মুক্তির সনদ

1649

Published on জুন 7, 2020
  • Details Image

চন্দন দাস

দীর্ঘদিন পাকিস্তানি শাসক চক্রের শোষণের যাঁতাকলে পৃষ্ট বাঙালিরা ছয় দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আবার জেগে উঠেছিল কঠিন প্রতিজ্ঞায়। বাঙালিরা মুক্তির সন্ধান লাভ করে এই ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যমে। এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাঙালির মহান নেতা ও প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।। সেই সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের অংশ বিশেষও। ঐতিহাসিক ৭ জুন। ছয় দফা আন্দোলনের রক্তঝরা দিন। বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের এক গৌরবময় দৃষ্টান্ত। ১৯৬৬ সালের এই দিনে বাঙালি স্বাধিকার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে এবং ছয়-দফা দাবির সমর্থনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী হরতাল পালন হয়েছিল। পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে প্রাণ দেন তেজগাঁওয়ের মনু মিয়া, আবুল হোসেন ও আদমজীর মুজিবুল্লাহসহ ১১জন শ্রমিক। এ দিনই ছয় দফা বাঙালির মহাসনদে (মাগনাকার্টা) পরিণত হয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ম্যাগনাকার্টা ছিল জনগণের আশা আকাংক্ষার মূর্ত প্রতীক ও মুক্তির সনদ বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে ছয় দফা ছিল তেমনি। ৭ জুনের শহীদদের রক্তের পথ বেয়ে শুরু হয়েছিল বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূত্র ধরে আসে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা, ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর সাধারণ নির্বাচন, ‘৭১-এর মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন, ‘৭১-এর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেই সঙ্গে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়। তাই বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই রক্তঝরা দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এ দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে ইতিহাসের আয়নায় দেখতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর।

১৯৬৬ সালে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফার দাবির মূল লক্ষ পাকিস্তান হবে একটি যৌথরাষ্ট্র এবং এই কর্মসূচির ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ছয় দফা দাবি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে ঢাকা বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে বাঙালির প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু জনগণকে ছয় দফার ভিত্তিতে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মনে রাখতে হবে তার ওই আহ্বানের সূত্র ধরে শুরু হয়েছিল ছয় দফা কর্মসূচির যাত্রা। এদিকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ছয় দফা কর্মসূচিকে পাকিস্তানের ঐক্যের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে এই ছয় দফা বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এই দাবি উত্থাপনের পর পাকিস্তান সরকার ও এই বাংলার তাবেদাররা মুহূর্ত দেরি না করে বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করতে থাকেন। তাদের কথা ছিল, শেখ মুজিব পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন।

১৯৬৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবের ধানমন্ডির বাস ভবনে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিতসভায় বৈঠকে ছয় দফা দলীয় কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ছয় দফা প্রচার ও প্রকাশের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট উপ-কমিটি গঠন করা হয় এবং উক্ত উপ-কমিটির নামে পুস্তিকাটি মুদ্রিত হয়। ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে (১৮-২০ মার্চ) আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই কাউন্সিল অধিবেশনে ছয় দফা দাবি সংবলিত মুদ্রিত পুস্তিকাটি বিতরণ করা হয়। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় পরবর্তীতে ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়। ছয় দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখ করেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ বস্তুত, ছয় দফা ছিল বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা ঘোষণার মাধ্যমে কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি তার মুক্তির ঠিকানা খুঁজে পায়। বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা হয়ে ওঠে ম্যাগনাকার্টা, আংশিক নয়, পূর্ণ স্বাধীনতাই ছিল যার অনিবার্য পরিণতি। ছয় দফার দাবিতে যা ছিল তার সংক্ষিপ্ত রূপ: প্রথম দফাতে উল্লেখ ছিল, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ফেডারেল রাষ্ট্র; সংসদীয় পদ্ধতির সরকার; সর্বজনীন ভোটাধিকার এবং এর ভিত্তিতে সরাসরি ভোটে নির্বাচন। দ্বিতীয় দফাতে বর্ণনা আছে, ফেডারেল সরকারে দুটো বিষয় ন্যস্ত থাকবে, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র; অন্য সব বিষয় ফেডারেশনের ইউনিটগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকবে। তৃতীয় দফাতে দুটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা দুই অঞ্চলে প্রবর্তন অথবা একক মুদ্রা। কিন্তু সেক্ষেত্রে পূর্ব থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার বন্ধে শাসনতান্ত্রিক বিধান থাকতে হবে। পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ রাখতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে। চতুর্থ দফাতে ফেডারেশনের ইউনিটগুলোর হাতে করারোপ ও রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে। ফেডারেল কেন্দ্রের হাতে এরকম কোন ক্ষমতা থাকবে না। তবে কেন্দ্র তার নিজ ব্যয় বা চাহিদা মেটানোর জন্য প্রদেশগুলোর করের একটা অংশ পাবে। পঞ্চম দফায় দেশের দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের জন্য দুটি পৃথক বৈদেশিক বিনিময় মুদ্রার হিসাব রাখা; এদেশের অর্জিত বৈদেশিক বিনিময় মুদ্রা এদেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং পশ্চিম পাকিস্তানে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে; ফেডারেল সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন দুই অঞ্চল কর্তৃক সমান হারে অথবা নির্ধারণ যোগ্য অনুপাতে দুই অঞ্চল কর্তৃক মেটানো হবে; দেশজ পণ্য দেশের দুই অঞ্চলের মধ্যে শুল্কমুক্তভাবে অবাধে চলাচল করবে; সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে ফেডারেশনভুক্ত ইউনিটের সরকারগুলো বিদেশে বাণিজ্য মিশন খোলা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করবে। সর্বশেষ যষ্ঠ দফাতে উল্লেখ ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি সামরিক বা আধাসামরিক বাহিনী গঠন করতে হবে। ছয় দফার পক্ষে জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের কারণ হচ্ছে, এই দাবিগুলো প্রকৃতপক্ষে শুধু বাংলা নয় তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষেরও দীর্ঘকালের দাবি ছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা ঘোষণা করলে মুসলিম লীগ সরকার ৬ দফাকে রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলন বলে প্রচার করতে থাকে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা বাংলায় গণসংযোগসহ সভা-সমাবেশ করতে থাকেন। এ কারণে বঙ্গবন্ধুকে অন্তত ১২ বার গ্রেফতার করে নির্যাতন চালায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। যতবার তিনি গ্রেফতার হন ততবারই জামিনে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ১৯৬৬ সালের ৮ মে গ্রেফতার হলে জামিন পাননি। এর ফলে ছয় দফার দাবির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি যুক্ত হয়ে যায়। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলকে (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হল) আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বিন্দু বানিয়ে ছয় দফার পক্ষে প্রচারণা চালাতে থাকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পুরানা পল্টন অফিস ও বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি গোয়েন্দা নজরদারিতে চলে যায। এরপর দেশরক্ষা আইনের আওতায় চলতে থাকে আওয়ামী লীগের ওপর অব্যাহত গ্রেফতার-নির্যাতন। সামরিক সরকারের এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে সমগ্র প্রদেশে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কেন্দ্রীয় প্রায় সকল নেতা কারাগারে বন্দী। সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেফতার করা হলে সাংগঠনিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী অস্থায়ীভাবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নেতাদের গ্রেফতার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২০ মে আওয়ামী লীগের এক সভায় ৭ জুন হরতাল আহ্বান করা হয়। ৭ জুনের হরতালে সারা বাংলা যেন অগ্নিগর্ভ। বিক্ষুব্ধ বাঙালি সেদিন স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে রাস্তায় নামে। টানটান উত্তেজনা ছাত্র-জনতার ইস্পাতদৃঢ় অবস্থান। তেজগাঁও এলাকায় রেলস্টেশনের আউটার সিগন্যালে ট্রেন লাইনচ্যুত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ, আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা ও টঙ্গী ছিল আন্দোলনমুখর। এই দিনে পূর্ব বাংলায় হরতাল চলাকালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশ ও ইপিআর নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গুলি চালায়। এতে আন্দোলনকর্মী ১১ জন শহীদ হন। এভাবে আইয়ুব সরকারের শত দমন, পীড়ন, নির্যাতনও ৬ দফা আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে পারেনি। এতে পাকিস্তানের সরকারবিরোধী মনোভাব আরও প্রকট হয়ে উঠে। সভা, সমাবেশ, পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদিও মাধ্যমে ৬ দফা আন্দোলন ব্যাপক গণমানুষের জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে রূপ লাভ করে। এই ৭ জুনের দিনে গ্রেফতারের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। এমন অবস্থা হয়েছিল যে ৬ দফা আন্দোলন চালিয়ে যাবার মতো নেতাকর্মী তখন জেলের বাইরে তেমন ছিল না। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ৭ জুনের খবর ফলাও করে ছাপা হলে পাকিস্তানের সরকার ১৬ জুন ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে প্রতিরক্ষা আইনে গ্রেফতার করে এবং ১৭ জুন ইত্তেফাক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে সাধারণ মানুষই এ আন্দোলনকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং এগিয়ে নিতে থাকে। এদিকে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও ন্যাপ নেতৃবৃন্দসহ বামপন্থি দলগুলো ছয় দফাকে সমর্থন করেনি। এসব বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও ছয় দফা আন্দোলন থেমে যায়নি। এই ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভূষিত হন) হয়ে উঠেন গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা।

১৯৭০ সালের ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে শহীদ সোহরওয়ার্দী উদ্যান) জনসভায় বঙ্গবন্ধু ৬ দফার প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। এ রূপ আহ্বানও করেন বঙ্গবন্ধু ওই বছরের ২৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে বেতার-টিভি ভাষণে।

মনে রাখা দরকার স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনে ছয় দফা কর্মসূচির ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যময় কেননা একটি জাতি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়েছিল ছয় দফা কর্মসূচির আন্দোলনের মাধ্যমে। আরও আমাদের স্মরণে থাকা দরকার ছয় দফা দাবি আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু ছয় দফা পেশ করেননি। তার লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, ছয় দফা ছিল রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। তখন পাকিস্তানের রাজনীতির পরিধিতে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার দাবি তোলা ছিল অসম্ভব। তখন স্বাধীনতার দাবি প্রকাশ্যে করলে বঙ্গবন্ধুর দেশদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার হতো এবং ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হতো। এমনই অবস্থায় বাঙালি মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করেন স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয়ের কৌশল হিসেবে। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন কি জন্য ঐতিহাসিক, তার প্রেক্ষপটই বা কি- এ রকম অনেক প্রশ্নের জবাব আজকের প্রজন্মের জানা নেই। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস যারা জানাবেন, তাদের ভূমিকা নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। তবু কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে জানানোর দায়িত্ব নিয়ে। তাহলেই হয়তো ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের সার্থকতা আমাদের বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ করবে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার কাজে অনুপ্রেরণা যোগাবে। ছয় দফার প্রণেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৭ জুনের শহীদদের প্রতি গভীরতম শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত