শেখ হাসিনা বার বার টার্গেট কেন? - ড. মিল্টন বিশ্বাস

13491

Published on আগস্ট 18, 2018
  • Details Image

শেখ হাসিনাকে এই বাংলাদেশে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই চেষ্টার ঘটনাগুলো ১৯৮১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যর্থ হিসেবে গণ্য। বরং এতে তার জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা ছিল একটি নীল নকশা আর জঙ্গিবাদ উত্থানের ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় তিনশ’র বেশি নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন; নিহত হন আওয়ামী মহিলা লীগের নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। বিশ্বজুড়ে তোলপাড় করা গ্রেনেড হামলার সেই ঘটনার ভয়াবহতা আমাদের হতবাক করে দিয়েছিল। পরের বছর (২০০৫) ঠিক একই মাসের ১৭ তারিখে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ও নিহত মানুষের স্বজনদের আর্তনাদ এবং আহত মানুষের কান্নায় আমাদের মনে ক্ষোভ ও ঘৃণা আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বোমা হামলার ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো শুরু হয়েছিল তারও আগে থেকে।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর সমাবেশে এক বোমা হামলায় নিহত হয় ১০ জন। একই বছর ৮ অক্টোবর খুলনার নিরালা এলাকায় অবস্থিত কাদিয়ানীদের উপাসনালয়ে বোমা বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত হয়। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবি’র মহাসমাবেশে বোমা হামলায় ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ১১ জন। ৩ জুন বোমা হামলায় গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় সকালের প্রার্থনার সময় নিহত হয় ১০জন; আহত হয় ১৫ জন। সিলেটে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া নিহত হন গ্রেনেড হামলায়। ২০০৪ সালের ২১ মে হযরত শাহ জালালের (রহ) মাজার পরিদর্শনে গেলে গ্রেনেড হামলায় আহত হন তত্কালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী যিনি সিলেটি বাংলাদেশির সন্তান। এছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশে, অফিসে, নেতার গাড়িতে, সিনেমা হলে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। হামলা প্রতিরোধ ও জঙ্গি দমনে তত্কালীন সরকারের নিষ্ক্রিয়তা জঙ্গিবাদ উত্থানে সহায়ক হয়ে উঠেছিল; ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তত্কালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বর্তমানে আরও স্পষ্ট হয়েছে।

২০০১ সালে জোট ক্ষমতায় আসার পরে ২০০৬ পর্যন্ত সারা দেশ জুড়ে জঙ্গিবাদের বিস্ময়কর উত্থান বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়। কারণ জোট প্রশাসন জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার কথা এ সূত্রে মনে রাখা দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৯ মার্চ ২০০৭ সালে যে শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর করে তাদের সকলেরই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই অতীতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ১৫ জুন ২০০৭ সালে দৈনিক পত্রিকা থেকে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত কয়েকজন জেএমবি সদস্য অতীতে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নান তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হামলার সাথে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, লুত্ফজ্জামান বাবর এবং ইসলামী ঐক্য জোট নেতা মুফতী শহিদুল ইসলামের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হয়ে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ভিন্ন পন্থার অনুসন্ধান চলছে জামায়াত-শিবিরের ভেতর। তারা এখন আরও অনেক জঙ্গি সংগঠনকে তাদের পতাকাতলে একত্রিত করছে। অবশ্য কয়েক বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইসলামি মৌলবাদী’ দল হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘জামায়াত ইসলাম’কে। অন্যদিকে দুটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থের লেনদেন ও সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগানে সহযোগিতা দেওয়ার মতো অপরাধের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।

উগ্রপন্থীরা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি শেখ হাসিনা তথা এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসামপ্রদায়িক চেতনার নেতৃত্বকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পরের বছর সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে দেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্রও নস্যাত্ হয়েছে। বর্তমান সরকারের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী অবস্থান ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ধর্ম বিশ্বাসীরাও নিরাপদে এদেশে বসবাসের নিশ্চয়তা পাবে। সামপ্রদায়িক ও অনগ্রসর-পশ্চাত্পদ দৃষ্টিভঙ্গির চূড়ান্ত পরিণতির নাম জঙ্গিবাদ। দেশ থেকে এ ধরনের রাজনৈতিক অপতত্পরতা চিরতরে বন্ধ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

লেখক :অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সৌজন্যেঃ DAILY ITTEFAQ 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত