সময়মতো পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী

474

Published on জুলাই 6, 2014
  • Details Image

‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক তোলপাড় হয়ে গেলো। এটা নিয়ে অন্য উদ্দেশ্য ছিলো। কোন কারণ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট তার শেষ কার্য দিবসে এদেশের একটি মহলের প্ররোচণায় পদ্মা সেতুর বরাদ্ধ বন্ধ করে দেন” বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চরাই-উতরাই পার হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মা সেতু নির্মাণের সকল প্রস্তুতি শেষে এর বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণে চায়না মেজর ব্রীজ কোম্পানি লিমিটেডের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। এ কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। সেতুর উভয় পাড়ের নদী শাসন কাজের আর্থিক দরপত্রের মূল্যায়ন চলছে।

প্রধানমন্ত্রী আজ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ধারাবাহিক পরিদর্শনের অংশ হিসেবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এ বক্তব্য রাখেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা যে কাজটি শুরু করেছি তা যেন ভালোভাবে করতে পারি সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলে একটা ব্রীজ বানাতে কেন পারবো না। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এখন রির্জাভ ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার থেকে এক দুই বিলিয়ন খরচ করলে সমস্যা হবে না।

পদ্মা পাড়ে হংকং-এর মতো শহর নির্মাণ করা হবে। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মেলা সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু রাস্তা তৈরি করাই নয়- তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ হয়। কোন রাস্তা কতটুকু ব্যবহার হবে, প্রতি সেকেন্ডে গত গাড়ি চলবে, কতটুকু যানবাহন ধারণ করবে সে হিসেবে প্লান-প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ি থাকলে রাস্তা ঘুরিয়ে নিতে হবে এ রকম একটি প্রবণতা আছে। অল্প জায়গায় রাস্তা তৈরি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অনেক সময় তা ঘুরিয়ে নেয়া হয়। এ মানসিকতা বাদ দিতে হবে।

উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য প্রতিবছরই বাজেট বরাদ্দ থাকে। এবারো যোগাযোগ খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বর্ষা, রোজা এবং ঈদকে সামনে রেখে উন্নয়ন কাজ একেবারে বন্ধ না করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যাতে চলাফেরার সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে নজর দিতে হবে। হাতের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

দেশের উন্নয়ন করতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা-কুনমিং পর্যন্ত বিসিআইএম ইকোনমিক করিডোর চীন-মিয়ানমারের সঙ্গে হচ্ছে। এতে বাণিজ্যের প্রসার হবে।

‘আমরা পায়রা বন্দর করেছি। আরো বন্দর আছে। আমাদের পোর্টগুলো যাতে তারা ব্যবহার করতে পারে তা নিয়ে নেপাল-ভুটানের সাথে আলোচনা হচ্ছে। ভুটান যদি সৈয়দপুরের এয়ারপোর্টটি ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতির উন্নতি হবে তাদের ভালো হবে’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশের সড়ক যোগাযোগ খাতের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এ খাতের উন্নয়ন ও নিরাপদ পরিবহণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘জাতীয় সমন্বিত বহু মাধ্যমভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা-২০১৩’, ২০ বছর মেয়াদি ‘রোড মাস্টার প্লান’ এবং ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্রাটেজিক এ্যাকশান প্লান ২০১১-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।

জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার সব সময়ই দেশের যোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বাজেটে সড়ক বিভাগে ৬,৮৬৪.০৮ কোটি এবং সেতু বিভাগে ৮,৭৩৫.২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে যোগাযোগ খাতে সরকারের দেয়া নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে টেকসই, নিরাপদ ও মানসম্মত সড়ক অবকাঠামো এবং আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৪৬টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি প্রকল্পের কাজ চলছে।

চলতি অর্থ বছরে মেট্রোরেল, ২য় কাঁচপুর, ২য় মেঘনা ও ২য় গোমতী সেতু নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণ, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা জাতীয় মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ এবং ইস্টার্ণ বাংলাদেশ ব্রীজ ইম্প্র“ভমেন্ট প্রকল্পসহ ১২১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এর অধীনে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মাস রেপিড ট্রানসিট লাইন-৬ বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। মন্ত্রিসভায় মেট্রোরেল আইন ২০১৪ নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে”।

শুধু সড়ক বিভাগের আওতায় গত পাঁচ বছরে সারাদেশে ১ হাজার ২৬৬ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ এবং প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করাসহ প্রায় ৪৩ হাজার মিটার কংক্রিট সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার-নবীনগর অংশ চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। এ অর্থ বছরেই জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরীপ শেষ হয়েছে। ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশে প্রথম এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, এটি নির্মিত হলে কর্ণফুলী নদীর অপর প্রান্তে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরের সাথে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং এটি এশিয়ান হাইওয়ের সাথেও সংযুক্ত হবে।

এছাড়াও হজরত শাহজালাল আর্ন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ৪৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজও আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শুরু করা যাবে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

২০০৯ সালে সরকারে এসে বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার আমরা সরকারে আসার পর বিআরটিসি’র জন্য বিভিন্ন ধরণের ৯৫৮টি বাস সংগ্রহ করেছি। এখন ১ হাজার ৫৪৩টি বাস জনগণের সেবায় নিয়োজিত আছে। আমরা আরও ৩০০টি দ্বিতল বাস ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস ও ৫০০টি ট্রাক সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ফলে বিআরটিসি’র রাজস্ব আয় ও নীট অপারেটিং প্রফিট ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আরও এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ আজ পরমুখাপেক্ষী নয়। আমরা উন্নয়নের মডেল। তিনি সবাইকে দেশের কল্যাণে নিবেদিত হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বিনির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করা হবে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত