বইমেলায় এসে স্বাস্থ্য সুরক্ষাও মেনে চলবেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

2471

Published on মার্চ 18, 2021
  • Details Image

সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আসুন সবাই মিলে আমরা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। আমাদের আগামী প্রজন্মকেও যেন উৎসাহিত করি।

“বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে শিক্ষায়,দীক্ষায়,অর্থনৈতিক উন্নয়নে, সাংস্কতিক উন্নয়নে,সর্বক্ষেত্রে…সামাজিক ন্যায়বোধে আমরা এই দেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি।”

পাঠকরা যেন বই পড়ার আনন্দ এবং মেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন, সেই চিন্তা থেকেই এ মহামারীর মধ্যেও বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “যারা এখানে আসবেন, অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন।”

সরকার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এ ভাইরাস মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিয়েছিল বলে সংক্রমণ ‘নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন,“এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাসটা আবার মারাত্মক আকারে দেখা দিচ্ছে ।”

টিকা দিয়েই কেউ যেন নিজেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত মনে না করেন, সে বিষয়ে সতর্ক করে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেন সরকার প্রধান।

এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীনের’ ইংরেজি অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ২০২০ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও দেওয়া হয়।

এ বছর আত্মজীবনী-স্মৃতিকথা-ভ্রমণকাহিনি শাখায় অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার; কবিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ; কথাসাহিত্যে ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ইমতিয়ার শামীম; প্রবন্ধ/গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল; অনুবাদে অধ্যাপক ও অনুবাদক সুরেশরঞ্জন বসাক; নাটকে চট্টগ্রামের নাটকের দল তির্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা রবিউল আলম পুরস্কার পেয়েছেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীনের’ ইংরেজি অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমওগণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীনের’ ইংরেজি অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমওএছাড়া শিশুসাহিত্যে ছড়াকার ও শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাহিদা বেগম, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞানে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফোকলোরে- প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বাংলাভাষা নয়, সারা বিশ্বের মাতৃভাষা সংরক্ষণের এবং মাতৃভাষা চর্চার জন্য বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে, সেজন্যেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে।

“নিজের মায়ের ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশপাশি অন্য দেশের ভাষাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। সেদিকে অনুবাদ আমাদের একান্তভাবে দরকার। বাংলা একাডেমিকে সব সময়ই আমি অনুরোধ করেছি, অন্যান্য দেশের সাহিত্য যেন আমরা জানতে পারি। কারণ একটা সাহিত্যের ভেতর থেকে মানুষের জীবনযাত্রাটা জানা যায়, তাদের সংস্কৃতি জানা যায়, তাদের ইতিহাস জানা যায়, অনেক কিছু জানার একটা সুযোগ ঘটে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা রাজনীতি করি। বক্তৃতা দেই। অনেক বক্তৃতা, অনেক কথাই বলি। সেই কথাগুলো মানুষের মন ছুঁয়ে যায়, কিন্তু তার থেকেও বেশি মন ছোঁয় সাহিত্যের ভেতর দিয়ে। সাহিত্যের ভেতর দিয়ে কোনো বার্তা যদি আমরা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারি, তাহলে সেটার স্থায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশি হয়, আবেদনটাও বেশি হয়।”

সাহিত্যের ভেতর থেকে একটি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও যে জানা যায়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভাষা নিয়ে গবেষণা, অনুবাদ করা ও বই পড়ার ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা।

“বই পড়ার অভ্যাসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন অনেকেই ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে বই পড়েন। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি মনে করি একটা বই হাতে নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে যে পড়া, এর আনন্দটা হল আলাদা।এটা কিন্তু যন্ত্রে পাওয়া যায় না, যন্ত্রে আমরা পাই না।

“যন্ত্র বহন সহজ। কিন্তু বইয়ের নিজস্ব একটা আবেদন রয়েছে, যা কখনো মুছে যাবে না, আবেদনটা থাকবে। আর স্থায়িভাবেই থাকুক, সেটাও দেখতে হবে।”

বাংলাদেশ যখন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের স্বীকৃতি মেলার কথাও অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।

“বাংলাদেশকে কেউ এখন আর অবহেলা করতে পারবে না এবং পেছনে টানতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কাজেই সেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং স্বাধীনতার এই সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে পৌছে দেয়, সেটাই আমরা কামনা করি।”

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন একুশে বইমেলা শুরু হলেও এবার মহামারীর কারণে বইমেলার আয়োজন স্থগিত করা হয়। পরে সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে ১৮ মার্চ মেলা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কে এম খালিদ এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার তুলে দেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফীন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত