখবর।

তিনি বলেন, ১৬শ’ মেগাওয়াট থেকে এখন ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে।

প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, বন্ধ কলকারখানা চালু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ নির্মাণ, মংলা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬৮ লাখ মা-বোন ভাতা পাচ্ছে। স্কুল শিক্ষার্থীদের বই কিনতে হয় না, বই কেনার দায়িত্ব আমি নিয়েছি। বিনা পয়সায় জানুয়ারির ১ তারিখে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়।

বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা ক্ষমতায় এসে মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল, মিল কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এগুলো চালু করেছি। 

খুলনাঞ্চলে বিএনপির আমলে নিহত মঞ্জুরুল ইমামসহ বিভিন্ন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ কঠোর হাতে দমন করেছি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপির জ্বালা-পোড়াওয়ের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছিল। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া অফিসে বসে মানুষ হত্যার হুকুম দিয়েছিল। বাস-ট্রেন-লঞ্চ পুড়িয়েছে। মা দেখেছে তার সন্তানকে পুড়ে যেতে।’

‘খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছে, আদালতের রায়ে সে কারাগারে, আমাদের কিছুই করার নেই। দুর্নীতি করেছে, তাই খালেদা জিয়া কারাগারে।’

বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বক্তৃতার শেষ দিকে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দুই হাত তুলে সাড়া দিতে বলেন। জবাবে তারাও শেখ হাসিনাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার দেন।

জনসভায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ সভাপতিত্ব করেন।

বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান এমপি, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম মিলন, পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম কাওছার, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান এমপি, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, অ্যাডভোকেট শেখ মো. নূরুল হক, সাবেক ফুটবলার ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হোসনে আরা রুনু, পারভীন জামান কল্পনা, মাহমুদা বেগম, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদিকা নাজমা আক্তার, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ অধিকারী, সদর থানা সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি বুলু বিশ্বাস, শেখ হেলালের ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আনিছুর রহমান পপলু, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আশরাফুজ্জামান বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বিএম জাফর, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক  লুৎফুন্নেছা লুৎফা, হোসনে আরা চম্পা, মালিক সরোয়ার উদ্দিন, রণজিৎ কুমার ঘোষ, অ্যাডভোকেট রাবেয়া অলি করবী, সেলিমা আক্তার প্রিয়া, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন, সাধারণ সম্পাদক এসএম আসাদুজ্জামান রাসেল, জেলা সভাপতি পারভেজ হাওলাদার।

এর আগে, ২ হাজার ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ের ১০০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভা মঞ্চের পাশে তৈরি করা একটি বোর্ডে সুইচ টিপে তিনি এর উদ্বোধন করেন। 

প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৬৭৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ৪৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১ হাজার ৩৩৬ কোটি ৪ লাখ টাকার ৫৩টি নতুন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। উদ্বোধন হওয়া ৪৮টি প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

সকালে মহানগরীর খালিশপুরে আইইবি কেন্দ্রে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৮তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আইইবির সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত