থাকছে না কোটা, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

1314

Published on এপ্রিল 11, 2018
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বুধবার সংসদে এক বিবৃতিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ভোগান্তি ও গোলযোগ বন্ধে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হলো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ অফিস-আদালতে যেতে এবং কাজকর্ম করতে পারছে না। সব জায়গাতেই এ অবস্থা বিরাজ করছে। জেলায় কোটা আছে। কিন্তু সেই জেলায় যে ইউনির্ভার্সিটি রয়েছে সেখানেও তারা রাস্তায় নেমে যাচ্ছে। যখন জেলায় যারা তারাও কোটা চায় না, তারাও রাস্তায় নেমে গেছে। যখন কেউ-ই চায়না, তখন কোন কোটাই থাকবে না, কোন কোটারই দরকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘কোন কোটার দরকার নেই। ঠিক আছে, বিসিএস যেভাবে পরীক্ষা হচ্ছে সেভাবে মেধার মাধ্যমে সব নিয়োগ হবে। এতেতো আর কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। আর যারা প্রতিবন্ধী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবো। তারাও জয়েন্ট করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা কোটায় সুযোগ পাচ্ছে তারাওতো মেধাবী, সেখানেও তো মেধা থেকেই নিয়োগ হচ্ছে। কাজেই তাদের মেধাকেও যদি আমরা ধরি, তাহলে দেখা যাচ্ছে শতভাগই মেধাবী নিয়োগ পাচ্ছে। তারপরও আন্দোলন চলছে, তারা রাস্তা বন্ধ করে রাখছে। এমনিই যানজট, তার ওপর তীব্র যানজট। রোগী যেতে পারছে না হাসপাতালে। দেখা যাচ্ছে গাড়িতেই মারা যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এক সম্পূক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।

সংসদ নেতা বলেন, ‘আমি ছাত্রদের বলবো- তারা তাদের আন্দোলন অনেক করেছে। এখন ক্লাসে ফিরে যাক, যারা ভিসির বাড়ি ভেঙ্গেছে এবং লুটপাট করেছে, সেই লুটের মাল কোথায় আছে, কার কাছে আছেÑ ছাত্রদেরই তা খুঁজে বের করে দিতে হবে। সেই সাথে যারা এই ভাংচুর লুটপাটের সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে।’

সরকার প্রধান এ সময় তদন্তে সহায়তার জন্য ছাত্র-শিক্ষক সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, এত বড় অন্যায় আমরা কোনভাইে মেনে নিতে পারিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেও তাঁর শিক্ষকদের এখনও সন্মান করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুরুজনকে অপমান করে শিক্ষা লাভ করা যায় না সেটা প্রকৃত শিক্ষা হয় না।’

আন্দোলকারীদের একটি অংশ ছাত্রীদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রীরাও কোটা তুলে দেয়ার কথা বলছে, আমিও আশ্বস্ত হলাম তাদেরও কোটার দরকার নেই।

সংসদ নেতা এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনাতেও আন্দোলকারী ছাত্রীরা বলেছে তাদেরও কোটার প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, ছাত্রীরা বলেছে তারা পরীক্ষা দিয়েই চাকরি পাবে। ভালো কথা, আমি খুশী। তারাও কোটা চায় না। তারা যেহেতু কোটা চায় না তখন এর কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে। এই কোটা পদ্ধতিরই কোন দরকার নেই।

ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির শিক্ষা গঠনমূলক কাজে ব্যবহার না হয়ে তা গুজব ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলেও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একজন ছেলের মাথায় আঘাত লেগেছে আর একজন হঠাৎ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিল সে মারা গেছে। আর সঙ্গে সঙ্গে ছেলে-মেয়ে সব বেরিয়ে গেলো। এমনকি মেয়েরা, রাত্রি একটার সময় হলের গেট ভেঙ্গে মেয়েরা বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়। শুধু একটা গুজবের ওপর। যদিও সে ছেলেই পরে বলেছে, আমি মরি নাই। এরপর যদি কোন অঘটন ঘটতো তার দায়িত্ব কে নিতো। আর সব থেকে ন্যক্কারজনক ভিসির বাড়িতে আক্রমণ। এটি কোন ছাত্রদের কর্ম হতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিসির বাড়ির হামলার ছবি দেখে মনে হয়েছিল ওই ’৭১ সালে পাকিস্তান হানাদর বাহিনী আমাদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেভাবে হামলা করেছিল- ভাংচুর করেছিল ঠিক একই কায়দায়- এমনকি সমস্ত লকার খুলে গহনা-গাটি চুরি করা, টাকা পয়সা চুরি করার থেকে শুরু করে, টয়লেটের কমোড খুলে রাখা- সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার করে দেওয়া, এমনকি সিসি টিভির বক্সটা পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে কত পরিকল্পিত এই ঘটনা। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার উপযুক্ত নয়। বা তারা এখানকার ছাত্র বলে আমি মনে করি না। কারণ, কোনো শিক্ষার্থী তার শিক্ষককে এভাবে অপমান করতে পারে না, আঘাত করতে পারে না,এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বলেন, তারা দাবি জানিয়েছে কিন্তু আমরাতো বসে নেই। সোমবার কেবিনেট মিটিং সেখানে বসে আমরা বিষয়টা আলোচনা করলাম। তিনি বলেন, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবে বলা হলো এবং তাদের সঙ্গে বসলেন, সেই সাথে সাথে আমি আমাদের কেবিনেট সচিবকে নির্দেশ দিলাম আপনি এটা (কোটা সংস্কারের বিষয়টি) পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন, যাকে যাকে দরকার তাকে নিয়ে বসে ওরা (আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা) যেই দাবিটা করেছে এর যৌক্তিকতা কি এবং এর কতটুকু কি করা যায়।

সেতুমন্ত্রী এবং অন্দোলনকারীদের বৈঠকে একটি সমঝোতা হলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সমঝোতা হলো এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব কেবিনেট নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় বলেও দিলেন- প্রধানমন্ত্রী এটা (কোটা সংস্কারের বিষয়টি) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য বলেছেন।

এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে মেনে নিল অনেকে মানলো না, সারারাত অনেক ছাত্র-ছাত্রী টিএসসি এলাকায় থেকে গেলো।

যখন আলোচনা হচ্ছে তখন এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিসির বাড়ি ভাঙ্গা, রাস্তায় আগুন দেওয়া এমনকি পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য চারুকলার অভ্যন্তরে ইউনেস্কোর বিশ্ব হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার সবকিছু ভেঙ্গে আগুন জ্বালিয়ে দেয়ারও কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে। আর মেয়েদেরও এভাবে হল থেকে বেরিয়ে আসার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে জানতে চেয়ে সে রাতে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি তখন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে সেখানে পাঠানোর এবং ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করান বলেও জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কিন্তু একবার নয় এ ধরনের কোটা সংস্কারের দাবি আরো বারবার এসেছে এবং সংস্কার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। আমাদের ছেলে-মেয়ে- যারা আন্দোলনকরী তারা অনেকেই আমার নাতির বয়েসি তাদের কিসে মঙ্গল হবে না হবে, তা কি আমরা কিছুই বুঝি না। তিনি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে এই কোটা পদ্ধতি চলছে। সময় সময় সংস্কার করা হয়েছে। কোটা যাই থাক, তার সরকার কিন্তুু সবসময় মেধাবীদের অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং কোটার শূন্যপদ মেধা তালিকা থেকেই পূরণ করেছে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সময়ে মেধাভিত্তিক নিয়োগের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় মেধাভিত্তি নিয়োগ হয়েছে ৭৭ দশমিক ৪০ ভাগ, ৩৫তম বিসিএস-এ নিয়োগ পেয়েছে ৬৭ দশমিক ৪৯ ভাগ, ৩৬তম বিসিএস-এ পেয়েছে ৭০ দশমিক ৩৮ ভাগ।

তিনি এই দৃষ্টান্ত তুলে বলেন, মেধাবীরা কিন্তুু কেউ বাদ যায়নি। সেই সাথে যেখানে কোটায় পাওয়া যাবে না সেখানে মেধাভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত তিনিই প্রদান করেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিসিএস পরীক্ষা যারা দেয় তারা সকলেই মেধাবী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি ওই কোটাতেও যারা তারাও সকলে এক সঙ্গেই পরীক্ষা দেয় এবং লিখিত পরীক্ষায় সকলকেই কৃতকার্য হতে হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দাবিনামায় অস্পষ্টতা রয়েছে, যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপকও একই সুরে কথা বলছেন। শেখ হাসিনা বলেন, কোন শ্রেণী যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই, যেখানে আমাদের সংবিধানেই আছে অনগ্রসর যারা তারা যেন বঞ্চিত না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের জন্য কোটা। আমাদের মহিলাদের জন্য কোটা। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে আসার আগ পর্যন্ত কোন উচ্চ পদে মহিলারা আসীন ছিলেন না এবং পাকিস্তান আমলে জুডিশিয়াল সার্ভিসে মহিলারা ঢুকতে পারবে না আইন ছিল, যেটা স্বাধীনতার পর জাতির পিতা আইন পরিবর্তন করেন এবং চাকরিতে মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা এবং নির্যাতিত নারীদের জন্য কোটা করে দেন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত