পদ্মা সেতুর সফলতা শেখ হাসিনার, তবে...

2266

Published on ডিসেম্বর 13, 2020
  • Details Image

সুভাষ সিংহ রায়ঃ

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে সবাই বলছেন পদ্মা সেতুর সফলতা শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যেসব গণমাধ্যম সরকার ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছিল তারাই বরং এখন বেশি বেশি প্রশংসা করছে। সেই পত্রিকা এখন শিরোনাম করেছে, ‘স্পিডবোটে ২০০ ট্যাকার দিন শেষ হইতাছে ’ কিংবা ‘গুগলও ব্যস্ত পদ্মা সেতু বিষয়ক প্রশ্ন’। বিশ্বজয়ী বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট তার সেনাপতি সেলুকাসকে বলেছিলেন, ‘বিচিত্র এই দেশ’।

বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নিমকহারামি করেছিল মীরজাফর, জগৎশেঠ ও অন্যান্যরা। কিন্তু ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল সে সময়কার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ‘ইয়ার লতিফ’। আমাদের পোড়া কপাল আমাদের দেশে সংখ্যায় অল্প হলেও ইয়ার লতিফরা আছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর কাজে বিশেষ মনোযোগ এবং তা বাস্তবায়ন করেছিলেন। কেননা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকা অবস্থায় জাপান সরকারের সাথে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়েছিল।

পাশাপাশি ১৯৯৮ সালেই পদ্মায় সেতু নির্মাণের ঊদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া ঘাটে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। অথচ ছয় মাসের মাথায় ২০১০ সালে ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক আপত্তি উত্থান করে। তারপর থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে তাদের মাতম শুরু করেছিল।

শান্তিতে (!) নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাংলাদেশকে ঋণসহায়তা দিতে বাধা দেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতুতে টাকা দিতে বিশ্বব্যাংক সবসময় রাজি ছিল। ইউনূসের কারণে সেটি হয়নি। বিশ্বব্যাংক যেন টাকা না দেয়, সে জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে সংস্থাটিকে চাপ দিয়েছিলেন।’ বহির্বিশ্বে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তিনি অনবরত অভিযোগ করে যাওয়ায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুবই অবাক হই এই ভেবে, একজন নোবেলজয়ী কী করে নিজের দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন।

কানাডার আদালত বলেছেন, একনম্বর তথ্যদাতা পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে তথ্য দিয়েছেন তা মূলত ‘গুজবের’ ওপর ভিত্তি করে। একটি দলিলের উদ্ধৃতি দিয়ে আদালত বলেছেন, ওই দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাছাই করা ৫টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতির গুজবের কথা আমরা শুনেছি।’ শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ালি শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিকল্প অর্থায়নে বর্তমান সরকারের সময়েই পদ্মা সেতু হবে।

বিদগ্ধ পাঠকদের অনেকেই জেনে থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম ২০১৩ সালের দৈনিক প্রথম আলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘বিশ্বব্যাংকের বিদায় শাপেবর হতে পারে’। তিনি তার লেখায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছিলেন।

“বিশ্বব্যাংক চালাকির খেলায় হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ভালো রকম বিপর্যস্ত অবস্থানে নাকানি-চুবানি খেয়েছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। ১. জাপানের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা মোতাবেক পদ্মা সেতু প্রকল্পটি ছিল ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের চাপাচাপিতে কয়েকবার ডিজাইন পরিবর্তনের মাধ্যমে সেতু প্রকল্পকে ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের ‘গ্র্যান্ড ব্রিজ প্রজেক্টে’ রূপান্তরিত করে ফেলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন চাওয়া হয়েছিল ৬০ কোটি ডলার, কিন্তু বিশ্বব্যাংকই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের ঋণকে ১২০ কোটি ডলারে সম্প্রসারিত করেছিল; প্রকল্পে নিজেদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। ২. প্রথমে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকই ছিল প্রকল্পের প্রধান ঋণদাতা। প্রভাব খাটিয়ে ওই ভূমিকাটি বিশ্বব্যাংক কেড়ে নিয়েছিল। এডিবি ওই সময় বেশ খানিকটা উষ্মা প্রকাশও করেছিল। এভাবে একটি সহযোগী সংস্থা থেকে প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়াটা রহস্যজনক মনে হয়। ৩. পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিশ্বব্যাংক সুপারিশ করেছিল অন্য একটি কোম্পানির জন্য, কিন্তু অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মূল্যায়ন কমিটি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল ওই প্রতিষ্ঠানটি ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ হয়েছিল বলে। ব্ল্যাক লিস্টেড করার কারণ ছিল, ওই কোম্পানি নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতার ফিরিস্তি দিতে গিয়ে যে সেতুর ছবি ও কাগজপত্র জমা দিয়েছিল, সেগুলো সবই ভুয়া প্রমাণিত হয়েছিল। এতৎসত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক বারবার ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে পীড়াপীড়ি করছিল, যার ফলে পরামর্শক নিয়োগ-প্রক্রিয়া বছর খানেক বিলম্বিত হয়। কমিটির দৃঢ় অবস্থানের কারণে যখন ওই ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ প্রতিষ্ঠানটি চূড়ান্ত বিবেচনায় প্রত্যাখ্যাত হয়, তখন ওই কোম্পানির বাংলাদেশি এজেন্ট প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিল, কীভাবে পদ্মা সেতু হয়, সে দেখে নেবে। ওই এজেন্টকে দুদক আজও পাকড়াও করতে পারেনি। সে গায়েব হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক একটি ব্ল্যাক লিস্টেড কোম্পানির পক্ষে কমিটির সঙ্গে কেন হাতমোচড়ানোর খেলায় মেতে উঠেছিল, তারও তদন্ত হওয়া আবশ্যক। সেটা কি অনৈতিক কাজ হয়নি? এটাও এক ধরনের দুর্নীতি। প্রায় একটি বছর ওই ইস্যুতে নষ্ট করে ফেলা কি সময়ের অপচয় নয়? ৪. বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ শর্তে পুরো প্রকল্পের জন্য তাদের পক্ষ থেকে একজন ‘প্রশাসক’ নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রকল্পটি যদি বাংলাদেশ সরকারের হয়, তাহলে বিশ্বব্যাংক কোন অধিকারে প্রকল্পের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নিতে চেয়েছিল? বাংলাদেশকে যে ঋণ দেবে, তা সুদাসলে ফেরত নেবে। বাংলাদেশকে তারা কৃপা করছে না। এতবড় অপমান আমাদের নীতিনির্ধারকরা কীভাবে হজম করলেন, বুঝি না। ওপরের বিষয়গুলো আমার বিবেচনায় একটি দেশের প্রতি বিশ্বব্যাংকের নব্য ঔপনিবেশিক দাদাগিরির নিকৃষ্ট নজির হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিভাত হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের প্রয়োজন। পদ্মা সেতু আমরা করবই, ইনশাআল্লাহ। পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বিচারাধীন। আমি এখনো বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থাশীল থাকতে চাই।”

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে সে সময়কার দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাহেব কেন বিশ্বব্যাংকের অনৈতিক চাপের কাছে নীতি স্বীকার করেছিলেন। ২০১২ সালের ২৩ নভেম্বর গোলাম রহমান সাহেব বলেছিলেন, “দুর্নীতির ক্লু পাওয়া গেছে”। তিনি কি এখন বলতে পারবেন কি ক্লু পেয়েছিলেন। বরং দুদকের তৎকালীন কমিশনার শাহাবুদ্দিন চপ্পু সাহেব বাংলাদেশের পক্ষে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছিলেন। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চ্যেধুরীকে স্মরণ করতেই হবে, তিনি অন্যায় নীতিবির্বজিত রাষ্টদ্রোহী চাপের কাছে মাথানত করেননি।

পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। এসব পাইল তিন মিটার ব্যাসার্ধের। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে পাইলিং হয়নি এবং মোটা পাইল বসানো হয়নি। দ্বিতীয় রেকর্ড হলো- ভূমিকম্প থেকে পদ্মা সেতুকে টিকাতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ লাগানো হয়েছে। যেই বিয়ারিংয়ের সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকতে পারবে পদ্মা সেতু। আর তৃতীয় রেকর্ড হলো- নদীশাসন। নদীশাসনে চীনের ঠিকাদার সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর আগে নদীশাসনে এককভাবে এতবড় দরপত্র বিশ্বে আর হয়নি। এছাড়া পদ্মা সেতুতে পাইলিং ও খুঁটির কিছু অংশে অতিমিহি (মাইক্রোফাইন) সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এসব সিমেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে। এ ধরনের অতিমিহি সিমেন্ট সাধারণত ব্যবহার করা হয় না।

আরেকটি বিষয় প্রায়ই বলা হয়ে থাকে- ওই সময় না হয় দুর্নীতি হয়নি কিন্তু ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কী করে ৩০ হাজার কোটি টাকায় যেয়ে দাঁড়াল। মাঝে আমার মনে হয় অতিজ্ঞানী মানুষের সাধারণ জ্ঞান থাকে না। প্রথমত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়া মানেই খরচ বেড়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত ওই আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্য কত ছিল? আর এখন কত হয়েছে? তৃতীয়ত যাদের পদ্মা সেতুর কাজের এত দেরি হলো তারাই তো মূলত এ জন্য দায়ী। চতুর্থত এই সময়ের মধ্যে সেতুর নকশার পরিবর্তন করতে হয়েছে। সর্বোপরি পদ্মা সেতুতে রেললাইন নতুন করে যুক্ত হয়েছে তাতে তো খরচ বাড়া খুবই স্বাভাবিক।

যদি পদ্মা সেতু আরও আগে হতো তাহলে ১-২ শতাংশ ডিজিপি বৃদ্ধি পেত। অনেক আগে সেতুটি নির্মাণ হয়ে যেত। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর একটি বড় অবয়ব দেখতে পেতাম। এই অভিযোগের কারণে সেতুটির কাজ পিছিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা প্রমাণ করেছি, কোনো দুর্নীতি করিনি, এটা মূলকথা। এডিবির একটা স্ট্যাডি ছিল- পদ্মাসেতু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। এমন (জিডিপি) ৭ দশমিক ১ শতাংশের আশপাশেই থাকে। যদি পদ্মাসেতু আরও আগে হতো তাহলে প্রতিবছর ১ দশমিক ২ শতাংশ করে ৮-৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতো, এটা থেমে গেছে।

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে না গেলে ২০১৪ নাগাদ হয়তো পদ্মা সেতুর বড় অবয়ব দেখা যেত, ২০১৬ সালে ব্রিজটি বাস্তবে পাওয়া যেত। কিন্তু ওই ঘটনার কারণে উন্নয়নটা অনেক পিছিয়ে গেছে। ২০১৬ সালে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে যাওয়া যেত, সেটা আমাদের অর্থনীতিকে অনেক চাঙ্গা করতো। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি পিলারের (৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলার) ওপর বসানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা সেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে ছিলেন। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম স্প্যান তোলার দৃশ্য পাঠিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন; সে আনন্দ যেমন সফলতার জন্য; সে আনন্দে ছিল দুঃখ, কষ্ট, অভিমান।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিদেশে সম্পদের তালাশ করেছে; ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে টানাহেঁচড়া করেছে; দুর্নীতিবাজ বানাতে কী প্রাণান্ত চেষ্টাই না করেছে। এখন আওয়ামীবিরোধীদের কেউ কেউ শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করছেন। কিন্তু আমরা ধরেই নিতে পারি বিরোধীমহল এবার নতুন করে গান লিখবে এবং নিরপেক্ষতার ছদ্মাবরণে কোরাস গাইতে থাকবেন। শেখ হাসিনাই পদ্মা সেতু করতে পেরেছেন কিন্তু...।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

সৌজন্যেঃ জাগোনিউজ২৪

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত