পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনার আলোকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছেঃ প্রধানমন্ত্রী

461

Published on মার্চ 12, 2014
  • Details Image


তিনি বলেন, বর্তমান সরকার চলতি মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ ভুক্ত এ ৬টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলো- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট প্রজেক্ট, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট প্রকল্প, ঢাকা ‘মাস র্যা পিড ট্রানজিট’ উন্নয়ন (মেট্রো রেল) প্রকল্প, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, কক্সবাজার প্রকল্প ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সামশুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিগত মেয়াদে ‘রূপকল্প-২০২১’ দিন বদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সরকার গঠন করে। জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে বিগত মেয়াদে আমাদের সরকারের গৃহীত কর্মসূচির বাস্তবায়নের ফলে আমরা অর্থনেতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফলতা অর্জন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিকে মূল লক্ষ্য করে দেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মত দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প হিসেবে আমরা ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১)’ এবং মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে ‘ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছি। পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিশ্রুত অনেক উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ ইতোমধ্যে আমরা অর্জন করেছি, যার ফলে প্রবৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতির প্রধান প্রধান নির্দেশকসমূহের এবং একই সাথে সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ তার সাফল্য প্রদর্শনে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, সরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে বর্তমান সরকার অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জিডিপি ছিল চলতি বাজারমূল্যে মাত্র ১০০.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিগত ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব অনুয়ায়ী জিডিপির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬.১৮ শতাংশ (ভিত্তিবছর ২০০৫-০৬) এবং মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪৪ মার্কিন ডলার। ব্যক্তিখাতে পর্যাপ্ত পলিসি সাপোর্ট ও সরকারি খাতে উপযুক্ত প্রকল্প গ্রহণ ও সঠিক বাস্তবায়নের ফলে সরকারের বিগত মেয়াদের ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬.৭ এ উন্নীত হয়, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। বর্তমান সরকার বিগত মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণকালে এ হার ছিল ৫.৭ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৫ বছরে অর্থবছরের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৩৩ শতাংশ, যা বাংলাদেশের যে কোন সরকারের মেয়াদের তুলনায় বেশি। বর্তমান মেয়াদে চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে গৃহীত পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ও ব্যক্তিখাতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে এ বছরে অনুরূপ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সার্বিক বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় বিগত বছরগুলোতে জার্মানি ও ইন্দোনেশিয়ার সাথে কেবলমাত্র বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থা অব্যাহত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কতিপয় উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হলো- ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের দিকে উন্নত সুসভ্য দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ, ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য রেখার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য দৈনিক ন্যুনতম ২১২২ কিলোক্যালরি খাদ্যগ্রহণ ও জনসংখ্যার অন্তত ৮৫ শতাংশের জন্য মানসম্মত পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শিল্পখাতের অবদান ২৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করাসহ অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বর্তমান ১১ হাজার মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর বর্তমান হার ৬২ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২০২১ সালের মধ্যে সবার বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছানো, বাজেটের আকার বর্তমানে জিডিপি’র ১৮.৭ শতাংশ হতে ২০২১ সালে ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি, রাজস্ব আয়ের বর্তমান হার জিডিপি’র ১৪.১ শতাংশ হতে ২০২১ সালে ২০ শতাংশে উন্নীত করা।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বৃদ্ধি করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৮শ’ কোটি টাকায়। বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং প্রকল্প সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বিগত বছরগুলোতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন হার ছিল উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ ছিল ১০.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রেমিট্যান্স আয় প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাকিতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরের রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে ১৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এডিপি’র অধিক বাস্তবায়ন, রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি ছিল প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম প্রধান নিয়ামক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাফল্য অর্জিত হয়েছে। প্রজনন হার ২.৩ এ নেমে এসেছে, একই সময়ে নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৪৩ জনে এবং পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ৫৩ জনে নেমে এসেছে। মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে ১৯৪ জনে নেমে এসেছে। অধিকাংশ সামাজিক উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, বিশেষতঃ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে।
তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের পাশাপাশি অবকাঠানো উন্নয়ন বিশেষ করে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন, জ্বালানি খাতে অগ্রগতির ফলে দৈনিক ৬৮০ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযোজনসহ যোগাযোগ, পরিবহন ও বন্দর খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বি হয়ে খাদ্য ঘাটতির দেশ হতে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশের সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমসহ দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, উপমহাদেশের নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনও বাংলাদেশের সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষতঃ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সফলতার বিষয়টি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে উল্লেখ করেছেন। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সর্বশেষ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ পুনরায় সাউথ-সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র ৫ বছর সময়ে এত অধিক সংখ্যক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির ঘটনা আগে আর ঘটেনি।
সুত্রঃ বাসস

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত