বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ‘গার্ল সামিট’ এ তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী

1309

Published on জুলাই 19, 2014
  • Details Image

বিশ্বে বাল্যবিবাহ রোধে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে যুক্তরাজ্য সরকার এই প্রথমবারের মতো গার্ল সামিটের আয়োজন করেছে। 

ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে আগামী মঙ্গলবার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আমন্ত্রণে এই গার্লসামিটে যোগ দিতে সোমবার সকালে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

ব্রিটিশ সরকার এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল, ইউনিসেফ যৌথ উদ্যোগে এ গার্ল সামিটের আয়োজন করেছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে ব্রিটেন প্রধানমন্ত্রী দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী সামিটের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে অংশ নিবেন। যার মধ্যে ওয়ালওয়ার্থ একাডেমীতে অনুষ্ঠেয় প্রশ্নোত্তর পর্বে বুরকিনা ফাসোর ফার্স্ট লেডি এবং পাকিস্তানের বিখ্যাত শিশু শিক্ষাকর্মী মালালা ইউসুফজাই এর সাথে অংশগ্রহণ করবেন। এই পর্বের সঞ্চালনা করবেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক এন্থনি লেক।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক এন্থনি লেক এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে গার্ল সামিট বিষয়ে মতবিনিময় এবং সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করবেন।

গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় সরকার গঠনের পর ইউরোপের কোন দেশে শেখ হাসিনার এটি প্রথম সফর।

শেখ হাসিনা আগামী বুধবার স্বদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আগামী বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যাওয়া বাল্যবিবাহ সমাজ থেকে চিরতরে উচ্ছেদের নতুন পথ ও পাথেয় খুঁজে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে এবং দক্ষিণ এশিয়য়ার কোথাও কোথাও প্রচলিত মেয়েদের খতনা বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম) প্রথার বিলোপ সাধন এবং জোর করে বিয়ে দেয়া বন্ধের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশে মেয়েদের খতনার কোন প্রচলন না থাকলেও বাল্যবিবাহ বন্ধে বর্তমান সরকার অনেক আইনগত সংস্কার করেছে। এতে করে দেশে বাল্যবিবাহ দ্রুত কমে আসছে।

সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালে বাল্যবিবাহের যে হার ছিল, ২০১৪ সালে এসে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। উলে­িখত সালে দেশে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১০ সালে তা কমে ২৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০১৩ -১৪তে তা ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

বাল্যবিবাহ বন্ধে জাতীয় সংসদে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন (খসড়া) ২০১৩-এর সংশোধনী আইন পাস হয়েছে। স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয় বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের ৪শ’ উপজেলায় ৪শ’ কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠন করেছে। এছাড়া অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সারাদেশে আরও তিন হাজার এ ধরনের ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবে বাল্যবিবাহের খারাপ দিক নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করা হয়। এছাড়া স্কুল বা কলেজ থেকে ঝরেপড়া প্রায় ১০ হাজার কিশোরীকে বৃত্তিমূলক কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। শিশুদের জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধি ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার ও প্রচারণা। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির আওতায় প্রচার ও প্রচারণা পরিচালিত হচ্ছে।

বাল্যবিবাহ আইনে বলা হয়েছে ‘কোন ব্যক্তি বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠান বা পরিচালনা করিলে সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় হইবে, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, বিবাহটি বাল্যবিবাহ ছিল না বলিয়া বিশ্বাস করিবার মত যথেষ্ট যুক্তি ছিল।

এ ছাড়াও একুশ বৎসরের অধিক বয়স্ক কোন পুরুষ বা আঠার বৎসরের অধিক বয়স্ক নারী কোন শিশু বা নাবালকের সহিত বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি করিলে সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় হইবে।’

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকার গৃহিত পদক্ষেপগুলো সঠিক পথেই পরিচালিত হচ্ছে। এভাবে এগুতে থাকলে সরকারের ভিশন-২০২১ সফল হবার মাধ্যমে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তিতে ১৫ বছরের কম বয়স্ক কোন নারীর বিয়ে বন্ধ হবে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত