২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম লালদিঘী গণহত্যা দিবসঃ নিজেদের বুক ঝাঝরা করে সেইদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা

1262

Published on জানুয়ারি 24, 2022
  • Details Image

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল সময়কার কথা। ১৯৮৮ সালের এই দিনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা নগরীর লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দিতে গেলে সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশবাহিনী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়।

এতে ঘটনাস্থলেই শহিদ হন ২৪ জন নেতা-কর্মী। পরে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৮ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আহত হন প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ।

সেদিন শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেও নিতান্তই ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। শেখ হাসিনার ওপর গুলি করার সময় অসাবধানতাবশতঃ এক পুলিশ সদস্যের রাইফেলের কানেকশন বেল্ট খুলে পড়ায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানেই গুলিবর্ষণ শুরু হয়।

ততক্ষণে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী ও নেতা-কর্মীরা মানবঢাল তৈরী করে শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে আইনজীবী সমিতি অফিসে নিয়ে রক্ষা করেন। যদিও এর মধ্যে অকাতরে ঢলে পড়েন অনেক নেতা-কর্মী।

শহিদ নেতা-কর্মীরা হলেন- মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথেলবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।

ইতিহাসে এই দিনটিকে চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

জানা যায়, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারির ওইদিন বৃষ্টির মতো এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর। কেন্দ্রীয় নেতারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান মোট ৩২ জন ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী জনতা। আহত হন আরও প্রায় ৩ শতাধিক।

নৃশংসতার এক পর্যায়ে পুলিশের কড়া পাহারায় নিহত অধিকাংশের লাশ রাতের অন্ধকারে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নগরীর অভয়মিত্র মহাশ্মশানে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে চলে লাশ গুম করার চেষ্টা।

এই ঘটনার ৪ বছর পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মোট ৪৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের আদেশে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম এবং অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে তৎকালীন সিএমপি কমিশনারসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন- তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালী জোনের পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল, কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন।

২০০০ সালের ৯ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরা হলেন- কোতোয়ালী জোনের পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল, কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন।

মৃত্যুজনিত কারণে তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা, কনস্টেবল বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

শহিদ স্বপন চৌধুরীর নিকটাত্মীয় আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিবুচন্দ্র মজুমদার বলেন, কেবল ২৪ জানুয়ারি এলে সবাই গণহত্যার শহিদ পরিবারের খোঁজ করেন। তাছাড়া সারা বছর কেউ একটি খবরও নেয় না। কতটা নিগৃহীত জীবনযাপন করছেন তারা, তা বলাবাহুল্য। আমরা চাই সরকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসুক।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত