বাংলাদেশের ভবিষ্যত উজ্জ্বলঃ সুধীর সাহা

5021

Published on এপ্রিল 7, 2018
  • Details Image

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। এমন সৌভাগ্য অনেক দেশের কপালেই জোটে না। কোনো দেশ শত চেষ্টা করেও একটুও সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের ঠিক উল্টো অবস্থা। চাইলেই সে অনেক দূর যেতে পারে। এই ধারণাটি যে সত্য তা প্রমাণ করতে আমি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের সারমর্ম তুলে ধরছি। প্রাইস ওয়াটার কুপারস বা পিডব্লিউসি একটি খ্যাতিসম্পন্ন যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এ বছর তারা গবেষণা রিপোর্টে তিনটি দেশের অর্থনীতির অবস্থা সম্ভাবনাময় বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে। বলাই বাহুল্য, এই তিনটি দেশের অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। বাকি দুটি দেশ ভারত ও ভিয়েতনাম। তারা বলতে চেয়েছে, ২০৫০ সালে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থাকার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশ, ভারত এবং ভিয়েতনামের। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা বেশ কয়েক বছর ধরেই নানাভাবে উঠে আসছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে। সেই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ যোগ হলো পিডব্লিউসি-র গবেষণার রিপোর্টটি। তারা বলেছে, মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশ ২০৫০ সালে হবে বিশ্বের ২৩তম বড় অর্থনীতির দেশ। পিডব্লিউসি প্রকাশিত ‘২০৫০ সালে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ যেভাবে বদলাবে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তাদের ধারণা- বাংলাদেশ, ভারত এবং ভিয়েতনাম এই তিনটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় আগামী ৩৩ বছরে ৫ শতাংশের বেশি হবে। একটি দেশের অর্থনীতি কতটা বড় ও শক্তিশালী সেটি নির্ধারণে সর্বস্বীকৃতভাবে দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হলো পিপিসি অর্থাত্ ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে জিডিপি-র আকার এবং অন্যটি হলো এমইআর অর্থাত্ বাজার বিনিময় হারের ভিত্তিতে জিডিপি-র আকার। দুই হিসাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতির চিত্র উঠে এসেছে পিডব্লিউসি-র গবেষণায়। পিডব্লিউসি বলেছে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ পিপিসি-র ভিত্তিতে ৩১তম বৃহত্ অর্থনীতির দেশ। এই হিসাবে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৮ এবং ২০৫০ সালে হবে ২৩। তারা আরো বলেছে, এমইআর ভিত্তিতে ২০৫০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহত্ অর্থনীতির দেশ হবে। আগামী ৩৩ বছরে বিশ্বের যেসব দেশ ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে তাদের ৩২টি দেশ নিয়ে পিডব্লিউসি এই গবেষণা রিপোর্টটি তৈরি করেছিল।

তারা আরো বলেছে, আগামী ৩৩ বছরে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান আরো শক্তিশালী হবে। পিপিপি-র হিসাবে এখনই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ চীন ২০৩০ সালে এমইআর-এর হিসাবেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে চীন। ২০৫০ সালে পিপিপি-র হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র্রকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ হবে ভারত। তাদের রিপোর্ট আরো বলেছে, আগামী ৩৩ বছরে ‘জি সেভেনভুক্ত’ সাতটি দেশের হাত থেকে ‘ইমার্জিং সেভেনভুক্ত’ সাতটি দেশের হাতে চলে আসবে অর্থনীতির চালিকা শক্তি। ইমার্জিং সেভেনভুক্ত সাতটি দেশ হলো- চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, রাশিয়া, মেক্সিকো ও তুরষ্ক। আর জি সেভেনভুক্ত সাতটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, কানাডা ও ইতালি। পিডব্লিউসি আরো উল্লেখ করেছে, আগামী ৩৩ বছরে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিশ্ব অর্থনীতির ভরকেন্দ্র এশিয়ায় চলে আসবে।

বাংলাদেশ নিয়ে এমন আশার বাণী নতুন নয়। প্রায়ই উঠে আসে এমন সম্ভাবনার কথা। তবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে- তাতো সবাই বলছে। আর এমন বলা মানে কাগজে-কলমে বলা। এমন বলা মানে গবেষণায় উঠে আসা তথ্যাদির বলা। তবে এমন বলাটা তখনই সত্যি হয়ে ওঠে, যখন বাস্তবের সঙ্গে গবেষণার সম্ভাবনার ধাপগুলো একাকার হয়ে যায়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রমাণ দিয়েছে—তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভবকে জয় করেছে। প্রবৃদ্ধির হার, বিভিন্ন সামাজিক আর অর্থনীতির সূচকের হার এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ নিয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখার বিষয়টি এখন আর নিছক স্বপ্ন নয়; বরং সত্যির ওপর দাঁড়ানো শক্ত অবস্থান। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে। জাতিসংঘ, বিশ্ব গবেষণা সংস্থাগুলো এবং দাতা দেশগুলো এবার ঘুরে দেখছে বাংলাদেশকে নতুন করে। যারা একদিন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সঙ্গে তুলনা করেছিল, সেই তারাও বাংলাদেশের প্রতি আর হেলাফেলা করে তাকাতে পারছে না। ভৌগোলিক কারণেও বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে বিশ্ব বাজারে। প্রতিবেশী চীন এবং ভারত যেহেতু খুব শিগগিরই বিশ্বের অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার বনে যাওয়ার পথে এগুচ্ছে, তাই দু’জনেরই একদম বর্ডারে অবস্থিত বাংলাদেশের দিকে নতুন নজরে তাকাচ্ছে বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রগুলো। বিশেষ করে চীন এবং ভারতের টানাপোড়েনের মাঝখানে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবদিক থেকেই বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ জাগরণের পথটি অত্যন্ত উজ্জ্বল। ঠেকিয়ে রাখা যাবে না তাকে, সামনে এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ। 

সৌজন্যেঃ ইত্তেফাক  

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত