বাংলাদেশ ও ভারত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেঃ প্রধানমন্ত্রী

461

Published on মে 11, 2014
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষনে এই কথা বলেন। তিনি তাদেরকে সারাদেশে বিদ্যমান স্লুইস গেটগুলোর প্রয়োজনীয়তার ওপর সমীক্ষা পরিচালনার এবং বর্তমান সরকারের নদী ড্রেজিং ও নদী শাসন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।

তিনি প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নদী শাসন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রবাহ অক্ষুণ্ন, নাব্যতার উন্নয়ন এবং বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণে আরো সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য এবং মাছ চাষ করার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী শাসন প্রয়োজন। তবে কোন অবস্থাতেই নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রবাহকে ব্যহত করা যাবে না।’

এ অঞ্চলের অভিন্ন নদ-নদীর পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনার সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ উদ্যোগে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ করতে হবে। অন্যথায় তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সূচনা বক্তৃতা করেন। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বীর প্রতিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ, পানি সম্পদ সচিব ডঃ জাফর আহমেদ খান এবং মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। গঙ্গা ব্যারেজ নির্মিত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নদীগুলোতে ২ হাজার ৯ শ’ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ধারণযোগ্য একটি বিশাল জলাধার সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, আবহমান কাল ধরে এ দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা পানিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে চার শতাধিক নদী প্রবাহিত আছে। এরমধ্যে ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে। যার ৫৪টি ভারত ও ৩টি মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ কারণে আমাদের পানি সম্পদের উন্নয়ন এবং মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য নদীর নাব্যতা বজায় রাখা, কৃষি, বাস্তুসংস্থান রক্ষা এবং লবণাক্ততা থেকে কৃষি জমি রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন’।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নদী ড্রেজিং ও বাঁধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।

দেশের জন্য বন্যারও প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা পলি বহন করে আনে এবং আবাদী জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদনের জন্য কখনও কখনও বন্যা হওয়া দরকার।

তিনি বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষদের উচু স্থানে বসতবাড়ি তৈরির পরামর্শ দিয়ে বলেন, নদী ভাঙ্গণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ শুধু বাঁধ দিয়ে সম্ভব নয়, জলাধার তৈরি করতে হবে। এ জন্য তাঁর সরকার নদী ড্রেজিং অব্যাহত রেখেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বড় নদীগুলো প্রতি বছরই নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে। এতে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানি ধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ড্রেজিং অব্যাহত রাখার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও চাষাবাদে পানির সংকট উভয়ই দূর হয়। তিনি বলেন, তাঁর সরকার নিয়মিত ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ঠিক রাখছে। যমুনা নদীতে ক্যাপিটাল পাইলট ড্রেজিংয়ের ফলে সিরাজগঞ্জে প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। গড়াই নদী ড্রেজিংয়েও প্রচুর ভূমি উদ্ধার হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধান ৩০টি নদীর উপর সমীক্ষার কাজ শেষ হলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ লক্ষ্যে ১১টি ড্রেজার ক্রয় করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে পুংলী, তুরাগ, কালনী-কুশিয়ারা, কপোতাক্ষ, চন্দনা বারাসিয়া ও জুরি নদীর মোট ১৯৮ কিলোমিটার ড্রেজিং শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে আরও ৩৮ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং কার্যক্রম।

শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, গত পাঁচ বছরে পানিসম্পদ খাতকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধ, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পরিবেশের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ৬০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণের ফলে লবণাক্ত পানির কবল থেকে সে সকল এলাকা রক্ষা পাচ্ছে। জেগে উঠা চরের জমি ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ভূমিহীন পরিবারকে জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। ৩০ হাজার ৭৭০ হেক্টর উপকূলীয় এলাকায় জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বাঁধ নির্মাণ ও পানি ব্যবস্থাপনা গ্রুপ গঠনের কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কুষ্টিয়া, রাজশাহী, গাইবান্ধা, জামালপুর, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মনবাড়ীয়া ও সুনামগঞ্জ শহরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, সিলেট, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, বাগেরহাট, নরসিংদি ও পটুয়াখালী শহর রক্ষার কাজ চলছে। ২৪ কিলোমিটার সীমাস্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি ব্যবস্থাপনা এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভারত-ভূটান-বাংলাদেশ এবং ভারত-নেপাল-বাংলাদেশ ত্রি-পক্ষীয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা যে কোন মূল্যে নদী রক্ষার ওপর জোর দেন। এ লক্ষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এর সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সংগে দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেন।

সুত্রঃ বাসস

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত