২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি’র বক্তব্য

6607

Published on জুন 12, 2020
  • Details Image

 

আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। এ সময় শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি এমপি, আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন। এ সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি’র বক্তব্য এতদসঙ্গে সংযুক্ত করা হলো।

বার্তা প্রেরক

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া 
দপ্তর সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি’র বক্তব্য

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গতকাল ১১ জুন ২০২০ মহান জাতীয় সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে কয়েক মাস ধরে বিপর্যয়ের পরও আমাদের বাজেটের আকার কমেনি বরং বেড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির সুফল এই বাজেট। করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা, মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়।

এবারের বাজেট ভিন্ন বাস্তবতায়, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রণীত। এ বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে; সংকটকালীন ও সংকট পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার গতিপথ নির্ণয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রণিত হয়েছে এবারের বাজেট। যা জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল। গতানুগতিক ধারার সাথে ‘আউট অব বক্স’ চিন্তার সমন্বয় করে সংকট জয়ের নবউদ্যোম সৃষ্টিতে এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শীর্ষক যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মানননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে করোনা প্রার্দুভাবের পর ইতোমধ্যে যে অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তাকে একটি অন্তবর্তীকালীন বাজেট বলা যেতে পারে। ১৯টি প্যাকেজে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রণোদনাটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব্বোচ্চ, যা জিডিপি’র ৩.৭ শতাংশ। করোনা মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা ও কর্মোদ্যোগ বিশ্বখ্যাত দ্যা ইকোনমিস্ট, ফোর্বস, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামসহ অন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। দ্যা ইকোনমিস্ট গত ২ মে গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে ৪টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ৬৬টি উদীয়মান সফল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে। এই বাজেট প্রণয়নে দুটি অনিশ্চয়তা ছিল, যা জয় করা ছিল দুরূহ। অনিশ্চয়তা দুটি হচ্ছে- বাংলাদেশে করোনা মহামারি চূড়ান্ত পর্যায়ে কী হবে, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো স্বচ্ছ ধারনা না থাকা এবং করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে এখনই বলতে না পারা। এই অনিশ্চয়তা জয় করে দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলার একমাত্র ত্রাণকর্তা সাহসী নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলভাবে বাজেট প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন- করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি খাদ্যের অভাবে যেন মানুষকে মরতে না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।’ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেছেন- ‘করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে অর্থনীতির বিষয়টি এড়িয়ে গেলে তার মাশুল গুনতে হবে, না হলে তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। অর্থনীতির বিষয়টি সকলকে মাথায় রাখতে হবে।’ সেই কথা মাথায় রেখেই সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছে।

গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রাটি ছিল শতকরা ৮.২ ভাগ থেকে ৮.৩ ভাগ। কোভিড পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে- ৮.২ শতাংশ। অনেকে এটাকে উচ্চাভিলাষী মনে করতে পারেন। তবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। এই প্রত্যাশা পূরণে যত ঝুঁকি নিতে হয় জননেত্রী শেখ হাসিনা তা নিবেন। গত এপ্রিলে করোনা মহামারী সৃষ্টির আগের ৮ মাসের হিসাব ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৯.৫ শতাংশ হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। করোনা মহামারির সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩.০ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং বিশ্বব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৮ থেকে ২.৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এমতাবস্থায়, অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কাঙ্ক্ষিত ভীত রচনাই এবারের বাজেটের লক্ষ্য।

করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় হ্রাস পেয়েছে। ফলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত অর্থবছরে ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা থেকে ২৯ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা হ্রাস করে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়, আমাদের জাতীয় আয়-ব্যয় নির্দিষ্ট থাকবে কী না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা পরিবর্তন হতে পারে। সে কারণে এটিকে একটি ফ্লেক্সিবল ডকুমেন্ট হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রথম বছর। সুতরাং এই বাজেটে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব পাবে।

এবারের বাজেটে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে মোট বরাদ্দ ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যা জিডিপি’র ১.৩ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৭.২ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩.০৪। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখযোদ্ধাদের সম্মানীবাবদ ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। 

এবারের বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যে কোন জরুরী চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। করোনা প্রভাব বেড়ে গেলে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতাল নির্মাণসহ আইসিইউ, ভেন্টিলেশন সাপোর্ট, কেয়ার সরঞ্জাম, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কীটসহ নানা যন্ত্রপাতি আমদানী এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের গবেষণা চলছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে আনার পরিকল্পনাও বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে সেবার পরিধি বৃদ্ধি করেছি। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসাপ্রাপ্তির সুযোগ আরও সম্প্রসারণ করা হবে। পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবাকে আরও গতিশীল করা হবে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসনে জোর প্রদান, সারের উপর ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখাসহ বিভিন্ন কর্মদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আগামী অর্থবছরে কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষিতে ভর্তুকির জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেছেন যে, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনো ভাবেই যাতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ১ ইঞ্চি ভুমিও ফেলে রাখা যাবে না। কৃষি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত সংস্থাসমূহ এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রণিত নীতি গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ আজ চাল উৎপাদনে সারাবিশ্বে তৃতীয়। আগামী অর্থবছরে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্য নিরাপত্তা খাতে গত অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ২১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা করা হয়েছে।

দীর্ঘ সাধারণ ছুটি ও লকডাউন জনিত কারণে সৃষ্ট দরিদ্র্য কর্মজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ করে এই খাতকে তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে কর্ম ঝুঁকিতে পড়া দরিদ্র্য কর্মজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে ৫০ লক্ষ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা এবং অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার আওতা সম্প্রসারণসহ নতুন করে উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা এই বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ১১ লক্ষ ৫ হাজার জন নতুন উপকার ভোগী সংযুক্ত হবে এবং এখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৩৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য খাতের ভাতা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ১৩ হাজার ৭০৯ কোটি বরাদ্দ বৃদ্ধি করে এই অর্থবছরে এই খাতে মোট ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা জিডিপি’র ৩.০১ শতাংশ এবং বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ।

সব দিক বিবেচনায় নিয়ে করোনার কবল থেকে ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের’ এক ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট হচ্ছে এবারের বাজেট। এটি একটি জনবান্ধব ও জীবনঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। যার মাধ্যমে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উৎসাহ পাবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এডিবি’র সাময়িকীর হিসাবে আশঙ্কা করা হয়েছে- করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৪ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাতে পারে। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর মাধ্যমে মোট ২ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সরকার এ লক্ষ্যে ৫০০ কোটি টাকা মূলধন প্রদান করবে। আশাব্যাঞ্জক বিষয় হলো- কর্মসংস্থানের ধারাবাহিকতার সামঞ্জস্য রাখা এবং ভবিষ্যত অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে মেগাপ্রকল্পসমূহ চলমান রাখা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহেও ২০.২৫ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

করোনা সংকটের মধ্যেও সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ বাস্তবায়ন এবং ‘সুনিল অর্থনীতির সম্ভাবনা’ কাজে লাগানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মেগাপ্রকল্পসহ এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিশীলতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।

করোনায় সৃষ্ট সংকট বিবেচনায় ব্যক্তিশ্রেণী ও কর্পোরেট লেভেলে করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে এ বাজেটে। লোয়ার কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২.৫ শতাংশে এবং ব্যক্তিশ্রেণীর ট্যাক্সের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। শিল্প ও ব্যবসাখাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করার লক্ষ্যে ব্যাংক ঋণের উপর সুদের হার ১ অংকের মধ্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। সরকার পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উজ্জ্বীবিত করার লক্ষ্যে ৬টি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়াও বিদ্যুৎখাতে গত এক দশকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যাপক বিনিয়োগের কারণে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবে। যা কল-কারখানা, শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে এবং জীবনের সকল পর্যায়ে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, বাজেট ঘোষণার সাথে সাথে কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করেই বিএনপিসহ কতিপয় মহল আগে-ভাগে প্রস্তুত করা ও মনগড়া, পুরনো ও গতানুগতিক গল্পের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকে। বিএনপি নেতারা গত ১১টি বাজেট ঘোষণার পর বাজেট নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন এবং বরাবরই বলেছেন বাজেট বাস্তবায়ন হবে না; অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এবারও তারা সংকট জয়ের সুপরিকল্পিত কর্মোদ্যোগ এই বাজেটের বিরুদ্ধে চিরায়ত ভঙ্গিতে মিথ্যাচার করছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছিল আর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলায় শুধুমাত্র স্বাস্থ্যখাতেই ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের পক্ষে এই বাজেটের ব্যাপকতা ও সম্ভাবনা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এটাই স্বাভাবিক।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দুর্যোগে-দুর্বিপাকে এ দেশের মাটি ও মানুষের পাশে থেকে কাজ করে আসছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়।

জনগণের ভালবাসায় অভিষিক্ত হয়ে টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থ বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যে অমানিশার অন্ধকার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন থাকবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল সঙ্কট ও সমস্যা মোকাবিকলা করে এগিয়ে যাবেই। জয় আমাদের হবেই বাঙালির স্বপ্নজয়ের সংগ্রামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল অভিযাত্রা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ্। পরম করুণাময় আমাদের সহায় হোন।

আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।


জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত