দুর্বল অর্থনীতির উদ্বেগ নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ প্রস্তাব

4174

Published on জুলাই 3, 2019
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই বিশ্ব গড়ে তুলতে এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী অথবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির মূল উদ্বেগ নিরসনের লক্ষ্যে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যে শুধু কয়েকটি বৃহত্ অর্থনীতির সক্ষমতা অথবা তাদের প্রয়োজনের আঙ্গিকেই সবকিছু দেখি। কিন্তু টেকসই বিশ্বের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীসমূহের অথবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতিগুলোর মূল উদ্বেগ নিরসনের উপায়ও বের করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এর বার্ষিক সভায় অংশ নিতে এখন চীনের দালিয়ান শহরে অবস্থান করছেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে ডব্লিউইএফ-এর সভায় ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকালে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার পাঁচ দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আমাকে বলছে যে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী ও দুর্বল অর্থনীতিকে মাথায় রেখেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এগুলো হচ্ছে- প্রথমত, দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শান্তি-সম্প্রীতি স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি। দ্বিতীয়ত, টেকসই উন্নয়নের সব দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তৃতীয়ত, দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থত, সবার জন্য সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সার্বিক উন্নয়ন করতে হবে। পঞ্চমত, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

শেখ হাসিনা জানান, ১৯৯৬ সালে যখন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন করা ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। তিনি বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে আমাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করেছি এবং এখন বাংলাদেশ ও ভারত আন্তসীমান্ত নৌপথ উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সব সময় বিশ্বাস করেন যে আয়তনের দিক দিয়ে ভারতের চেয়ে অনেক ছোট হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন ও যোগাযোগের মাধ্যমে এর ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি নীতিভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। ভূ-রাজনীতি সব সময়ই জীবনের একটি অংশ। তবে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে ইস্যুগুলোকে মূল্যায়ন করে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আমরা স্বল্প সময়ের অর্জনের জন্য দীর্ঘদিনের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে পারি না।’ শেখ হাসিনা বলেন, সব দেশের মধ্যে অভিন্ন সমৃদ্ধি নিশ্চিতে এখনো প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অঞ্চল বলে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। একইভাবে বঙ্গোপসাগর একটি উদীয়মান ও সমৃদ্ধ অঞ্চল। এই অঞ্চলে ১.৫ বিলিয়ন লোকের বাস। তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের আশপাশে বসবাসকারী মানুষের উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটিকে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে দেখার প্রবণতা রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

চীনের লিয়াওডং রাজ্যের দালিয়ানে গতকাল মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’স অ্যানুয়াল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়নস ২০১৯’ শীর্ষক এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান, ব্যবসায়ী, সুধী সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিল্পীসহ প্রায় ১ হাজার ৮০০-রও বেশি প্রতিনিধি যোগদান করেছেন। এটি ডব্লিউইএফ সামার দাভোস নামেও পরিচিত। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘লিডারশিপ ৪.০- সাকসিডিং ইন এ নিউ এরা অব গ্লোবালাইজেশন।’

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং দালিয়ান আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে গতকাল সকালে এই অ্যানুয়াল মিটিং উদ্বোধন করেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস সোয়াব এবং লিআনিং প্রদেশের গভর্নর ত্যাং ইউজুন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সোমবার রাতে দ্বিপাক্ষিক সরকারি সফরে চীনে পৌঁছানোর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ডব্লিওইএফ’র বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দেন। সম্মেলনে যোগদানকারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এই সম্মেলন থেকে বিশ্ব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক অসমতা এবং প্রযুক্তিগত সংকটের বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হবে।

চীনের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সংস্কারের প্রতি তাঁর দেশের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য নতুন যুগের ক্ষেত্র উন্মোচন করা হবে। আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বিধি-বিধান এবং আইনগুলোকে বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, অর্থনীতি এবং বাজার দুটোই একসঙ্গে দ্রুত বাড়ছে। কাজেই এজন্য বৈশ্বিক নীতিকে আরো উদারিকরণের এবং ব্যবসাবান্ধব করার প্রয়োজন রয়েছে।

অটিজম এবং নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) একটি সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক সংগঠন এবং ১৯৭১ সালে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর জন্ম। এটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সুইস ফেডারেল সরকারের আইনে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি পায়। ডব্লিউইএফ’র লক্ষ্যে বলা হয়েছে, এটি বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সমাজের অন্য নেতৃবৃন্দকে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং শিল্পখাতকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত হয়েছে।

সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত