সরকার দেশের সকল শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধঃ প্রধানমন্ত্রী

510

Published on অক্টোবর 21, 2014
  • Details Image

শেখ রাসেলের মতো একটি ছোট শিশুকে হত্যা করাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সবচেয়ে বর্বারোচিত হত্যাকা- হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ ধরনের আর কোন শিশুর মৃত্যু দেখতে চাই না। তিনি বলেন, আমরা শিশুদেরকে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ দিতে এবং সকল পর্যায়ে দেশকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করতে দেশের মূল্যবান নাগরিক হিসেবে তাদের প্রত্যেককে গড়ে তুলতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ রাসেলের ৫০তম জন্ম বার্ষিকী পালন উপলক্ষে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ আয়োজিত দাবা, চিত্রাংকন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে এ কথা বলেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে ভাষণ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময়ে আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে আমরা একটি বিজয়ী জাতি। একটি বিজয়ী জাতি কখনোই একমাত্র মহান আল্লাহর কাছে ছাড়া অন্য কারো কাছে মাথা নত করতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সর্বকনিষ্ঠ ভাই শেখ রাসেলের স্মৃতি উল্লেখ করে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, রাসেল ছিল আমার অনেক ছোট। ছোটবেলা থেকেই আমি তাকে দেখা শুনা করতাম। আমি আর কোন শিশুর জীবনে এমন ঘটনা দেখতে চাই না।

জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অথবা বছরের পর বছর জেলে থাকায় রাসেল জন্মের পর থেকেই পিতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিল।

তিনি বলেন, আমাদের মা এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আমরা যখন কারাগারে বাবাকে দেখতে যেতাম, ছোট রাসেলও আমাদের সঙ্গে কারাগারে যেত। সে সময়ে রাসেল বুঝতে পারতো যে বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে শেষ করে দেয়াই লক্ষ্য ছিল না, ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধংস করা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধংস করে দেশকে অন্যদিকে পরিচালিত করা এবং দেশকে পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

পরিষদের সভাপতি রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পরিষদের মহাসচিব মাহমুদুম সামাদ চৌধুরী এমপি, পরিষদের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এমপি, ঢাকা চ্যাপ্টারের সভাপতি কে এম শহিদুল্লাহ এবং পরিষদের সদস্য ইসরাত জাহান ইমা বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দরিদ্র পরিবারের পিতা-মাতার উপর চাপ কমাতে শিক্ষার্থীদেরকে বিনা মূল্যে বই দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে এবং শিক্ষায় প্রবেশ সহজ করে দিতে শিক্ষার্থীদের সহায়তার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আন্তঃবিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আয়োজনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যাতে তারা লেখাপড়া, খেলাধূলা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে মনোযোগি হবে। এতে তারা জাতির প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে।

তিনি দেশের ইতিহাস জানতে এবং পাকিস্তান কিভাবে ২৪ বছর আমাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রাম করে দেশ কিভাবে স্বাধীনতা পেয়েছে, এসব বিষয় জানতে শিশুদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি লোক তাদের পূর্ণ অধিকার নিয়ে বসবাস করবে এবং বিশেষ করে প্রতিটি শিশুর অধিকার থাকবে নিরাপদ। সরকার প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ। ফলে ভবিষ্যতে দক্ষতার সাথে তারা দেশ চালাতে সক্ষম হতে তাদেরকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আমরা শিশুদেরকে এভাবেই গড়ে তুলতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী সামরিক শাসনের সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, সে সময়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। দলের নেতা-কর্মীরা পরিষদের ব্যানারে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এটি খুবই দুর্ভাগ্য, আমাদের শিশুরা দেশে থেকেও দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারেনি। দেশের ইতিহাস জানতে তাদেরকে বিদেশে যেতে হয়েছে। তবে এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। ভবিষ্যতে আর কেউ তাদেরকে বিভান্ত করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু একটি মন্তব্য সম্পর্কে শিশুদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি, একটি সোনার দেশ গড়তে সোনার মানুষ দরকার। তোমরা দেশের সোনার সন্তান। তিনি লেখাপড়ায় মনোযোগি হতে, অভিভাবক, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করতে এবং দরিদ্র লোকদের সহায়তা করতে শিশুদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি শিশুদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা কখনোই অন্ধ, শারিরীক প্রতিবন্ধী ও অসহায় লোকদের অবহেলা করবে না। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তাদেরকে দেখবে। তাহলে আমরা আমাদের দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত