বাংলাদেশ-জাপানের বন্ধুত্বকে অংশীদারিত্বে উন্নীত করতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অঙ্গীকার

505

Published on মে 27, 2014
  • Details Image

আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো এ্যাবের আলোচনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, দুই নেতা শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ পরিবেশ বিকাশ এবং সামাজিক উন্নয়ন সম্প্রসারণে একমত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থিতিশীল জ্বালানি সরবরাহ, শিল্প পার্ক স্থাপন এবং পারমিটস, লাইসেন্স ইত্যাদি ত্বরান্বিত করাসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জাপানী বিনিয়োগ আকর্ষণে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন। দুই প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগ এবং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় আরো বৃদ্ধি করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে উল্লেখ করেন যে, জাপানের অনুদান সহায়তা প্রকল্প হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ (জেডিএস)-এ বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হবে।

যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিবেশের আলোকে তাদের সহযোগিতা গভীরতর করতে নীতি নির্ধারণী সংলাপ জোরদার করবে। এ প্রসঙ্গে দুই প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সংলাপ শুরুর সিদ্ধান্ত নেন এবং এতে উভয় দেশের সহযোগিতা আরো জোরদার হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে অবদানের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করায় জাপানকে স্বাগত জানান। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নীতিমালার ভিত্তিতে শান্তির প্রতি সক্রিয় অবদানের জন্য শেখ হাসিনা জাপানের প্রশংসা এবং এর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। এ সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে দক্ষিণ চীন সাগর পরিস্থিতি সম্পর্কে শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন। দুই প্রধানমন্ত্রী শান্তিপূর্ণভাবে ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এ বিরোধ অবসানের ওপর গুরুত্বারোপ আরোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেন। দুই প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা শান্তিরক্ষা মিশনকে আরো জোরদার করবে। প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে বাংলাদেশে প্রস্তাবিত পিস বিল্ডিং সেন্টার প্রতিষ্ঠায় বিশেষজ্ঞ পাঠানোসহ জাপানের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে শান্তিরক্ষা মিশন ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা জোরদারে সহায়তারও প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সমর্থন ও সহযোগিতার প্রস্তাবের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দ্রুত সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যাতে সমকালীন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এতে প্রতিফলিত হয়। জাপান যাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে পারে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থনের প্রতিশ্র“তি দেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে দুই প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরের মার্চে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার বাংলাদেশ সফরকালে ১২০ বিলিয়ন ইয়েনের ঋণ প্যাকেজ বিনিময় নোট স্বাক্ষরের প্রশংসা করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী সার্বিক দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে দুই প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ২৭ মে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো) এবং বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত জাপান-বাংলাদেশ কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সেমিনার'কে স্বাগত জানান।

দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নে জাপানের উচ্চতর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তি বিরাট অবদান রাখবে বলে একমত প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তাঁরা এ বছরের আগস্টে বাংলাদেশ থেকে জাপানে মেডিক্যাল ইন্সপেকশন মিশন পাঠানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

দুই প্রধানমন্ত্রী জাপান ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার এবং বাংলাদেশের জাপানী ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধারণার প্রশংসা করেন। তিনি বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে জাপানে এক জোড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন যাতে জাপানের জনগণ বিশেষ করে শিশুরা বাংলাদেশের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রধানমন্ত্রী ্এ্যাবেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং দ্রুত বাংলাদেশ সফরের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত