মার্চ মাস, বঙ্গবন্ধু ও আজকের বাংলাদেশ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.) -  ১৯৭১ সাল থেকে মার্চ মাস হয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতার মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের মার্চ মাসে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতা অর্জনের পথ বাতলিয়ে দিয়েছিলেন। তার নির্দেশগত পথ ধরে মাত্র ৯ মাসের মাথায় আমরা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সশস্ত্র যুদ্ধে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম।...

১৯৭১, রংপুরের হাতিয়া গণহত্যা

মোহাম্মদ আরিফুল হকঃ ‘সবুজ পূর্ব পাকিস্তানকে লাল রঙে রাঙাতে হবে’ রাও ফরমান আলীর এই আদেশই হয়তো বাংলা ভাষাভাষীকে সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অপরাধের বলিতে পরিণত করেছিল। উত্তাল একাত্তরের ১৩ নবেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে এক নারকীয় গণহত্যার শিকার হয়েছিল বর্তমান রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার অন্তর্গত হাতিয়া ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ।...

১৯৭১, সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা গণহত্যা

মাসুদ রানাঃ একাত্তরের ২০ মে পাকিস্তানী বাহিনী খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগরে গণহত্যা চালিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করে। ২০ মে চুকনগর গণহত্যা চালানোর পূর্বে চুকনগর থেকে কিছু শরণার্থী পরিবার ভারতে যাওয়ার জন্য খুব ভোরে বের হয়ে যশোরের কেশবপুরের প্রায় ১২-১৩ কি:মি: পশ্চিম দিকে ত্রিমোহিনী নামক জায়গায় রাত যাপন করে। ২১ মে ভোরবেলা আবার যা...

১৯৭১, নীলফামারীর গোলাহাট গণহত্যা

সাব্বির মাহমুদ রাবাতঃ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সরকার সৈয়দপুর বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করে। ২৫ মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানী সেনা ও তাদের সহযোগী জামায়াত, মুসলিম লীগ, বিহারীরা মিলে বাঙালী হিন্দু-মুসলিমদের জোর করে ধরে নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে বিমানবন্দরের কাজ করিয়ে নিতে থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ১ জুন বিহারী সম্...

গণহত্যা ১৯৭১- মৌলভীবাজারের পাঁচগাঁও

২৭ মার্চ বিকাল ৩টায় পাকিস্তানী বাহিনী মৌলভীবাজার জেলার উত্তরের রাজনগর উপজেলায় প্রবেশ করে। পাকিস্তানী বাহিনীর প্রথম শিকারে পরিণত হয় রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ভূমিউড়া গ্রামের পণ্ডিত শ্যামাপদ কাব্যতীর্থ। একাত্তরে রাজনগরে পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থানের কারণে স্থানীয় কিছু রাজাকার সুবিধা লাভ করতে শুরু করে। তারা শান্তি কমিটিতে নাম লেখিয়ে গ্রামে প্রভাব খাটাতে থাকে।...

মহিমান্বিত মার্চ- ইতিহাসের মাইলফলক

নাজনীন বেগমঃ ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় কালপর্ব অতিক্রম করে আবারও নতুন এক পথপরিক্রমা বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে বিরাজ করছে। বসন্তের মিষ্টি হাওয়া প্রকৃতির মাঝে তার স্নিগ্ধ আমেজ নিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে। নব বসন্তের পাতায় পাতায় সবুজের সমারোহ, দক্ষিণা বাতাসের সুবাসিত শিহরণ- সব মিলিয়ে নিসর্গের বাতাবরণ এক অনন্য রূপে সজ্জিত। এমন সুশোভিত, মনোমুগ্ধকর পরিবে...

১৯৭১, ছুটি খাঁ দীঘি গণহত্যা

মাসুদ রানাঃ ২৬ ও ২৭ মার্চ বিকেলে পাকিস্তানী বাহিনী চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলাধীন জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে প্রবেশ করে ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৭-২৮ মার্চ থেকে পাকিস্তানী বাহিনী এলাকার অসহায় বাঙালী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াতরত মানুষকে এখানে ধরে এনে অত্যাচার-নিপীড়ন করে হত্যা করতে থাকে। অসহায় বাঙালীদের হত্যার পরে তাদের মৃতদেহ ফেলার জন্য জোরারগঞ্জ বাজারের আধা কিলোমিটা...

নিবিড় নজরদারিও রুখতে পারেনি অনন্য উত্থান

অজয় দাশগুপ্তঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। আর কয়েকদিন পরেই (২০১৯, ১৭ মার্চ) তিনি শতবর্ষে পা দেবেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের ৭ মাসের মধ্যেই (১৯৪৮, ১১ মার্চ) তিনি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে হরতাল পালন করতে গিয়ে জেলে গেলেন। তখন তার বয়স ২৮ বছরও পূর্ণ হয়নি। অথচ সদ্যোজাত পাকিস্তান রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ বা ইন্টে...

অগ্নিঝরা মার্চঃ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম

তোফায়েল আহমেদঃ ৫ মার্চ ১৯৭১। এই দিন হরতাল কর্মসূচি পালনকালে টঙ্গীতে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ৬ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন। খুলনা ও রাজশাহীতেও যথাক্রমে ২ জন ও ১ জন নিহত হন। টঙ্গীতে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে বায়...

ক্ষুধামুক্তির সংগ্রামে জয়

অপূর্ব আজাদঃ পাল্টে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ১৭ কোটি মানুষের এই জাতির লক্ষ্য এখন মধ্য আয় এবং সেখান থেকে উন্নত বিশ্বের সোপানে ওঠা। বাংলাদেশকে একসময় বলা হতো ক্ষুধার দেশ, দুর্ভিক্ষের দেশ। সেই শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় যখন ৮ মণ চাল পাওয়া যেত তখনো এ দেশে দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গায় মানুষ প্রাণ হারাত। ব্রিটি...

১৯৭১, বরিশালের কাঠিরা গণহত্যা

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রাম কাঠিরা। স্বাধীনতার পূর্বে একটি সাধারণ হাটবাজার ছাড়া আগৈলঝাড়ার পরিচয় দেয়ার মতো বিশেষ কিছু ছিল না। কাঠিরা ছিল খুব সাধারণ একটি গ্রাম, যা চারদিক থেকে বিল দিয়ে ঘেরা। তাই কাঠিরাকে প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলই বলা যায়, যেখানে বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া চলাচলের আর কোন পথ ছিল না। যদিও পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণের সময় কাঠিরা...

১৯৭১, খুলনার আজগড়া গণহত্যা

আরিফ রহমানঃ অপারেশন সার্চলাইট নাম দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। বাঙালীর স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে নির্মূল করতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা এ কার্যক্রম চালায়। দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের সহায়তাকারী দালালরা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করে। ৬ লাখ না...

মুক্তির মন্ত্রে জ্বলন্ত মার্চ

ড. শফিক আশরাফঃ বাংলায় ফাগুন এলেই প্রকৃতিতে আগুন জ্বলে। চারদিকে শিমুল-পলাশের মতো আগুন রঙা ফুল দেহ ও মনে একটি বিপ্লবী বার্তা ছড়ায়। মার্চ মাস এই ফাল্গুনকে বুকে নিয়ে গৌরব ও ইতিহাসকে জড়িছে রেখেছে। মার্চকে আমরা ডাকি স্বাধীনতার মাস বলে। মার্চ মাস প্রচুর ঘটনাবহুল। বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির যত জাগরণের কথা স্মরণ করা যায়, মার্চের জাগরণের সঙ্গে তার কোনো তুলনা চল...

অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা

তোফায়েল আহমেদ: 'মার্চ' আমাদের স্বাধীনতার মাস। ১৯৭১-এর মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফেব্রুয়ারি যেমন আমাদের ভাষার মাস, মার্চ তেমনি আমাদের স্বাধীনতার মাস। '৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে '৭১-এর ছাব্বিশে মার্চ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি দিনই ছিল সংগ্রামমুখর। আর '৭১-এর মার্চ মাসের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বৈপ্লবিক। প্রতি বছর মার্চ মাস এলেই ম...

উত্তাল মার্চ ১৯৭১- বাংলার জনগণ ইয়াহিয়ার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে: বঙ্গবন্ধু

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দলমত নির্বিশেষে ঢাকার সব শ্রেণিপেশার মানুষ। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ইয়াহিয়া খান তার সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের ...

অস্ত্র সমর্পণের এক টুকরো স্মৃতিঃ মনোয়ার হোসেন

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করার পর বিরাজমান পরিস্থিতি কোনভাবেই প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলাও স্বাভাবিক জীবনের জন্য সহায়ক ছিল না। সর্বত্র শঙ্কা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা যেত। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় ছিল বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের ওপর নতুন সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকা। যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের কাছে যেমন ছিল বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, আবার যারা সরাসরি যুদ্ধ ...

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ঃ আত্মসমর্পণের আগের সেই মুহূর্তগুলো

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। সময় আনুমানিক সকাল ৯টা। ঢাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা তাদের দপ্তরে বসে বৈঠক করছিলেন একসঙ্গে। একটি চিরকুট এলো সেই সময়, চমকে দিল সবাইকে। বৈঠকে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি, মেজর জেনারেল জামশেদ, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, রিয়ার অ্যাডমিরাল শরিফ, ব্রিগেডিয়ার বকর সিদ্দিকী, সিদ্দিক সালিক ও আরও কয়েকজন। সেই চি...

সেদিনের অকুতোভয় তরুণরাই বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিঃ বাহালুল মজনুন চুন্নু

পঁচিশে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে যে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর গণহত্যা শুরু করেছিল, মৃত্যু-ধ্বংস-আগুন-আর্তনাদের বীভত্স খেলায় মত্ত হয়ে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, নয় মাস পর তার পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ষোলই ডিসেম্বর। লন্ডনের নিউ টাইমস পত্রিকায় সেই সময় বলা হয়েছিল, রক্তই যদি কোনো দেশের স্...

মানিকনগরের সেই মানিককে এখনো খুঁজে ফিরি

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনঃ তখন ডিসেম্বর মাস শুরু হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমণে সংকুচিত হয়ে ঢাকার দিকে ঘাঁটি গাড়ছে পাকিস্তানিরা। সেই সময় ঢাকায় একটি বড় ধরনের অপারেশনের পরিকল্পনা চলছিল। আমেরিকান ইনফরমেশন সেন্টার গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা  নেওয়া হয়। ওটা ছিল ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর একটি। আমি তখন বুয়েটে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গোপীবাগের ভাড়া বা...

তিন সেনাকে শেষ করে মুক্ত করি বাঙালি নারীদের

একাত্তরের মার্চে সামরিক পোশাক ছেড়ে ছেঁড়া লুঙ্গি পরে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন আবদুল জলিল খান। তাঁকে রাখা হয়েছিল এমন একটি ক্যাম্পে যেখানে বাঙালি নারীদের পাশবিক নির্যাতন করা হতো। একপর্যায়ে তিনজন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করে জলিল ওই নারীদের নিয়ে পালিয়ে আসেন। মানিকগঞ্জের বায়রা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল খান জানান, ১৯৬৯ সালে তিনি যোগ ...