539
Published on ফেব্রুয়ারি 21, 2015তিনি বলেন, জাতীয় অর্জন ধরে রাখতে এবং দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে ও জাতির মাথা উঁচু রাখতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে এদের প্রতিরোধ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে আমাদের জন্য একটি শিক্ষা।
অমর একুশে উপলক্ষে আজ বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট রাজধানীতে নিজস্ব মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সেলিনা হোসেন। সেমিনারের বিষয় ছিল ‘ভাষা আন্দোলন থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : নারীর প্রজ্ঞা।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জিন্নাত ইমতিয়াজ আলীও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে একুশের আমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ অনুবাদ করে মারমা, ত্রিপুরা, বম ও ম্রো ভাষায় গাওয়া হয়।
বিএনপি-জামায়াতের চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ একটি রোলমডেলে পরিণত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বর্তমান সংকট নিরসনে বিদেশী সহায়তার প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করে বলেন, এ সমস্যা সমাধানে আমরা যথেষ্ট সক্ষম।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। এখানে কোন অমানবিক কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভাষার জন্য শাহাদাতকে আলিঙ্গন করে বাঙালি জাতি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ববাসী তাদের সাহস ও ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অর্জিত সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে চায় না। শুধু তাই নয়, তারা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনকে পছন্দও করে না।
তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি অথবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাঙালি জনগণের জন্য শুধু একটি উৎসবের বিষয় নয়, এই দিবস ভাষা অনুরাগী প্রতিটি মানুষের।
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার চায় বাংলা ভাষাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যদিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার আওতায় বাংলা কীবোর্ড ও বাংলা ডোমেইন উদ্ভাবন করা হয়েছে। মোবাইলে বাংলা কী প্যাড সেট করা হয়েছে এবং বাংলা ডোমেইন তৈরি করা হয়েছে। এখন বহু মানুষ এ আবিস্কারের সুফল ভোগ করছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে এবং সরকারিভাবে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করে। তাঁর সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বাংলা ভাষা, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সকল বাংলা ভাষাভাষীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলাকে নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেন। আমিও তাঁর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করি।
তিনি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জনে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালি রফিক ও সালাম এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ক্লাবের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার অন্যান্য অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের মতো এটিও সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, কর্মশালার, আলোচনা সভা আয়োজন এবং গ্রন্থ ও ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল