সারাদেশে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

1438

Published on অক্টোবর 9, 2020
  • Details Image

সার্বিক উন্নয়নে সারা দেশে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে সড়কের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি আমরা। নৌপথগুলো সচল করার ব্যবস্থা নিয়েছি। রেলপথ সংযোগ পুনরায় স্থাপন এবং আরো নতুন নতুন অঞ্চলে রেললাইন সম্প্রসারণ করে রেলে যোগাযোগের সুযোগ বাড়াচ্ছি। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে হাওড়ের বিস্ময় কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে মানুষের পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে। সেখানে মানুষের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতা ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। আমরা সেভাবেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এটাই আমাদের লক্ষ্য। মুজিব বর্ষে আমরা এ দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করে একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই। হয়তো আরো অনেক উন্নতি করতে পারতাম, কিন্তু করোনাভাইরাস আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বেরই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থবির হয়ে পড়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, হাওড় অঞ্চলে বিশাল মত্স্যভাণ্ডার আছে। সে মত্স্য আহরণ, লালন-পালন, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করতে যাতে সুবিধা হয়, সেভাবে আমরা এ অঞ্চলে শিল্প গড়ে তুলতে চাই। এতে কৃষির ওপর নির্ভরশীল অঞ্চলগুলোর উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত হবে। দেশে-বিদেশে রফতানি করা যাবে। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা আসবে।

সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের উদ্যোগ নেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি রাষ্ট্রপতিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। রাষ্ট্রপতি যদি এ উদ্যোগটা না নিতেন, আর বারবার আমাদের না বলতেন, তাহলে তো এ অঞ্চলে যে এ রকমভাবে রাস্তা করা যায়, এটা হয়তো চিন্তারই বাইরে ছিল। কিন্তু আজকে তার অনুপ্রেরণা এবং তারই উদ্যোগে রাস্তাটি আমরা করতে পেরেছি। আমি জানি যে এ অঞ্চলের মানুষের সেই আগের মতো দুঃখ থাকবে না।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন। এ অঞ্চলে তিনি লঞ্চে করে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ পর্যন্ত সমস্ত এলাকা, এ এলাকাগুলো ঘুরতে কয়েকদিন সময় নিয়েছেন। তিনি লঞ্চেই থেকেছেন এবং একে একে সব অঞ্চল ঘুরেছেন। বাংলাদেশকে তিনি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতার সুফলটা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছবে এবং কোনো অঞ্চলের মানুষই অবহেলিত থাকবে না— এটাই হলো জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অষ্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের পনির তৈরি হয়। এটা আগে বাজারজাত করার অসুবিধা ছিল না বলে সেটা খুব ভালোভাবে কার্যকর হয়নি। এবার যেহেতু রাস্তা হয়ে গেছে, তাই আমি মনে করি অষ্টগ্রামের পনির উৎপাদন হয়ে ঢাকা শহরে শুধু না, আমরা বিদেশেও পাঠাতে পারব। তাছাড়া প্রত্যেকটা উপজেলার একেকটা বৈশিষ্ট্য আছে, একেকটা পণ্য বিশেষভাবে উৎপাদন হয়। সেই উৎপাদিত পণ্যগুলো বাজারজাত হয়। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তারা যেন ন্যায্যমূল্য পায় সে ব্যবস্থা আমরা করছি।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর হাওড়ের বিস্ময় ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক দেখতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশা আল্লাহ এ করোনাভাইরাস শেষ হলে আমি আসব। অবশ্যই আমি আসব, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাস শীতকালে বাড়তে পারে। সেটা মাথায় রেখে প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ থেকে শুরু করে অক্সিজেনের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। আমরা তাত্ক্ষণিকভাবে দুই হাজার ডাক্তার, তিন হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি, টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে কষ্টের বিষয় আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না, কলেজে যেতে পারছে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার পরও আমরা চাচ্ছি তাদের পড়াশোনাটা যাতে চলমান থাকে। যেহেতু আমরা এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারছি না, কিন্তু তাদের যে টেস্ট পরীক্ষা, ক্লাসের পরীক্ষা, সেসব পরীক্ষা নিয়ে তাদের রেজাল্ট দিয়ে এরই মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের প্রমোশনটা দিয়ে দেয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে ডিজিটাল পদ্ধতি, টেলিভিশনে ক্লাস নেয়াসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলার দিকেও নজর দিতে হবে। কিছুক্ষণ খোলা বাতাসে থাকা, রোদে থাকা—করোনাভাইরাস দূর করার জন্য এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন, যাতে এ করোনাভাইরাসে আর কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমরা এটাও জয় করে এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ যেমন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছে। এখন যেকোনো সমস্যা হোক সেটা প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্ট হোক তা মোকাবেলা করে এগিয়ে নিয়ে যাব।

এ সময় গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রান্তে ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, ডিসি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করেছে। হাওড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া ২৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অলওয়েদার সড়কে ৫৯০ দশমিক ৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসি গার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট ও ২৬৯ দশমিক ৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ২৬১ দশমিক ৮১ মিটার দীর্ঘ ভাতশালা সেতু, ১৭১ দশমিক ৯৬৪ মিটার ঢাকী সেতু ও ১৫৬ দশমিক ৭২ মিটার দীর্ঘ ছিলনী সেতু।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত