136
Published on মে 12, 2025এপ্রিল মাসে দেশের অর্থনৈতিক সূচক এক নাটকীয় পতনের সাক্ষী হয়েছে। পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) ৮.৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫২.৯ পয়েন্টে, যা সম্প্রসারণ পর্ব শুরুর পর সর্বনিম্ন। পিএমআই একটি সূচক যা অর্থনীতির গতি ও দিক নির্দেশ করে, এবং এর হঠাৎ পতন দেশের ভেতরে গভীর অর্থনৈতিক টানাপড়েনের ইঙ্গিত বহন করে।
এই পতনের প্রকৃত কারণ খোঁজার সময় এসেছে। কারণ সাময়িক ছুটি বা আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা দিয়ে পুরো বিষয়টিকে হালকাভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। এর পেছনে রয়েছে প্রশাসনিক স্থবিরতা, স্বেচ্ছাচারী অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত, এবং সর্বোপরি—অবৈধ শাসনের পরিণাম। দেশের গায়ে এখন যে শাসক চেপে বসে আছেন, তার রাজনৈতিক বৈধতা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি তার নীতিগত দিকনির্দেশনাও ভয়ানক রকমের অদূরদর্শী ও আত্মঘাতী।
মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন এই অঘোষিত অর্থনৈতিক শাসন ব্যবস্থা ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে গোটা ব্যবস্থাকে। তার ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ, আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নিজেকে "উদ্ধারকর্তা" হিসেবে প্রমাণ করার খায়েশ এবং রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ—সব মিলিয়ে আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি এক প্রকার ল্যাবের ইঁদুরে পরিণত হয়েছে।
যেখানে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ধীরগতি পেয়েছে, সেখানে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে কিছুটা গতি থাকলেও তা বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে উঠবে যদি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক পঙ্গুত্বের অবসান না ঘটে। দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য যে স্থিতিশীলতা ও বাস্তবভিত্তিক নীতির প্রয়োজন, তা বর্তমানে অনুপস্থিত।
ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের সংগঠন এমসিসিআই এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ থেকে প্রাপ্ত পিএমআই ডেটা স্পষ্টতই দেখায়, গত বছর জুলাই মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সূচক যেখানে ৩৬.৯ পয়েন্টে নেমেছিল, সেখানে অক্টোবরের পর থেকে কিছুটা উন্নতি হলেও তা এখন আবার অবনতির দিকে। এটি নিছক পরিসংখ্যান নয়—এটি ভবিষ্যতের আর্থিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস।
আমরা এখন এক এমন পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে শাসনের বৈধতা যেমন নেই, তেমনি অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনার মেরুদণ্ডও ভেঙে পড়েছে। দেশের রপ্তানিনির্ভর খাতগুলোর ওপর শুল্ক চাপানো, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সংকট নিরসনে ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মেঘ আজ অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে অন্ধকার ছড়িয়ে দিয়েছে। এবং এই অন্ধকারের জন্ম দিয়েছেন সেইসব লোক, যারা জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় বসে আজ দেশের অর্থনৈতিক মুক্তিকে দমন করছেন।
এপ্রিলে অর্থনীতির গতি কমা একটি বিপদের ঘণ্টা। এটি এক ধরনের "অ্যালার্ম বেল"—যা শোনার মতো সংবেদনশীলতা এখন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের নেই। কারণ তাদের কাছে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান, পুরস্কার, সম্মাননা, বিদেশি মিডিয়ার প্রশংসা ইত্যাদিই মুখ্য।
বাংলাদেশ এখন এক সংঘাতময় মোড়ের দিকে এগোচ্ছে—একদিকে রাজনৈতিক বৈধতার সংকট, অন্যদিকে অর্থনীতির পরিণত সংকোচন। এর পরিণতি হতে পারে আরও গভীর ও স্থায়ী ক্ষতি। সময় এসেছে এই ধ্বংসযজ্ঞের মূল হোতাদের দায় নির্ধারণের, এবং সত্যটি প্রকাশ্যে আনার।
তথাকথিত ‘উন্নয়নের আইকন’ আজ হয়ে উঠেছেন জাতির গলার কাঁটা। যত দিন এই অবৈধ ও আত্মমুগ্ধ নেতৃত্ব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রাডার চালাবে, ততদিন গতি নয়—গহ্বরই আমাদের ভবিষ্যৎ।