সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনাঃ শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

7514

Published on এপ্রিল 22, 2018
  • Details Image

সমকালীন বিশ্বে শেখ হাসিনা এমন এক রাষ্ট্রনায়ক যিনি কেবল বাংলাদেশের তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বেই নিয়োজিত নন, তিনিই একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি টানা ৩৮ বছর ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তার নেতৃত্বেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশে রূপান্তর এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন রূপায়ইে বাঙালী জাতির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল নতুন অধ্যায় যুক্ত হতে চলেছে।

শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ওঠেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে গবর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুননেসা সরকারী মহিলা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। স্কুলজীবনেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৬২ সালে স্কুলের ছাত্রী হয়েও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে তার নেতৃত্বে আইয়ুববিরোধী মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে কলেজ সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবনের পথচলা। শেখ হাসিনা ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাত্রিতে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলেও তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। পরবর্তী ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় তাদের দুই বোনকে। শেখ রেহানার সে বছরই দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনাবলীর জন্য তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে শান্তিনিকেতনে তাঁর ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছিল। ১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে দিল্লীতে এসেছিলেন, অনুরোধ করেছিলেন তাকে ঢাকায় ফিরে আসার জন্য। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ আর কোরবান আলীর সঙ্গে ঢাকা রওয়ানা হন। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে বিদেশ যাওয়ার সময় শেখ হাসিনার সব ছিল। ফিরলেন একাকী, বুকের ভেতর একরাশ হাহাকার নিয়ে। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে আসা লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বুঝলেন, আগামী দিনে এই নিঃস্বার্থ লাখো মানুষই হবে তাঁর পথচলার অনুপ্রেরণা। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তাঁকে স্বাগত জানাতে সেদিন হাজির হয়েছিলেন ঢাকা বিমানবন্দরে।

১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা ঐক্যের প্রতীক হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৭ মে শেখ হাসিনা দীর্ঘ ছয় বছর পর যখন বাংলার মাটিতে পা দেন। লাখ লাখ মানুষ তেজগাঁও বিমানবন্দরে সমবেত হয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানায়। ১৯৮১ সালের ১২ জুন শেখ হাসিনার কাছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি হস্তান্তর করা হয়।

১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহণকে অবৈধ ঘোষণা করে এরশাদবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন শেখ হাসিনা। ১৯৮৩ সালে তিনি ১৫ দলের একটি জোট গঠন করেন। তার নেতৃত্বে দেশজুড়ে সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠায় ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ৩১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। চোখ বেঁধে তাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ৩টি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পরেই দেশ থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার অভিযোগে ১৯৮৭ সালের ১১ নবেম্বর শেখ হাসিনাকে গৃহে অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ ও বিডিআর এলোপাতাড়ি নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় অল্পের জন্য শেখ হাসিনার জীবন রক্ষা পায়। ১৯৯০ সালের ২৭ নবেম্বর আন্দোলনের জোয়ার ঠেকাতে সারাদেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং শেখ হাসিনাকে ধানম-ির বাসায় গৃহবন্দী অবস্থায় রাখা হয়। ৪ ডিসেম্বর জরুরী অবস্থা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অনুষ্ঠিত জনসভায় ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। সম্মিলিত বিরোধী জোটের প্রবল গণ-আন্দোলনে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।

শেখ হাসিনা ১৯৮৪ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের কংগ্রেসে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে ইয়াসির আরাফাতের আমন্ত্রণে তিউনেশিয়ায় ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (চখঙ) সদর দফতর সফর এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি-প্রক্রিয়ার বিষয়ে মতবিনিময় করেন। ১৯৮৭ সালে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশন ফর ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্স নামে সংগঠনের আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোয় অনুষ্ঠিত নারী নেত্রীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের সপ্তম কংগ্রেসে তিনি ‘নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। একই বছর প্রাগে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম বৈঠকে বিশ্বশান্তি পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৯১ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলসহ সকলকে সংগঠিত করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। গণআন্দোলনের মুখে ৩০ মার্চ তৎকালীন সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সূচিত হয় নতুন মাইলফলক।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো ছিল ভারতের সঙ্গে সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন। এছাড়া, তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচী এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচী চালু করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প। মুঠোফোন (মোবাইল) প্রযুক্তির বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়া, বেসরকারী খাতে টেলিভিশন চ্যানেল অপারেট করার অনুমতি প্রদান, ‘শান্তিবাহিনী’ প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় উল্লেখযোগ্য।

দেশের ক্রান্তিলগ্নে এবং অর্থনীতির ঘোর অন্ধকার সময়ে বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র-দর্শন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন ‘দিনবদলের সনদ’, যাতে তিনি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প উপস্থাপন করেছিলেন। ব্যাপক সাফল্যের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ শেখ হাসিনার সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সমর্থ হয়েছিল। এর পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে সরকার। সরকারের ৯ বছর মেয়াদকালে অর্থনীতির অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্ব অর্থনীতিতে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে বিখ্যাত দি ইকোনমিস্ট পত্রিকা যে চারটি দেশকে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে ঘোষণার জন্য বিবেচনা করেছিল তার মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশও ছিল। বিশ্বের খুব কম দেশই একটানা এত দীর্ঘ সময় ধরে ৬.৫ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। গবেষকদের মতে অচিরেই প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, কর্মসৃজন, খাদ্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আমদানি ও রফতানি, দারিদ্র্য ও অসমতা হ্্রাসসহ আর্থসামাজিক খাতের প্রায় প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই। অগ্রগতি হয়েছে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন খাতে। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা। ১৬ হাজারের বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার নির্মাণ, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন গঠন সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে।

১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো প্যারিসে অনুষ্ঠিত এর দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তা সংস্থাটির ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রার’-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক দু’বছর ধরে প্রামাণ্য দলিল যাচাই-বাছাই শেষে ইউনেস্কোর সেক্রেটারি জেনারেলের সম্মতিক্রমে এটি সংস্থার নির্বাহী কমিটি কর্তৃক চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।

দীর্ঘ ৪৬ বছর পরে হলেও জাতিসংঘের মতো বিশ্বসংস্থার এ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর ফলে বাঙালীর ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রণোদনাময়ী ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বব্যাপী মানবজাতির মূল্যবান ও ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত ও গৃহীত হলো।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) শ্রেণী থেকে বের হওয়ার যোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে জাতিসংঘের বিবেচনায় উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার তিনটি সূচকের মধ্যে সব কটিই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের শুরু থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিন বছর নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিপত্র দিয়েছে গত ২৩ মার্চ। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হলো এই অর্জন। এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এমডিজি) ভালভাবে অর্জনের স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়। গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স’ অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। এটি উন্নয়নের পথে আরেকটি মাইলফলক। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে। এসব অর্জনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আস্থা বেড়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসকে সম্মান জানানোর জন্য ২৬ মার্চকে বাংলাদেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাওসার। বাংলাদেশের ৪৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি তারই প্রমাণ বহন করে। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, সহনশীল, বহুত্ববাদী এবং মধ্যপন্থী জাতির দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতর।

বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রী এবং পুরস্কার প্রদান করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় ৪০টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের বেশকটি পুরস্কার রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের এ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করেন। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিপ্লোমা প্রদান করে। সামাজিক কর্মকা-, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো তাঁকে ‘হুপে-বোয়ানি’ (Houphouet-Boigny) শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল মর্যাদাসূচক ‘Pearl S. Buck ’৯৯’ পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ (CERES) মেডেল প্রদান করে। সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ‘মাদার টেরেসা’ পদক প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক রোটারি ফাউন্ডেশন তাঁকে Paul Haris ফেলোশিপ প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সর্বভারতীয় কংগ্রেস ১৯৯৭ সালে তাঁকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পদক প্রদান করে। আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে তিনি ‘Medal of Distinction’ পদক ও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে ‘Head of State’ পদক লাভ করেন। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করেন। এছাড়া তিনি ব্রিটেনের গ্লোবাল ডাইভারসিটি পুরস্কার এবং ২ বার সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘শান্তিরবৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে রিজিওনাল লিডারশীপ পুরস্কার এবং গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে।

বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাঁকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচী দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া, টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য International Telecommunication Union (ITU) শেখ হাসিনাকে ICTs in Sustainable Development Award-২০১৫ প্রদান করেন। সর্বশেষ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ান ও এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাডওয়ার্ড পুরস্কারে ভূষিত হন শেখ হাসিনা। শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘসহ বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া এ ধরনের পুরস্কার গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়।

সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে জাতিগত নিধন চালিয়ে যাচ্ছে তা স্মরণকালের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন বাংলাদেশ অভিমুখী, তখন মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সীমান্ত মজলুম রোহিঙ্গাদের জন্য খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন। প্রায় ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। শেখ হাসিনা এগিয়ে যান আর্তমানবতার সেবায় এবং তাদের পাশে দাঁড়ান, তাদের দুঃখ-কষ্ট দেখে কাঁদেন। তিনি ঘোষণা দেন; ‘আমরা রোহিঙ্গা ভাইবোনদের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খাব।’ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন যাতে না হয় সে বিষয়ে আমলাদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যয়ের কমিটি করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নিজ বিচক্ষণতায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে শান্তি, উদার ও মানবিক রাষ্ট্রে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম রোহিঙ্গা প্রশ্নে শেখ হাসিনার ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে। বিপর্যস্ত রোহিঙ্গারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশ্রয় খুঁজে পাওয়ায় ব্রিটিশ মিডিয়া শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউমেনিটি’ উপাধিতে ভূষিত করে।

বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসাডর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, যিনি এখন আন্তর্জাতিক মহলে ‘মানবতার জননী’ নামে পরিচিত। আরব আমিরাতের বহুল প্রচারিত দৈনিক খালিজ টাইমস শেখ হাসিনাকে ‘পূর্ব দেশের নতুন তারকা অভিধায় ভূষিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সাময়িকী ফোর্বস শেখ হাসিনকে বিশ্বের ত্রিশজন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানের তালিকায় স্থান দিয়েছে। পিপলস এ্যান্ড পলিটিকস নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের তৃতীয় সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কখনও কখনও দেশ দিয়ে মানুষ পরিচিত, আবার উল্টো মানুষ বা নেতা দিয়ে দেশ পরিচিতি লাভ করে। যেমনটি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পূর্ব পর্যন্ত অনেক দেশই বাংলাদেশকে ‘মুজিব কান্ট্রি’ নামে চিনত। শেখ মুজিব তখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসাডর। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ দেশের মানুষ অনেকটা শেখ হাসিনাকে দিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই পরিচিত হচ্ছে। দেশে ও দেশের বাইরে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কসুলভ কিছু অর্জনের কারণে শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসাডর।

বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের মাঝে সবচেয়ে ঘটনা বহুল জীবন শেখ হাসিনার। ২০ বারেরও বেশি এ্যাসাসিনেশনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এবং ভয়াবহ এ্যাসাসিনেশনের ঝুঁকি নিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাকে। বঙ্গবন্ধুুর মতই শেখ হাসিনাও তার সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের পেছনে ফেলে একক লিডারশীপে চলে গেছেন বেশ আগেই। শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার অবিচল সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি। বাংলাদেশ পেয়েছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অসীম সাহস দৃঢতার ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত