আমার নেতা বঙ্গবন্ধু

1178

Published on সেপ্টেম্বর 10, 2022
  • Details Image

আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক:

মাত্র ৫৫ বছরের জীবন ছিল তাঁর। নিষ্ঠাবান কর্মী থেকে তিনি হয়েছিলেন রাজনীতির মহাকবি। রচনা করেছিলেন স্বাধীনতার মহাকাব্য। যাঁর জন্মের সাথে জড়িয়ে আছে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। তিনি মহান নেতা, মহান শিক্ষক, মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি পাকিস্তান সৃষ্টিলগ্ন থেকেই চিন্তা করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের কথা। যে পাকিস্তানের সৃষ্টির জন্য তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিলর হিসেবে এই পূর্ববঙ্গে চারণের বেশে তাঁর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সফরসঙ্গী হিসেবে ঘুরে বেরিয়েছেন; সেই পাকিস্তান জন্মের পরপরই রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে অস্বীকার করায় পাকিস্তানের প্রতি মোহভঙ্গ হয় এই তরুণ শেখ মুজিবের।   

দূরদর্শী নেতা শেখ মুজিব বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা নিয়েই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। আপোষহীন মুজিব ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিলরত অবস্থায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হন।   

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন কারাবন্দী অবস্থায় আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ আড়াই বছর জেল খাটার পর মুক্ত মুজিব ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করার দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৫৪ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী ও তরুণ নেতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভা বাতিল করা হয়। শেখ মুজিবকে মন্ত্রীর  বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করে বাঙালির কন্ঠস্বর শেখ মুজিবকে দীর্ঘদিন কারাবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৬২ সালে কারামুক্তির পর দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন শুরু করেন । ১৯৬৬ সালে বাঙালির বাঁচার দাবী ৬ দফা দিয়ে বাঙালিকে প্রকারান্তরে স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। 

১৯৬৬ সালে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের কিছু নেতৃবৃন্দকে রাতে বিচারপতি ইব্রাহিম সাহেবের আম বাগানে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ দেন। তিনি বলেন, “আমি বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে ৬ দফা দিয়েছি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কোন অবস্থায় ৬ দফা মেনে নেবে না। আইয়ুব খানের কাছে ২টি পথ খোলা আছে, হয় ৬ দফা মেনে নেওয়া; না হয় আমাকে ফাঁসিকাষ্টে ঝুলানো। ফাঁসি কাষ্টে ঝুলার জন্য আমি প্রস্তুত ; কাউকে না কাউকে তো জীবন বিসর্জন দিতেই হবে। আমিই প্রথম স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে চাই। কিন্তু তোদের আমার সামনে মাটি নিয়ে শপথ করতে হবে যে, আমার ফাঁসির পর আন্দোলন যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। অনেক বেশি বেগবান হয়। আমরা উপস্থিত সকলেই ক্রন্দনরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সাথে মাটি নিয়ে শপথ করেছিলাম যে কোনো মূল্যে আমরা দেশকে স্বাধীন করবই করব।" আমাদের সেদিনের শপথ গ্রহণের ২ সপ্তাহের মধ্যে ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন এবং জেলে বন্দী অবস্থায় আড়াই বছর পরে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে 'আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে কারফিউ ভঙ্গ করে বাংলার সংগ্রামী ছাত্রসমাজ আপোষহীন জননেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য অভিযুক্ত নেতাদের আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করে।

১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে ডাকসুর তৎকালীন ভিপি তোফায়েল আহমেদ প্রিয় নেতাকে 'বঙ্গবন্ধু" উপাধিতে ভূষিত করেন। আইয়ুবের পতন হয় এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে নেয়।   

১৯৭০ সালের  অক্টোবর মাসে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা করেন ও নির্বাচনের অংশ হিসেবে এল.এফ.ও জারি করেন। আমরা ছাত্রলীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এল.এফ.ও মেনে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে প্রবল আপত্তি উত্থাপন করি। পরে বঙ্গবন্ধুর সাথে এক সভায় মিলিত হই। আমরা ২৬ জন ছাত্রলীগ নেতা এল.এফ.ও মেনে নির্বাচনে যেতে তীব্র সমালোচনা করে বক্তৃতা করি। আমি ছিলাম দ্বিতীয় বক্তা। আমাদের বক্তব্য শুনে উত্তেজিত কন্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'আমার উপর তোদের কি বিশ্বাস আছে? আমি বাংলার স্বাধীনতা চাই এটা বিশ্বাস করিস?' প্রত্যুত্তরে সমস্বরে আমরা বলেছিলাম আপনি শুধু বাংলার স্বাধীনতা চান, তাই নয়, আপনি আমাদের বাংলার স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছেন।    

আমাদের বক্তব্য শুনে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “Leader leads, he is not led by others’’ তাই আমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কতো কম রক্তপাতে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করা যায়। এই নির্বাচন ক্ষমতায় যাবার নির্বাচন নয়। এই নির্বাচনকে স্বাধীনতার পক্ষে রেফারেন্ডাম হিসেবে গণ্য করে কাজ করে যা। জনসভায় সুস্পষ্টভাবে বলবি ৬ দফা পাকিস্তানিরা না মেনে নিলে ১ দফার (অর্থাৎ স্বাধীনতা) আন্দোলন হবে। নির্বাচনকে জনমত গঠনের সর্বোত্তম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। বাঙালির নেতা কে হবে তাও নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। বাঙালিরা আমার পক্ষে রায় দিলে কীভাবে এল.এফ.ও লাথি মেরে বুড়িগঙ্গা পার করে সিন্ধু নদীতে ফেলে দিতে হয়, তা আমার জানা আছে। স্বাধীনতাই আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য। আমার উপর বিশ্বাস রেখে কাজ করে যা। আমি বেঈমান হয়ে মরতে চাইনা দেশকে স্বাধীন করেই মাথা উঁচু করে বাঙালির ইজ্জত রক্ষা করে মরতে চাই "(প্রায় হুবুহু)।  

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ধারণা ছিল নির্বাচনে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারবে না। এল.এফ.ও এর শর্ত মোতাবেক ১৮০ দিনে সংবিধানও রচনা করতে পারবে না। তাহলে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে সামরিক শাসনকেই স্থায়ী করতে পারবে। পাকিস্তানিদের জন্য বিধি হলো বাম। তাদের সমস্ত ধারণা ও গোপন রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত করে বাঙালি।

জাতি আওয়ামীলীগকে বাংলার ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে নির্বাচিত করে বাঙালি জাতির একক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচিত করেন।

আমি ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে “স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস"-এর সাথে সম্পৃক্ত হই। নিউক্লিয়াসের উদ্দ্যেশ্য ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা । যা মূলত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৬২ সালেই ছাত্রলীগের মধ্যে গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে বাঙালি সৈন্যদের মধ্যেও নিউক্লিয়াস গঠিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। যার বিশদ বিবরণ পাওয়া যাবে পাকিস্তানিদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট স্ব-ঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের দায়ের করা 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান। মামলায় যে মামলা বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ অনির্দিষ্ট কালের জন্য জাতীয় সংসদ অধিবেশন স্থগিত করায় এবং স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের সাথে জড়িত থাকার কারণেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার এটাই মাহেন্দ্রক্ষণ। তাই জয়দেবপুরে (বর্তমানে গাজীপুরে) সর্বদলীয় সশস্ত্র সংগ্রাম কমিটি গঠন করি। যেখানে আমাকে ঐ আহবায়ক নির্বাচিত করা হয়।

আমাদের এলাকার নেতা বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য মরহুম শামসুল হক এমএনএ এবং তৎকালীন মহকুমা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম জননেতা হাবিব উল্ল্যাহর সাথে ১৯৭১ সালর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিকেলের দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাই। সারাদিনব্যাপি বঙ্গবন্ধু লক্ষ লক্ষ বাঙালির উষ্ণ অভিনন্দনে ক্লান্ত। সে সময় ওই দুই নেতার সাথে আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখে বঙ্গবন্ধু জানতে চান আমরা কিছু বলব কিনা। জনাব শামসুল হক সাহেবের চোখের ইশারায় আনি বঙ্গবন্ধুকে জানাই যে, ঢাকা থেকে জয়দেবপুরের সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সমস্ত সমরাস্ত্র ঢাকায় সমরাস্ত্রের অভাবের অজুহাত দেখিয়ে জয়দেবপুর থেকে ঢাকায় অস্ত্র নিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। এমতাবস্থায় আমরা কী করব? একথা শোনার পরই বঙ্গবন্ধু ব্যাঘ্রের ন্যায় গর্জে উঠলেন। খুব জোরে এক ধমক দিয়ে বললেন “তুই একটা আহম্মক, এতদিন কী শিখেছিস? যেকোন মূল্যে বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। At the cost of anything''

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। ১৯ মার্চ, ১৯৭১ শুক্রবার ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাক হানাদার বাহিনী ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিবন্ধ করার জন্য জয়দেবপুর যায়। এই সংবাদ পাবার পর জয়দেবপুরের (গাজীপুরের) হাজার হাজার বীর জনতা যার যা ছিল যেমন- দেশী বন্দুক, ধনুক, ছেন, কাতরা, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে জমায়েত হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাক বাহিনী ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের সামনে রেখে পিছনে পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে রেখে জনতার উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। বাঙালি সৈন্যরা স্বাধীনতার পক্ষে ছিল বলে জনতার উপর গুলি না করে উপরের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। আমার ওই তরুণ বয়সে সুযোগ হয়েছিল সর্বদলীয় সশস্ত্র সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক হিসেবে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবার। অত্যাধুনিক চাইনিজ রাইফেল ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে আমরা ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্রভাবে আক্রমন করি। বঙ্গবন্ধুর একজন কর্মী হিসেবে আমার জীবনের এ ঘটনাই সর্বশ্রেষ্ঠ অহংকার । সেদিন সারা বাংলাদেশে স্লোগান উঠেছিল----

“জয়দেবপুরের পথ ধরো, সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু কর"
“বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন কর"


১৯৭১ সালের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। তখন দাবি ছিল একটাই, স্বাধীনতা। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতির করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেন যে--

ক) প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।

খ) প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, প্রত্যেক ইউনিয়নে, প্রত্যেক সাবডিভিশনে - আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো

গ) “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব-এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ

(ঘ) “আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব”।

ঙ) “তোমরা ব্যারাকে থাক, কেউ কিছু তোমাদের কিছু বলবে না

চ) “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"-জয় বাংলা।

এ ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা এমনভাবে দেন যে, বিশ্বের কেউ তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে পারবে না। আবার অপর দিকে গেরিলা যুদ্ধেরও পূর্ণ নির্দেশ প্রদান করেন।

ছাত্রলীগের ৩ মার্চের বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, ২৩শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাধীনতার পতাকা তুলে দেওয়া, জয়দেবপুরে ১৯শে মার্চের পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ, সারাদেশব্যাপি পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিরোধ, ২৬ শে ও ২৭শে মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান সাহেব, আবুল কাশেম সন্দীপ ও মেজর জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পাঠ, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধকে গতিশীল করেছে, ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু জাতিকে বঙ্গবন্ধু ২৩ বছরের আন্দোলনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন, প্রস্তুত করেছেন ।

বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সফলতার সাথে স্বাধীনতার স্পৃহা বাঙালি জাতির মধ্যে জাগ্রত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি যে ঘোষণা দেন, সেটিই স্বাধীনতার একমাত্র বৈধ ঘোষণা। ২৫শে মার্চের শেষ মূহুর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া ছিল খেলা শুরুর বাঁশি বাজানোর মত। যেটি বঙ্গবন্ধু একেবারে মোক্ষম সময় বুঝেই দিয়েছিলেন। ফলে স্বাধীনতার পক্ষে আর্ন্তজাতিক জনমত সহজেই আমাদের পক্ষে চলে আসে। নতুবা পাকিস্তানিরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে বিচ্ছিন্নতাবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করত। এখানেই বঙ্গবন্ধু অনন্য, অসাধারণ ও দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ একটি সফল স্বার্থক জনযুদ্ধ হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে এখন পর্যন্ত জীবন পার করতে পেরেছি সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। খুনিরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তাঁর নাম নিশানা মুছে দিতে। চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আজ আবার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। আর বাস্তবতা হচ্ছে, যে বঙ্গবন্ধুর নাম স্বাধীনতা বিরোধীরা বাংলার বুক থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল সেই বঙ্গবন্ধুর নামে স্যাটেলাইট সারা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। ৭ মার্চের ভাষণ এখন জাতিসংঘের ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। বঙ্গবন্ধু মরেও অমর, জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী। তাঁর আদর্শও চিরভাস্বর। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু মানে শুধু স্বাধীনতা নয়, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশও। 

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

লেখকঃ মাননীয় মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত