কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা ও নতুন ধরনের রোগব্যাধি প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

429

Published on নভেম্বর 22, 2014
  • Details Image

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের একটি মৌলিক অধিকার। কেবলমাত্র স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিই জাতি গঠন কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে পারে এবং এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ডাক্তারই হচ্ছেন উত্তম বন্ধু।

গতকাল বিকেলে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত আউটডোর কমপ্লেক্সের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডাক্তারদের সামান্য সহানুভূতি রোগীদের মর্মপীড়া ও বেদনা ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। আপনাদের মনে রাখতে হবে রোগীরা হাসপাতালে অতিথি এ কারণে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে রোগীরা যাতে আপনাদের ব্যবহারে মর্মাহত না হন।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বর্তমানে বিএসএমএমইউ একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চতর অধ্যায়ের পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন।

তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসা সেবার উন্নয়নের কারণে গত কয়েক বছরে চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন কমেছে। তবে স্বাস্থ্যসেবাকে কেবল রোগীদের রোগ নিরাময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না।

‘এ ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জনের জন্য উচ্চতর গবেষণা প্রয়োজন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গী বিবেচনা করেই তাঁর বিগত সরকার পোষ্ট গ্রাজুয়েট হসপিটালকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তখন বিএনপি ও জামায়াত ঘেঁষা শিক্ষক-কর্মচারীরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে- এমনকি আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালায়।

তবে আওয়ামী লীগ সবসময়েই দূরদর্শী চিন্তা করে এবং সময়ের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিলো তা প্রমাণিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশে সাধারণ এবং কারিগরি শিক্ষার জন্য অনেক উচ্চতর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু মেডিকেল শিক্ষার জন্য এ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না।

তিনি বলেন, পিজি হাসপাতালকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার পর হাসপাতালটির স্বাস্থ্য সেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ এ থেকে উপকৃত হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পিজি হাসপাতালে সাধারণ মানুষের কোন প্রবেশাধিকার ছিল না। কেবলমাত্র উচু শ্রেণীর এবং সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষই সেখানে স্বাস্থ্য সেবা পেতেন। এখন এ হাসপাতালের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্তের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও প্রতি মন্ত্রী জাহিদ মালেকও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এবং মন্ত্রনালয়ের সচিব মঞ্জুরুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন।

দেশে আরো দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য ইতোমধ্যেই তিনি সংশ্লিষ্ঠদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, নতুন দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হবে। সকল মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই পাঁচশ বেডের বেশি সকল মেডিকেল কলেজ বিশেষ করে যেগুলো সামরিক প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে সেগুলোকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে।

রাজধানীতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কমলাপুরে রেলওয়ে হাসপাতালে পৃথক একটি সাধারণ হাসপাতালের শাখা প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়কেও নির্দেশ দেন তিনি।

সমগ্র বিশ্বে নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব প্রতিরোধে মেডিকেল গবেষণার কাজে এবং নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে এবং স্বল্প মুল্যে সেবা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে ডাক্তাররা এগিয়ে আসবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

গবেষণা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করতে ইনিস্টিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড (আইআরবি) গঠনের জন্য বিএসএমএমইউকেও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দিতে চায়। তিনি বলেন, এ উদ্দ্যেশ্যে সারা দেশে প্রায় ১৩ হাজার ৫শ’ কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১ হাজার ৫শ’ ইউনিয়ন হেলথ কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে স্বাস্থ্য সেবা না পায় সে লক্ষে বিএনপি-জামায়াত সরকার তার আগের আমলে প্রতিষ্ঠিত এ সব স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছিল।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা এখন এসব কেন্দ্র থেকে বিনা পয়সায় ঔষধ পাচ্ছে ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছে বলেও উল্লেখ তিনি করেন।

বিএসএমএমইউ এখন সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে উন্নীত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে অটিস্টিক শিশুদের সেবায় অটিজম সেন্টার এবং মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের জন্য পেলিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

নতুন ডাক্তার নিয়োগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ৮,৫০০ সহকারি সার্জন ও সহকারি ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দিয়েছে। গত দু’বছরে আরো চার হাজার সহকারি সার্জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী দু’টি অপারেশন থিয়েটার সম্বলিত আউটডোর ভবনের উদ্ধোধন করেন। তিনি ভবনের ভিতরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরণের প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছি এবং সরকার এখন মানুষের প্রয়োজনীয় পুষ্টির উপর জোর দিচ্ছে।’

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত