শেখ হাসিনা-সর্বহারা নারীর আশ্রয়

3958

Published on মার্চ 11, 2019
  • Details Image

হায়দার মোহাম্মদ জিতু

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রেম-দ্রোহ-স্পর্ধার কলতানে শব্দগাথার শিল্পী। যিনি শিল্পের রাজনীতিতে এঁকেছেন মানবিক মুক্তি। যার এক টুকরো প্রামাণ্য বা উদাহরণ উক্তি ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। বর্তমান বাংলাদেশ এই উক্তির যথার্থ ফল। সমৃদ্ধ এবং সচ্ছল বাংলাদেশের যে বর্তমান চিত্র আমাদের সামনে দৃশ্যমান, তা এঁকেছেন এখানকার নারী-পুরুষ যৌথভাবে। আর এই পুরো মহাযজ্ঞকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালীর জননেত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ‘নারীকে’ বাদ দিয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন যে কোনভাবেই সম্ভব নয়, তা প্রধানমন্ত্রী অনুভব করেছিলেন। কাকতালীয় হলো তাঁর এই অনুভবকে প্রকৃতিও মিলিয়ে দিয়েছে নান্দনিকভাবে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বিশ্বের বুকে ইতিহাস রচনা করেছে, যার সরকার প্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা এবং স্পিকার তিনজনই নারী।

নারীর ক্ষমতায়নে এ রকম নিত্যনতুন বিস্ময় এবং সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্জন করেছেন ইউএন উইমেন ‘প্লানেট ৫০ : ৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওয়ার্ড-২০১৬’। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ইউনেস্কোর ‘পিস ট্রি’ পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং এপ্রিল মাসে গ্লোবাল ইউমেন লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ডে-২০১৮ এ ভূষিত হয়েছেন।

তবে অত্যধিক প্রশান্তির বিষয় হলো বৈশ্বিক রাজনীতিতে যেখানে নারী প্রায় সর্বহারা অবস্থায়। সেখানে ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৬ষ্ঠ স্থানে। পাশাপাশি নারী তার বিকশিত হওয়ার মানচিত্রে গার্মেন্টস শিল্পে সহাবস্থান কাজে লাগিয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতে গ্লোবাল মার্কেটে দেশকে নিয়ে গেছে দ্বিতীয় অবস্থানে।

আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও দুস্থ, নির্যাতিত, অসহায়, দরিদ্র ও তালাকপ্রাপ্তদের সরকার দিয়েছে ৭১ লাখ ভিজিডি কার্ড। যার আওতায় নারী উপকারভোগীগণ ২৪ মাসের সাইকেলে মাসে ৩০ কেজি পুষ্টি চাল পাবে। গর্ভবতী দরিদ্র ২৭.৭৬ লাখ মহিলাকে ‘মা ও শিশুর’ পুষ্টি ঘাটতি নিবারণের জন্য প্রতি ২৪ মাসের সাইকেলে মাসে ৫০০ টাকা হারে মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে গর্ভবতী দরিদ্র ৭ লাখ মহিলার ভাতার পরিমাণ ৫০০ টাকার স্থলে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।

নারীর জন্ম যে শুধুমাত্রই বিবাহ এবং সন্তান উৎপাদনের জন্য নয়, বরং কর্মক্ষেত্রসহ প্রকৃতিকে প্রজ্বলিত করার জন্য সেই সাহস দিতেই শেখ হাসিনা সরকার নিরাপদ আবাস্থল হিসেবে ৮টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল সুবিধা দিয়েছে। সেখানে ১৯,৯২৯ জন কর্মজীবী নারী আবাসিক হোস্টেল সুবিধা পাচ্ছেন। কর্মজীবী নারীদের আর্থিক ক্ষমতায়নের জন্য ৭৪টি ডে-কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে ৩৬,১৮৩ জন শিশুর দিবা যত্ন সেবা প্রদান করা হয়েছে।

দেশের উন্নয়নে সার্বিক অংশগ্রহণের তাগিদে দুস্থ ও প্রশিক্ষিত নারীদের আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে সহায়তার উদ্দেশ্যে ১৭,০৫০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। ৬০টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে ৩৩,৫০৩ জন নির্যাতিত নারী ও শিশুকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৪০টি সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল থেকে ৪০,৮৪৩ জন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯ এর মাধ্যমে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও বাল্যবিয়ে বন্ধে ৯,৮৪,১২৫টি ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের মাধ্যমে নির্যাতিতা, দুস্থ ও অসহায় ১,৪৩০ জন মহিলাকে আইনগত পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি মূলধনহীন নারীদের দেশের অর্থনৈতিক স্রোতে রাখতে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯১টি উপজেলায় ০.৬৩ লাখ দুস্থ ও অসহায় মহিলার মধ্যে ৫০০০ হতে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারীর মাতৃত্ব শক্তিকে সম্মান এবং শরীর পুনর্গঠনের বিবেচনায় মাতৃত্বকালীন ছুটি ৩ থেকে ৬ মাসে উন্নীত করা হয়েছে।

নারী শক্তি অনুভবই সৃষ্টির নান্দনিকতা। শেখ হাসিনা সেই নান্দনিক মানুষ যিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতোই নারীকে আবিষ্কার করেছেন কর্মী ও সৃজনশিল্পী হিসেবে। আর বাংলার নারীরাও তাঁর সেই প্রতিদান দিয়ে চলেছেন দু’হাত ভরে। যার ফল আজকের এই সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত