শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরো কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করুনঃ ডিসিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

606

Published on জুলাই 26, 2016
  • Details Image

আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘সরকারি সেবা গ্রহণে মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

সম্মেলনে অংশ নেয়া ৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও ৮ বিভাগীয় কমিশনারকে ১৯ দফা কাজের দিক-নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

একইসঙ্গে তিনি জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ জেলা এলাকায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি গড়ে তুলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘একদম তৃণমূল থেকে কমিটি গড়ে তুলে যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে বের করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রসাশন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। সূচনা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারগণ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তৃতা করেন- চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মেজবাহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক রাজবাড়ি বেগম জিনাত আরা, জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ শেখ রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমদ।

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ১৯টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে পরিত্রাণের জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্রতী হতে হবে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব প্রদানের তিনি আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার হ্রাস এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাকে জনপ্রিয় করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

পরিবেশ রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলী, ২০১০ অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে।

শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘেœ করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যে কোন অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সুযোগ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশু-কিশোরদের মধ্যে ইতিহাস চেতনা, জ্ঞানস্পৃহা ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, নারী উন্নয়ন নীতি, ২০১১ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ এবং নারী ও শিশু পাচাররোধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশানকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, কঠোরভাবে মাদক ব্যবসা, মাদক চোরাচালান এবং এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমানে যে সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে সেটা সন্ত্রাসি ও জঙ্গিবাদি কর্মকান্ড। যদিও এটা নতুন না, আপনাদের মনে থাকা উচিত দেশে একইদিনে ৫শ’ জায়গায় বোমা হামলা হয়েছে, গোপালগঞ্জে আমার সমাবেশস্থলে ৭৬ কেজির বোমা পুঁতে রাখা হয়েছে, আমার ওপর গ্রেনেড হামলাসহ বেশ কয়েকবার হত্যা প্রচেষ্টায় হামলা হয়েছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া’সহ আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৩-’১৪ সালে মানুষ হত্যা করা। ২০১৫’র জানুয়ারি থেকে মার্চ তিনটি মাস সন্ত্রাস, তান্ডব ও আগুন সন্ত্রাসীদের কবল থেকে শিক্ষক, নারী-শিশু কেউ বাদ যায়নি। নির্মম সন্ত্রাসের শিকার হয়ে অনেকেই পোড়া শরীর নিয়ে ভয়াবহ জীবন যাপন করছে।

তিনি জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সকলের সহযোগিতায় আমরা এই সন্ত্রাস থেকে মুক্ত হতে পেরেছি। আপনারা জেলায় জেলায় ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বলেই আমরা এই সন্ত্রাসকে প্রতিহত করতে পেরেছি। সমস্যা একক প্রশাসনিক প্রচেষ্টায় মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সম্মিলিতভাবে সমাধান করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, সারাদেশে জঙ্গিবাদ বিরোধী ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে, এটিকে কাজে লাগাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসক-বিভাগীয় কমিশনারদের নিজ নিজ এলাকায় চলমান জঙ্গি-সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের কাজে মূল ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে নানা ধরনের সন্ত্রাসি ঘটনা ৭৫’র পর থেকে বার বার ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু, ইদানিং যেটা শুরু হয়েছে আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলামকে নিয়ে.. ধর্মের নাম নিয়ে মানুষ খুন করা। কত নৃশংসভাবে হত্যা করা যা কল্পনাও করা যায় না। কাজেই যে উপসর্গ দেখা গেছে একে যে কোনভাবে হোক মোকাবেলা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলা, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার হামলার ঘটনা উল্লেখ করে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এসব ঘটনা মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর ত্বরিৎ পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে কল্যাণপুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের বড় ধরনের নাশকতার ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করে দেওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন।

রাজধানীর কল্যাণপুরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেয়ার ফলে একটা বিরাট, ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে’।

কল্যাণপুরের ঘটনায় নিহত সন্ত্রাসীরা নাশকতা ঘটানোর জন্য তৈরি ছিলো বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কল্যাণপুরে সন্ত্রাসীরা ঘটনা ঘটাবে বলে প্রস্তুতি নিয়েছিলো। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেখানে অপারেশন করা হয়। অভিযানে কয়েকজন সন্ত্রাসী মারা গেছে, একজন আহত অবস্থায় আটক হয়েছে, একজন পালিয়ে গেছে’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে। মানুষের জীবন নিরাপদ করতে হবে। আমরা চাই না আমাদের দেশটা সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হোক।’

জঙ্গি তৎপরতার সাথে অনেক শিক্ষিত এবং ইংলিশ মিডিয়াামে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কল্যাণপুরে আজকের অপারেশনে যারা নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যেও অনেকেই শিক্ষিত বলে জানা গেছে।’

সন্ত্রাস মোকাবেলায় জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৃণমূল থেকে সন্ত্রাস বিরোধী কমিটি গঠন করে কোথায়, কারা সন্ত্রাস করছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে কোমল মতি শিক্ষার্থীরা যেন সঠিক শিক্ষা পায় সে জন্য শিক্ষক, অভিভাবকদের সহায়তা করা।’

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস মোকাবেলায় জেলা প্রশাসকদের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে। সর্বোচ্চ মেধা, শ্রম, ঐক্য নিয়ে এই সন্ত্রাসকে রুখতে হবে।’

সকল বাধাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুযোগ মোকাবেলা করতে হয়। অনেক সময় মনুষ্যসৃষ্ট দুযোগ মোকাবেলা করতে হয়। দুই দুর্যোগ মোকাবেলা করার সক্ষমতা আমাদের আছে।’

উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সবাইকে নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। সে জন্য আমাদের স্ব স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি এলাকার মানুষের জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগুক। লক্ষ্য দেশে কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না। ক্ষুধার্ত থাকবে না, বিনে চিকিৎসায় মারা যাবে না, উন্নত শিক্ষা-চিকিৎসা পাবে। প্রতিটি ছেলে মেয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী গৃহহারা মানুষের তালিকা তৈরির পাশাপাশি, খাজ জমি খুঁজে এসব মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এসব মানুষের জীবন মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে বলেন।

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তার সঙ্গে উন্নয়নের কাজগুলো যথাযথ ভাবে হচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, কেউ না খেয়ে থাকবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হয়েছি, জনকল্যাণমুখী প্রশাসন গড়ে তুলছি। এখন ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়বো’।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে কেন্দ্রীয় সরকারে বাঙালিদের সঙ্গে বৈষম্য করা হতো, উচ্চপদে বাঙালি কর্মকর্তা ছিলেন অনেক কম। অথচ উৎপাদন ও রফতানি আয়ের সিংহভাগ পূর্ব পাকিস্তানে হতো’।

শেখ হাসিনা বলেন,‘এ বৈষম্য দূর করে অধিকার আদায়ে জাতির পিতা ২৩টি বছর সংগ্রাম করেন, আন্দোলন করেন। এজন্য কারাবরণ করতে হয় তাঁকে, ফাঁসিতে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়’।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশ ছিল ধ্বংসস্তুপ। দীর্ঘ তেইশ বছরের শোষণ, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে এদেশে এমনকি কোনো রিজার্ভ মানিও ছিলো না। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই স্বাধীন বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে উন্নয়নের পথে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে- জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা এবং আমরা সেটাই করবো’।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। চলতি অর্থবছরে আমরা ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছি। গত অর্থবছরে ৭.০৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আজ বিদ্যুতের লোডশেডিং নেই। খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারিত করেছি’।

এসব উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রতি আহ্বান জানান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘জেলা প্রশাসক হিসেবে আপনারাই সেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি বীরের জাতি। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে আমরা এগিয়ে চলি। আমাদের সামনে যে বাধা তা মোকাবেলা করেই আমরা সামনে এগিয়ে যাবো। কেউ আমাদের অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।

সংবাদঃ বাসস
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত