বাংলাদেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনাঃ কারাগার

1034

Published on মে 27, 2020
  • Details Image

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় গৃহিত স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং সমন্বয়ের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক চীন ও অন্যান্য দেশের সংশ্লিষ্ট কারিগরি নির্দেশনা অনুসরণ করে 'বাংলাদেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ক্রমান্বয়ে চালু করার সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থাপনা ও পেশার জন্য কারিগরি নির্দেশনা' প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

কারাগার

কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল

১. গ্লাভস, জীবাণুনাশক সরবরাহ, প্রয়োজন অনুযায়ী জরুরী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। সেই সাথে কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে এবং অপরাধীদের মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
২. কারারক্ষী (পুলিশ), কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং অপরাধিদের স্বাস্থ্যের অবস্থা প্রতিদিন পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ প্রতিনিধির [স্বাস্থ্যকর্মী) ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা যাবে- যেমন জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি তাদের অবশ্যই স্ক্রিনিং করতে হবে।
৩. মানুষের প্রবেশ বা বের হওয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। কারাগারে কারারক্ষী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থ নিশ্চিত হলে কারাগারে প্রবেশ করতে পারবেন। নতুন অপরাধীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর শারীরিক পরীক্ষা, শরীরের তাপমাত্রা এবং পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থ্যতা নিশ্চিত হলে হেফাজতে নেয়া যাবে। মহামারীর সময় মুখোমুখি সাক্ষাত বন্ধ রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করতে হবে।
৪. নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং প্রশাসনিক ভবনে দৈনিক ২-৩ বারের জন্য ২০-৩০ মিনিট করে অবাধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যদি এসি ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে এসির স্বাভাবিক কার্ক্রম নিশ্চিত করতে হবে। বিশুদ্ধ বাতাস চলাচল বৃদ্ধি করতে হবে এবং ফিরতি বাতাস প্রবাহ বন্ধ করতে হবে।
৫. আবাসন, কাজের এলাকা, ক্যান্টিন, গোসলখানা, গণশৌচাগার, জনসমাগমের এলাকার মেঝেসমূহ এবং বারবার ধরতে হয় এমন জিনিসপত্র যেমন দরজা এবং সিড়ির হাতল জীবাণুনাশক দ্বারা বারবার পরিষ্কার করতে হবে।
৬. থালাবাসন এবং গ্রাস প্রতিবার ব্যবহারের পর জীবাণুনাশক দ্বারা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
৭. খাবার গ্রহণ করার সময় দূরে দূরে অবস্থান করতে হবে এবং নিজস্ব থালাবাসন ব্যবহার করতে হবে।
৮. ক্যান্টিন এবং গণশৌচাগারে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং পর্যাপ্ত সাবানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. দৈনিক ময়লা পরিষ্কার করতে হবে এবং ময়লা সংগ্রহ করার স্থান জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। নিষ্কাশন নল, বেসিন এবং ঝর্ণা ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে যাতে এগুলোর কার্যকারিতা অব্যাহত থাকে।
১০. বিচ্ছিন্নভাবে বিনোদন এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে একে আপরের মাঝে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং দেখা সাক্ষাত হ্রাস করতে হবে।
১১. জমায়েত এবং দলগত কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
১২. কারাগারে কারারক্ষী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর রাখতে হবে। হাঁচি দেয়ার সময় মুখ ও নাক টিস্যু অথবা কনুই দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
১৩. স্বাস্থ্য পরামর্শ গুলো এমনভাবে রাখতে হবে যেন সহজে দৃষ্টিগোচর হয়। কোভিড-১৯ কিভাবে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।
১৪. একটা জরুরী অঞ্চল গঠন করতে হবে । যখন কারারক্ষী, কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং কোন অপরাধীর কোভিড-১৯ সম্পর্কিত উপসর্গ দেখা দিবে (যেমন জ্বর) তখন তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে পৃথক স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সময়মত চিকিৎসা দিতে হবে।
১৫. কোভিড-১৯ সংক্রামক রোগী সনাক্ত হলে এসি ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা স্থানীয় গাইডলাইন অনুসরণ করে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মূল্যায়ন না হওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ রাখতে হবে।

মধ্যম ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল

১৬. উপরের নির্দেশিত পদক্ষেপ ছাড়াও নিচে বর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবেঃ
১৭. মানুষের প্রবেশ বা বের হওয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ডাইনিং (খাবার) পরিসেবা বন্ধ রাখতে হবে।
১৮. কারারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারী অথবা অপরাধী যিনি কোন মেডিক্যাল ইন্সটিটিউট থেকে ফিরে এসেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোভিড-১৯-এর জন্য পরীক্ষা দ্বারা সুস্থ্য বলে বিবেচিত হবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি কারাগারে প্রবেশ করতে পারবেন না।
১৯. কারাগারে কেউ কোভিড-১৯ সনাক্ত হলে কারারক্ষীসহ সকল অপরাধিদের কারও মধ্যে কোভিড-১৯-এর উপসর্গ আছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে কোভিড-১৯ সনাক্ত হয়েছে সেখানকার সকল অপরাধীকে স্থানান্তর এবং রোগীদের জন্য আলাদা অঞ্চল, কোয়ারেন্টাইন পর্যবেক্ষণ অঞ্চল এবং একটি সাধারণ অঞ্চল তৈরী করতে হবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার অধীনে একটি সংরক্ষিত দল নিযুক্ত করতে হবে।
২০. পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করানোর জন্য বায়ু চলাচল ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। যেখানে রোগী সনাক্ত হয়েছে সে স্থান জীবাণুমুক্ত করা এবং কারাগার পরিপূর্ণভাবে জীবাণুযুক্ত করার জন্য বিশেষ লোকবল নিয়োগ করতে হবে।
২১. যদি কারাগারে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে যায় তাহলে সনাক্ত রোগী এবং যাদের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ আছে তাদেরকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কারাগারে কোয়ারেন্টাইন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকে
তাহলে মুমূর্ষু রোগীদেরকে যথা সময়ে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য স্বীকৃত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। যাদের মধ্যে উপসর্গ লক্ষণীয় তাদের স্বীকৃত হাসপাতালে স্থানান্তর করা এবং কড়া নজরদারী ও পরিপূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
২২. যেখানে এ রোগী বসবাস করতেন সে স্থানকে বিশেষ লোকবলের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত