আমাদের ফিনিক্স পাখির জ্যোতি

3115

Published on সেপ্টেম্বর 14, 2020
  • Details Image

পারভীন জামান কল্পনাঃ
গণতন্ত্রের মানসকন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার , জননেত্রী দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলা যায় বাংলাদেশের মুকুটের জন্য শেখ হাসিনাই উজ্জলতম রত্ন। যার সাথে মিশে রয়েছে এই কথাটি -

“স্বদেশের কল্যাণে চির নির্ভীক অভিযাত্রী
করেছে অবসান বাঙ্গালির দুঃখের আমারাত্রি”।

সমসাময়িক সময়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বা উপমহাদেশে শেখ হাসিনা এখন এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন। বিপুল জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত অনুন্নত একটি দেশকে তিনি সততা , দেশপ্রেম ,প্রচন্ড সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে সেবা করে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করে বিশ্বের বিস্ময়ে পরিনত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক Times Magazine এর মতে বিশ্বের ১০ নম্বর ক্ষমতাধর ব্যক্তির অন্যতম শেখ হাসিনা এজন্য একটা দীর্ঘ ঝঞ্ঝাক্ষুদ্ধ পথ তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে । অন্য যে ৯ জন ক্ষমতাধারের কথা বলা হয়েছে। তাদের মতো নন শেখ হাসিনা। তাঁর মতো রক্ত রঞ্জিত পিচ্ছিল পথ তাদের পেরুতে হয়নি। হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে বাজি রেখে তাকে চলতে হয়েছে। অন্তত ১৯ বার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুকে পরাভূত করে দেশকে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। একাধারে তিনি মহাকাব্যের ও ট্রাজেডির নায়িকা ।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট একমাত্র বোন রেহানা ছাড়া আর সবাইকে হারালেন তিনি । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, মমতাময়ী মা-বাঙ্গালীর জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল , ভ্রাতৃবধূদ্বয়, চাচা শেখ নাসের সহ নিকট জনদেরকে। যেন একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পের মত , সূর্যোদয়ের সময়েই সূর্য গ্রাস রাতের আধার নেমে এল বাঙালী জীবনে , শেখ হাসিনা ও রেহানার জীবনে।

১৯৮১ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির চরম সংকটকালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তারপর তিনি নির্বাসিত জীবন শেষে করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বাধীন সার্বভৌম রক্তস্নাত বাংলাদেশের দায়িত্বভার কাধে নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন । গত ৩৬ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি এই দায়িত্বভার বহন করে চলেছেন। এখন তার বয়স ৭৩ পূর্ণ হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনটি মেয়াদ পূর্ন করে চতুর্থ মেয়াদ পার করছেন।

দল বা দেশ চালানোর কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা তার ছিল না । ছিল না কোন পূর্ব প্রস্তুতি। যখন তিনি আওয়ামীলীগের দায়িত্ব নিয়ে ছিলেন, তখন পরিস্থিতি ছিল চরম প্রতিকূলে এমন অবস্থা ছিল যে জাতির পিতা এবং সেই সময়ের প্রেসিডেন্টকে পরিবারসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও এবং বঙ্গবন্ধুর লাশ দীর্ঘ সময় সিড়িতে পড়ে , থাকলেও কেউ সাহস করেনি সামনে এসে দাড়াতে। আওয়ামীলীগ করা এবং বঙ্গবন্ধুর নাম উদ্ভারন করা ছিল ভয়ের ব্যাপার।

সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু, সামরিক -বেসামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর হস্তক্ষেপ , দল ভাঙ্গার খেলা , দলের অভ্যন্তরে নানা উপদলীয় কোন্দল, জনগণের মধ্যে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি । সর্বোপরি গ্রেফতার ,নির্যাতন ও ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় ২৩ জনের প্রাণহানী, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নির্বাচনের নামে মিডিয়া ক্যু (১৯৮৬) , বিনা ভোটের পার্লামেন্ট (১৯৮৮) সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামীলীগের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া (১৯৯১) এবং ষড়যন্ত্রমূলক কারচুপির নির্বাচন (২০০১) । 

পিতার মতই সাহস, অসীম ধৈর্য্য এবং দূরদৃষ্টি নিয়ে এসব পরিস্থিতি তিনি মোকাবিলা করেছেন। পদে পদে প্রতিপক্ষের চক্রান্ত, ব্যক্তি স্বার্থে দল ও দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে নিজ দলের ‘সংস্কারবাদী’ সাজা ও সেই সাথে “মাইনাস টু” ফর্মুলার নামে রাজনীতি থেকে কার্যত শেখ হাসিনাকে নির্বাসিত করা । এছাড়া ছিল আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তির নানামুখী চাপ এবং তথাকথিত এলিট শ্রেণীর একটা অংশের কারসাজি। সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগুতে হয়েছে।

রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের বর্ননা দিতে হলে একটি মহাকাব্যে পরিণত হবে। বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করে বাংলাদেশের এখন মধ্যম আয়ের দেশের দোর গোড়ায় । মাতৃমৃত্যুর হার, অপুষ্টি, খাদ্যভাব দূর করে এখন উন্নত আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তব প্রায়। এই সফলতার দেশবাসীর সাথে তাকে নিরলসভাবে সহায়তা করেছেন তাঁর দুই যোগ্য সন্তান আইসিটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় ও মনোবিজ্ঞানী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের বির্নিমানে এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সমাজের অসহায় প্রতিবন্ধী শিশুদের সেবায় নিয়োজিত থেকে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দুটি শিশু সন্তানকে বিদেশে রেখে তিনি ইতিহাসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে দেশে চলে এসেছিলেন। এসেছিলেন জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধ করার জন্য । ক্ষমতার মোহে নয়, এসেছিলেন পিতার অসমাপ্ত কর্তব্যভার পালন করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে । এসেছিলেন অসহায় বাঙ্গালীর মুখে হাসি ফোটাতে এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে। গ্রিক ট্রাজেডির মতই বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের মহানায়ককে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে। অথচ ঘটনাক্রমে বেঁচে যাওয়া এই মহাকাব্যের নায়িকা হতে হল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে।

“মৃত্যু কূপ ও ছাই থেকে জন্ম নেয়া
বেহুলা বাংলার ফিনিক্স মানবী.................
নূহের নৌকা নিয়ে নেমে আসো
আইলা সিডরের বিপন্ন বাংলায়
মুক্তি মানবী হয়ে............ আমাদের স্বপ্ন আশায়..............

তাই তিনি ফিনিক্স মানবী হয়ে বাঙলার মানুষের কাছে মুক্তি মানবী হয়ে জ্যোতি ছড়াচ্ছেন।

লেখকঃ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত