প্রত্যেক জেলায় এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হবেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

8955

Published on এপ্রিল 4, 2018
  • Details Image
    বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ষষ্ঠ জাতীয় এসএমই মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবিঃ পিআইডি)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের বিকাশে প্রত্যেক জেলায় এবং উপজেলায় এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ পরামর্শ কেন্দ্রগুলো এসএমইর প্রসারে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে কাজ করবে। উদ্যোক্তারা ব্যবসা স্থাপন থেকে শুরু করে ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যবসায়িক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সহায়তা, পরামর্শক সেবা ইত্যাদি এই ওয়ানস্টপ সেন্টার থেকে গ্রহণ করতে পারবে।

তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্তকরণ এবং পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। 

৪ঠা এপ্রিল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ষষ্ঠ জাতীয় এসএমই মেলার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির লিখিত ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণ প্রদান করেননি। এর পরিবর্তে তার ভাষণের লিখিত কপি অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঠাণ্ডা লেগে প্রধানমন্ত্রীর গলা বসে গেছে। 

এ কারণে অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যের অংশবিশেষ পড়ে শোনান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে এসএমইর গুরুত্ব অপরিসীম। এসএমই সবচেয়ে শ্রমঘন ও স্বল্পপুঁজিনির্ভর খাত হওয়ায় এর মাধ্যমে স্বল্পপুঁজি বিনিয়োগে অধিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে তার সরকার 'জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬'-তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শিল্প উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গণ্য করেছে। তার সরকারের গৃহীত কর্মসূচির ফলে দেশব্যাপী টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের দ্রুত প্রসার ঘটছে। উদ্যোক্তাবান্ধব নীতির কারণে প্রতিনিয়ত নারীরা ব্যবসায় মনোনিবেশ করছে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অনেক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে ১৯৯টি দেশে ৭৫০টি পণ্য রফতানি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানি, নকশিকাঁথা এবং সিলেটের শীতলপাটি এরই মধ্যে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। উদ্যোক্তারা এসব পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে পারেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পণ্যের বাজার অনুসন্ধান এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেসব পণ্য উৎপাদন করতে হবে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের ওপর রফতানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের এখন রফতানি বহুমুখীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

সরকারপ্রধান আশা প্রকাশ করেন, এসএমই মেলা দেশে উৎপাদিত এসএমই পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রেতা আকর্ষণ ও বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ ধরনের মেলা আয়োজনের মাধ্যমে এসএমই খাতের অনেক সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হবে এবং যথাযথ স্বীকৃতি পাবে।

অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সভাপতিত্ব করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, শিল্প সচিব মো. আবদুল্লাহ এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন কে এম হাবিবুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সফল এসএমই উদ্যোক্তাদের মাঝে পুরস্কারও বিতরণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। 

পাঁচ দিনব্যাপী ষষ্ঠ জাতীয় এসএমই মেলায় সারাদেশ থেকে আসা ২৬৭টি এসএমই প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করবে। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশই নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান। মেলা চলবে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত।

মহিলা শ্রমিক লীগ নেতাদের সাক্ষাৎ : মহিলা শ্রমিক লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সংগঠন আরও শক্তিশালী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মহিলা শ্রমিক লীগের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে খুব বেশি কথা বলতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকে তো আমি বক্তৃতা দিতে পারব না, আমি শুনব। আমি তো সব সময় বলি, সবাই শুনতে পারে; কিন্তু আমার শোনা তো হয় না। আমি প্রত্যেক জেলা প্রতিনিধির কাছ থেকে শুনব। ঠাণ্ডা লেগে গলা একদম বসে আছে।

মহিলা শ্রমিক লীগ সভাপতি রওশন জাহান সাথীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার আক্তার চৌধুরী, কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিউটি আক্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন। 

এর আগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং জেলা কমিটির নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত