পাহাড়ে এখন সোনা ফলছে

6103

Published on জুন 7, 2018
  • Details Image

আবুল কাসেম ভূঁইয়াঃ

বাংলাদেশের এক বিশাল অংশ নিয়ে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলগুলো গঠিত। পুরো বাংলাদেশের দশ ভাগের এক ভাগ এলাকা এখানে অবস্থিত। কয়েকদশক আগেও এসব এলাকার পাহাড়গুলো অনাবাদি অবস্থায় ছিল। আশির দশকের পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলগুলোকে আবাদের আওতায় আনা হয়। প্রথমে রাবার চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাবার চাষে সফল হওয়ায় অনেকেই রাবার চাষে এগিয়ে আসে। বর্তমানে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে কয়েক লক্ষ একর জমিতে রাবার চাষ করা হচ্ছে। প্রতি বছর এখানে ছয় হাজার মেট্রিক টন রাবার উৎপন্ন হচ্ছে। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে উৎপাদিত প্রাকৃতিক রাবার দেশের রাবারের চাহিদা অনেকখানি মেটাচ্ছে। বর্তমানে রাবারের উত্পাদন যে-হারে বাড়ছে তাতে বিদেশ থেকে রাবার আমদানির প্রয়োজন হবে না। বরং আমাদের দেশে উৎপাদিত রাবার বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। পার্বত্য অঞ্চলে উৎপাদিত রাবারকে সাদা স্বর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। কারণ এই রাবার আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে।

পার্বত্য অঞ্চল ইতোমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে। এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল বাগান। রাবার বাগানগুলোতে উন্নত জাতের আমের বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ছোট-বড় প্রায় পাঁচ হাজার আমের বাগান রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, প্রতি বছর এখানে তিন হাজার মেট্রিক টন আম্রপালী আম উৎপন্ন হয়। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে আম চাষের পাশাপাশি কাঁঠাল, লিচু, মালটা, কমলা, সফেদা, কাজুবাদাম, ড্রাগন ফলসহ আদা, হলুদের চাষ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় পাহাড়ে উৎপাদিত সবজি আমাদের সবজির চাহিদা অনেকখানি মেটাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলগুলোর লেকগুলোতে মাছের চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। লেকে উৎপাদিত মাছ মাছের চাহিদা অনেকখানি মেটাচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলে অনেকেই আবার গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালন করে লাভবান হচ্ছেন। মোটকথা চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলগুলো এখন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পরিত্যক্ত পাহাড়গুলোতে এখন সোনা ফলছে।

আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশাল এলাকা রয়েছে। সরকার যদি এসব এলাকাকে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়, তবে আগামী দশ বছরের মধ্যে এই অঞ্চল দেশের সেরা অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে উঠবে। বর্তমানে যেসব এলাকা এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলো আবাদের উদ্যোগ নিয়ে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থা করতে পারলে অনেক সুফল পাওয়া যাবে। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলগুলোর ব্যাপারে সরকার পৃথকভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে এখানকার কৃষকদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণ, স্বল্প সুদে অথবা বিনা সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির সমৃদ্ধির পথ সুগম হবে। এজন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। পাহাড় যেভাবে আবাদ হচ্ছে তা অব্যাহত রাখা জরুরি। এখানে নতুন অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠলে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

সৌজন্যেঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত