খামোশ বলে দেশকে চুপ করাতে পারবেন না ড. কামালঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

4640

Published on ডিসেম্বর 15, 2018
  • Details Image
  • Details Image

এতদিন ন্যায়-নীতির কথা বলে এখন কীভাবে যুদ্ধাপরাধীদের স্বজন ও তাদের দলের নেতাদের সঙ্গে একই প্রতীকে নির্বাচন করছেন, সেই প্রশ্ন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে এই ‘সখ্য লজ্জার’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শুক্রবার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে একই প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এক সাংবাদিককে ‘খামোশ’ বলেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন।

বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিকালে খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের সভায় ওই প্রসঙ্গও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

“খামোশ বললেই কি মানুষের মুখ খামোশ হয়ে যাবে? খামোশ হবে না। মানুষের মুখ খামোশ হবে না। এটা হলো বাস্তব,” বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর ২১ জন নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া তাদের দলের আরেক নেতাও বিএনপিজোটের সমর্থন পাচ্ছেন।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর নেতারাও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই প্রার্থীদের মধ্যে জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী ও দলের নেতারা, আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাওয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও আবু সাইয়িদ এবং কামাল হোসেনের দল গণফোরামের বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন।

এই প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত তাদেরই পরিবারকে, তাদেরই আপনজনকে আজকে বিএনপিসহ যেই জোট করা হয়েছে সেখানে দেখা যায়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সেই জোটে অনেকেই সেখানে এখন আছে।

“তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- যারা এত বড় অপরাধ করল, আর যেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আমরা পরাজিত করলাম, তাদের এই দোসরদের যখন ধানের শীষ দেওয়া হলো আর একই ধানের শীষ নিয়ে যারা এক সময় আমাদের সাথে ছিল বিএনপি জোটের সাথে তারা কীভাবে নির্বাচন করে, কিভাবে নির্বাচন করবে?

“এই প্রশ্নের উত্তর তারা জাতির কাছে দিতে পারবে কি না জানি না। তবে হ্যাঁ, তাদের লাজ-লজ্জা একটু কম আছে।কারণ আপনারা নিজেরাই দেখেছেন, একজনকে প্রশ্ন করতে তিনি খামোশ বলে দিলেন।”

যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত এবং তাদের দলের যেসব নেতা এবার ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন তাদের কয়েকজনের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “ঠাকুরগাঁও-২ থেকে যাকে দেওয়া হয়েছে মাওলানা আবদুল হাকিম, সে ছাত্র সংঘের সদস্য ছিল। একাত্তরে আল বদর বাহিনীর সদস্য ছিল।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পথ ঘাট চিনিয়ে দেওয়ার কাজ তারা করেছে। পাবনা-১ এ দেওয়া হয়েছে মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নজিবুর রহমানকে, যেই নিজামীর ফাঁসি হয়েছে মানবতাবিরোধী কাজ করার কারণে। এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পেছনে তার হাত ছিল সবচেয়ে বেশি। তার ছেলেকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে।
“কক্সবাজার-২ এ যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা এএইচ এম হামিদুর রহমান আজাদকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। পিরোজপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদীকে, বগুড়া-৩ এ মাসুদা মোমেন তালুকদার, যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামি মোমেন তালুকদারের স্ত্রী, তাকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে।

“খুলনা-৫ এ মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা গোলাম পারওয়ারকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরায় গাজী নজরুল ইসলামও যুদ্ধাপরাধী, ছাত্র সংঘের রাজনীতি করত এবং হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল। চট্টগ্রাম -৪ থেকে দেওয়া হয়েছে ইসহাক চৌধুরীকে, ভারতে বসে আসলাম চৌধুরী নামের এক নেতা যিনি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তারই ভাই তাকেও নমিনেশন দিয়েছে বিএনপি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “রংপুর-৩ এ নমিনেশন দেওয়া হয়েছে রিটা রহমানকে। জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামানের স্ত্রী এই রিটা রহমান। নেত্রকোনা-৪ এ নমিনেশন পেয়েছে একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান। কুমিল্লা-৪ এ খন্দকার মোশাররফ। তার কথা তো আর বলা লাগবে না। আইএসআই এজেন্টের সাথে সে কীভাবে কথা বলে যাচ্ছে, সেটা এখন সবারই জানা।

“টাঙ্গাইল-২ থেকে যাকে নমিনেশন দিয়েছে সে হচ্ছে সালাউদ্দিন টুকু। খালেদা জিয়ার ক্যাবিনেটের মন্ত্রী সালামের ভাই, যে একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন পিন্টু তারই ভাই হচ্ছে টুকু। এভাবে জামায়াতের ২২ জন ও তাদের দলের যারা অপরাধী ও অপরাধীর পরিবার তারাই নমিনেশন পেয়েছে।”

এছাড়া বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া রাজশাহী-১ এর আমিনুল হক, রাজশাহী-২ এর মিজানুর রহমান মিনু, নাটোর-২ এর রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রাজশাহী-৫ এর নাদিম মোস্তফা ও নওগাঁ-৬ এর আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ‘বাংলাভাই’সহ জেএমবি সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ করেন তিনি।

“এরা সবাই জঙ্গিবাদ সৃষ্টিতে জড়িত ছিল,” বলেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিবাদের দোসরদের সঙ্গে হাত মেলানোয় কামাল হোসেনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “যারা এতদিন আমাদের মানবতার কথা, দুর্নীতিবিরোধী কথা বলেছে…এমনকি কামাল হোসেন আমার নামেও বক্তৃতা দিয়েছেন। আমি নাকি মিগ-২৯ কিনে দুর্নীতি করেছি। কিন্তু কোনোটা প্রমাণ করতে পারেননি। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে।
“যারা এত বড় বড় কথা বলল কামাল হোসেন, সুলতান মনসুর, কাদের সিদ্দিকী তার মেয়েকেও নামিয়েছে ধানের শীষ দিয়ে। বাংলার এত তাত্ত্বিক লেখা, এত সুন্দর সুন্দর কথা, এত জ্ঞান গর্ভ কথা কোথায় গেল সেই বিবেক? তাদের বিবেকটা গেল কোথায়?

“যাদের বিএনপি মন্ত্রী করেছিল, পতাকা তুলে দিয়েছিল। আজকে মানবতাবিরোধী অপরাধে তাদের সাজা কার্যকর হয়েছে।এই লজ্জাটা বিএনপি রাখবে কোথায়? এই লজ্জাটাও তাদের নাই। এটাই বাস্তবতা। যারা তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে, এই লজ্জা তারা রাখবে কোথায়- এটাই আমার প্রশ্ন।”

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত