ভদ্র ও উদার রাজনীতির আদর্শঃ ড. মুহম্মদ মনিরুল হক

7381

Published on মার্চ 20, 2018
  • Details Image

 

মো. জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ ভৈরব পৌরসভার ভৈরবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে জিল্লুর রহমান যখন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি তখন গণভোটের রায় পাকিস্তানের পক্ষে আনার লক্ষ্যে ৫১ সদস্যের একটি ছাত্র প্রতিনিধি দল নিয়ে সিলেট সফর করেন। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাত্ হয়। জিল্লুর রহমান বলেন, “আমি অন্যদের সঙ্গে নিয়ে মুজিব ভাইয়ের পাশে যাই। তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করি, তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা ও কথা হবার পর থেকে সক্রিয় রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় এবং তখন থেকেই মূলত রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে প্রবেশ করি।”

 

১৯৫৩ সালে ফজলুল হক হলের ভিপি, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান, ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ১৯৬০ সালে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ জিল্লুর রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের। ১৯৭০-এর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের (এমএনএ) সদস্যসহ মোট ছয়বার তিনি ভৈরব-কুলিয়ারচর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু এবং ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা যখন সভাপতি তখন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান গুরুতর আহত হন এবং ২৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৬ সালে দেশে জরুরি আইন জারি হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়। অন্ধকারে পতিত হয় দেশের সংসদীয় রাজনীতি। এ সময়ে রাজনীতির নতুন আলোর প্রদীপ নিয়ে আবির্ভূত হন জিল্লুর রহমান। তাঁর সহজ-সরল আচরণ, নেতা ও নেতৃত্বের প্রতি দৃঢ় আস্থা, অনুজ নেতৃত্ব-কর্মী ও জনগণের প্রতি ভালোবাসা, রাজনীতি ও সামাজিক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের কলা-কৌশল এবং সর্বোপরি অবিচলতা এদেশের রাজনীতির মানুষকে নতুন দীক্ষায় প্রজ্জ্বলিত করে। রাজনীতির এ সংকটে তিনি কোনো দল-জোটের না হয়ে, হয়ে উঠেছিলেন গোটা রাজনীতি পুনরুদ্ধারের বাতিঘর।

 

জিল্লুর রহমান ২০০৯ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ২০১৩ সালের ২০ মার্চ, এই মহান নেতার জীবনাবসান হয়। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। বিরোধী দলীয় নেতাসহ দল-মতনির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ জিল্লুর রহমানের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান এবং শোক কর্মসূচি পালন করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ইতিহাসে এটি একটি অনন্য উজ্জ্বল ঘটনা।

 

রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও জীবনাচরণে জিল্লুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও মার্জিত। তার বর্ণাট্য জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন থেকে পাওয়া যায়, পরমত সহিষ্ণুতা, ভদ্রতা, স্নেহ-ভালোবাসা ও আনুগত্যের বৈশিষ্ট্য। প্রবল ক্ষমতার সময়েও তাঁর আচার-আচরণে স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ পায়নি। তাঁর রাজনৈতিক দীক্ষা, আচার-আচরণ ও মহানুভবতা হতে পারে উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের পথপ্রদর্শক। এ মহান নেতার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
 
সৌজন্যেঃ ইত্তেফাক 
 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত