ভোটে মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখছে বিশ্ব

4327

Published on জানুয়ারি 2, 2019
  • Details Image

সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পুর্ব-পশ্চিম তথা গোটা বিশ্বই বলছে, এবারের ভোটে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সকলের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমুখপাত্র রবার্ট পালাদিনো মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) এক বার্তায় বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশংসার দাবি রাখে। কেন না, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বয়কট করলেও এই নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়। একাদশ নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণও প্রসংশনীয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তম দেশ, বাংলাদেশি রফতানিকারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একক দেশ হিসেবে বৃহত্তম বাজার এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের বড় একটি অংশের আবাস্থল যুক্তরাষ্ট্র। তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’

ব্রিটেনের কমনওয়েলথ মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) এক বার্তায় বলেন, ‘বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত ভোটের বেসরকারি ফলাফল জানতে পেরেছি। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া সবগুলো বিরোধী দলকে সাধুবাদ জানাই।’

ভোটের দিনের সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা এবং নির্বাচনি প্রচারণার সময়ের ভয়-ভীতি এবং সহিংসতার ঘটনা দুঃখজনক উল্লেখ করে মার্ক ফিল্ড বলেন, ‘কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য মুক্ত, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য এখন সঠিক পথের সন্ধান করা সরকার এবং সবগুলো রাজনৈতিক দলের জন্য অতীব জরুরি কাজ।’

বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রবাসী রয়েছে। স্থিতিশীল, সমৃদ্ধশালী এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যত নির্মাণের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ করতে যুক্তরাজ্যের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’

নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এক অভিনন্দন বার্তায় প্রেসিডেন্ট পুতিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা অব্যাহত রাখা এবং দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন পুতিন এবং সরকার প্রধান হিসেবে তার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সফলতা কামনা করেন।

পৃথক আরেকটি অভিনন্দন বার্তায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনার নেতৃত্বে সফল সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং আওয়ামী লীগের বিজয়ে আমি আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।' তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির অংশগ্রহণে অর্জিত এই সাফল্য আপনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থার বর্হিপ্রকাশ।’

ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং সঠিক সক্ষমতার বিচারে দুই দেশকে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী দেশ হবে আশাপ্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে আমাদের সম্পর্ক ভবিষ্যতে প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও সম্প্রসারিত হবে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্র মাজা কোচিজানসিস মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) এক বার্তায় বলেন, ‘এবারের নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। গত ১০ বছরের মধ্যে এবারের নির্বাচনে সবগুলো দলের অংশগ্রহণ ছিলো।'

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে আছে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখবে এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর দুর্বলতার কারণেই আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে।

কুগেলম্যান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো যেভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তাতে আওয়ামী লীগ যে এই নির্বাচনে জয়যুক্ত হবে, তা আগে থেকেই টের পাওয়া গিয়েছিল। তারাই ছিল এই নির্বাচনে ‘ফেবারিট’ দল।

উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ডি-৮ এর মহাসচিব দাতো কু জাফর কু শারিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক বার্তায় তিনি বলেন, "আমি নিশ্চিত যে এই ঐতিহাসিক বিজয় একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের পথ সুগম করবে।" তিনি আরো বলেন, "ডি-৮ সচিবালয়ে আমরা একই চেতনা লালন করি এবং এই নির্বাচনের ফল উদযাপনে আমরা বাংলাদেশের জনগণের সাথে সামিল হচ্ছি। এই সুনিশ্চিত বিজয় একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী অবস্থান ও অধিকতর দৃঢ় ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।"

ওআইসি'র মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমাদ আল ওথাইমিন এক শুভেচ্ছা বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাএ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন ‘এই নিরঙ্কুশ বিজয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য আপনার (শেখ হাসিনা) নেতৃত্ব ও দর্শনের প্রতি বাংলাদেশের ভোটারদের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে।’ তিনি আরো বলেন, পারস্পরিক স্বার্থ সম্পর্কীয় বিষয়ে আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য আমি অপেক্ষায় রয়েছি। বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তার জন্য প্রস্তুত ওআইসি।

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও শেখ হাসিনাকে এই বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফাহরেনহোল্টজ গত ২২ জানুয়ারি এই শুভেচ্ছা বার্তা পৌছে দেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। বার্তায় চ্যান্সেলর বলেন, ‘আপনার দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আমি এ দেশের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি।’ 

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি ) প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাও-ও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক চিঠিতে এডিবি প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত ১০ বছরে সকল খাতে বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং দারিদ্র্য নিরসন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতি গঠন কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় এডিবির বলিষ্ঠ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

এ ছাড়া ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভোট অনুষ্ঠানের প্রশংসা করে পৃথক পৃথক বার্তা দেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কি কান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, ভারতের ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোট তাসারিং, সৌদি আরবের বাদশাহ ও পবিত্র দুই মসজিদের রক্ষক সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম এবং আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস সভাপতি তরুণ গাগুই, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহামেদ সলিহ, নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগা, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েন লং ও ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নুয়েন জুয়ান ফুক, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রযুত চান-ও-চা, বেলারুসের প্রধানমন্ত্রী সের্গেই রুমাস, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদু বুহারি, ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ প্লেঙ্কোভিচ, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়া, আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আশরাফ ঘানি, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আদ্দো দানকাওয়া আকুফো আদ্দো, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল বেটমুডেজ, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মেটিউৎজ মোরাউইসকেল, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেস ব্যাবিস, গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস টিসিপ্রাস, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রাত্তে, আজারবাইজানের প্রধানমন্ত্রী নভরুজ মাম্মাদভ, জর্দানের প্রধানমন্ত্রী ড. ওমর সাল রাজ্জাজ, তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইউসেফ চাহেদ এবং এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুরি রাটাস

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত