বিএনপি জামায়াতের দুঃশাসন: ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরেই সাংবাদিকদের ওপর নেমে আসে মৃত্যুর খড়গ

811

Published on এপ্রিল 19, 2023
  • Details Image

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্বিচারে হত্যা করে ও মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায় বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা। ভোট পাবে না জেনে ভোট যাতে দিতে পারে তাই হত্যা করে, হামলা করে, আগুন দিয়ে ভয় দেখানোর কৌশল অবলম্বন করে খালেদা-নিজামী জোট। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনারা যেভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছিলো ঠিক তেমনিভাবে চারদলীয় ঐক্যজোটের সন্ত্রাসীরাও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ২০০১ সালে।

সাংবাদিকেরাও এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পাননি। দেশজুড়ে যেখানেই জোট সরকারের বিরুদ্ধে কেউ লিখেছে, সেখানেই হামলে পড়েছে স্বাধীনতাবিরোধী শকুনেরা। চার দলীয় জোটের সাংসদ, ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে যাওয়াটা ছিল যেন যমকে বাড়িতে ডেকে আনা। পিটিয়ে, গুলি করে, হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে এক মাৎসান্যায়ের সৃষ্টি করেছিল বিএনপি-জামাত জোট।

১ বছরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২০ সাংবাদিক নির্যাতিত, মাইকিং করে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিত স্থানীয় বিএনপির সভাপতি

ক্ষমতা গ্রহনের ১ বছরের মধ্যে খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, নড়াইল এলাকায় ২০ সাংবাদিক বিএনপি-জামাত জোট সরকারের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২ অক্টোবর ২০০২ সতারিখের জনকন্ঠ পত্রিকায় এই তথ্য উঠে আসে। এর মধ্যে খুলনার পুর্বাঞ্চল পত্রিকার সাংবাদিক খোকন খুন হন। কুষ্টিয়ার এক প্রতিমন্ত্রির পুত্রের হাতে অপহৃত হন দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরার তালা বিএনপির সভাপতি স্থানীয় এক সাংবাদিককে সরাসরি হত্যার হুমকি দেয় এবং মাইকিং করে 'দেখে নেবে' বলে ঘোষণা দেয়। নড়াইলের পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সেখানে এক মাসের বেশি সময় ধরে ১০ জনের বেশি সাংবাদিক প্রানভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে খবরে প্রকাশিত হয়। রিফাত বিন ত্বহা নামে এক সাংবাদিক ১ বছর ২৭ দিন ধরে পালিয়ে আছেন, কারণ তিনি হরকাতুল জিহাদ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, প্রশাসনের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছিলেন। যশোরে সাংবাদিক কাজলকে না পেয়ে তাঁর ভাই সালামকে বিনা মামলায় আটক করে ৫ দিনের রিমাণ্ডে নেয় পুলিশ, আবার হুমকি দেয় "সাংবাদিক তার ভাইকে কিভাবে রক্ষা করে দেখবো" বলে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রতিবেদন 'পছন্দ' না হওয়ায় মেরে সাংবাদিকের দুই হাত ভেঙ্গে দেয় বিএনপি-জামাতের নেতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি'র পুলিশ ক্যাডারদের হামলা

২০০২ সালের ২২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-সাংবাদিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও পুলিশের যৌথ পেটুয়া বাহিনী। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশপথ বন্ধ করে হামলা চালায় পুলিশ। এতে নেতৃত্ব দেয় ডিবির এডিসি কোহিনুর ও ডিএমপি'র এডিসি রহিম। এই দুই 'গুণধর' বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিল। এবার পুলিশ হয়ে এসে শিক্ষক সাংবাদিক পিটিয়ে গুণের পরিচয় দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে চলা আন্দোলনকে আর সহ্য করতে পেরে হামলা করেছে বলে নিজেই জানায় এডিসি কোহিনুর। কোহিনুর এও বলে ' লাঠিচার্জের সময় কে ছাত্র কে সাংবাদিক তা দেখা হয় না। আবার এডিসি রহিম কোন হামলার কথা অস্বীকার করে যদিও হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রখ্যাত অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। এমনকি ছবিতেও দেখা যাচ্ছে শিক্ষকদের ওপর লাঠিপেটার দৃশ্য। লাঠিপেটায় আহত হন দৈনিক প্রভতের স্টাফ প্রতিবেদক দীপক আচার্য, ডেইলি স্টারের স্টাফ প্রতিবেদক জাহিদুল ইসলাম। রয়টার্সের ফটো সাংবাদিক রফিকুর রহমানের ক্যামেরা নিয়েও টানাটানি করে ছাত্রদলের ক্যাডারেরা।

এই হামলার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাংবাদিকদের প্রতিবাদ কর্মসূচির পরে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি প্রথম আলোর ক্যাম্পাস প্রতিবেদক সম্রাটকে পেটায় পুলিশ। একই দিন বিকেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্টের ক্যাম্পাস রিপোর্টার খাদেমুল ইসলাম হৃদয়, দৈনিক ইত্তেফাকের সাহাবুল হক সাবু, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মোঃ নুরউন নবী, নিউ নেশনের শফিউল হক প্রমুখ এই হামলায় গুরুতর আহত হন।

সাংবাদিকদের কলম থামাতে বিএনপি ও জামায়াতের ক্যাডারদের প্রেস ক্লাব দখল, মামলা নেয়নি পুলিশ

২০০২ সালের ১ সেপ্টেম্বরের জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে জানা যায় নড়াইল জেলার কালিয়ায় প্রেসক্লাব দখল করে জোটসমর্থিত ছাত্রনেতা। কর্মরত সাংবাদিকদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় চিহ্নিত কিছু ছাত্রনেতা। এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে তিন দিন পরেও মামলা নেয়নি পুলিশ প্রশাসন। এমনকি প্রেসক্লাবটি দখল্মুক্ত করার চেষ্টাও করেনি তারা। এতে করে এলাকার সাংবাদিকদের মাঝে ভীতির সঞ্চার হয় এবং এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান অনেকেই। প্রায় দেড় মাস পরেও তারা বাড়ি ফিরতে পারেননি বলে অক্টোবর মাসের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

১৯ মে'র পত্রিকায় জানা যায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সাংবাদিক নামধারী জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা প্রেস ক্লাব দখল করে। প্রেস ক্লাব নির্বাচনের নামে পুরোনো সদস্যদের বাদ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতন নির্বাচন করে শিবিরের ক্যাডারদের দিয়ে কমিটি গঠন করে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও সেই কমিটির সদস্যরা প্রেস ক্লাব দখল করে নেয়।

২৫ মে তারিখে প্রকাশিত এক খবরে দেখা যায় বাগেরহাট জেলার চিতলমারীতে উপজেলা বিনেওপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাজাহান শেখের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী প্রেসক্লাব দখল করার চেষ্টা চালায়। প্রেসক্লাবের জমিকে নিজের বলে দাবি করে জোরপুর্বক দেয়াল তুলতে শুরু করে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয়। মূলত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস নিয়ে রিপোর্টের কারণে সংবাদকর্মীদের ওপর ক্ষুদ্ধ ছিল শাজাহান শেখ।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত