যুক্তরাজ্যের সংসদে অনুষ্ঠিত উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

15

Published on জুলাই 19, 2025
  • Details Image

১৫ই জুলাই ২০২৫ তারিখে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ-পর্যায়ের সংসদীয় বৈঠকে বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান এবং বাংলাদেশ ইউনিটি ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আইনি ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সরকারের মধ্যে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা এবং দেশের গভীর সাংবিধানিক সঙ্কটের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

বব ব্ল্যাকম্যান এমপি (হাররো ইস্ট) সভাপতিত্বে এই প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন এসএনপি এমপি মার্টিন ডে, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম এবং মানবাধিকার বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি। বক্তারা বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সহিংসতার আশংকাজনক বৃদ্ধি, বিচারিক প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার, এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে নিশ্চিহ্ন করতে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহারের বিষয়ে —বিশেষ করে আওয়ামী লীগের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

উদ্বেগজনক বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ছিল সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) জমা দেওয়া ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদের চিঠি, যেখানে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মব সহিংসতায় প্ররোচনা এবং অপরাধীদের ব্যাপক দায়মুক্তির ধরণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বক্তারা জোর দিয়ে বলেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু, সাংবাদিক, আইনজীবী এবং সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে যুক্তদের উপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়েছে এখানে জ্যেষ্ঠ বিচারক এবং বিরোধী পক্ষের আইনজীবীদের অপসারণ করা হয়েছে অথবা তাদের নিষ্ক্রিয় ও চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে। অধিবেশনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করা হয়েছে, যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে এটি ন্যায়বিচারের জায়গা হিসেবে নয় বরং রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বৈঠকে বলা হয় আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এবং
সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহার করে দলটিকে নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চরম লঙ্ঘন। বৈঠকে বলা হয়, এর ফলে কোটি নাগরিককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এবং এটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ৫৭, ৫৮, এবং ৫৯-কে লঙ্ঘন করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অস্থায়ী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেও এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে। বৈঠকে আরও বলা হয়েছে যে রাজনৈতিক দলের নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বিশ্বব্যাপী হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের বেশ কয়েকজন স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ারের কাছে একটি পৃথক চিঠি জমা দেওয়া হচ্ছে।

বক্তারা সতর্ক করেছেন যে, যে বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ ছাড়া অনুষ্ঠিত যে কোনো নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে বৈধ হবে না।

বৈঠকের শেষে বক্তারা বলেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ক ড. ইউনুসের কাছে স্বাধীন, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে দাবি জানাতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে আইনগত অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।⁩

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত