আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম খুঁজতে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটছে তদন্ত দল

3065

Published on জুলাই 10, 2021
  • Details Image

মুজিববর্ষে দেশের গৃহহীন, ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার গৃহ নির্মাণে অনিয়ম খুঁজতে মাঠ পরিদর্শনে নেমেছে পাঁচটি তদন্ত দল। প্রকল্প পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত দলগুলো শুক্রবার (৯ জুলাই) থেকেই কাজ শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আনীত অভিযোগের সত্যতা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে যাওয়া উচ্চ পর্যায়ের পাঁচটি তদন্ত দলের একটির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন। তার নেতৃত্বে তদন্ত দল মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা পরিদর্শন করে। সেখানকার বিভিন্ন স্থানে নির্মিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর পরিদর্শন করে। এরপর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা এবং বগুড়া সদর, শেরপুর ও শাহজাহানপুর উপজেলায় নির্মিত ঘর পরিদর্শন করবেন এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপ- প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি দল হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেটের বিশ্বনাথ পরিদর্শনে গেছেন।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প প্রকৌশলীয় আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে আরেকটি টিম ময়মনসিংহ, জামালপুর পরিদর্শন করবেন।

প্রকল্পের উপ-প্রকল্প প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল নীলফামারী ও লালমনিরহাট পরিদর্শন করবেন।

আর সহকারী প্রকল্প পরিচালক বদরুল আলমের নেতৃত্বে আরেকটি দল পাবনা, নাটোর এবং মানিকগঞ্জ জেলা পরিদর্শন করবেন।

প্রতিটি টিমে প্রকল্প কর্মকর্তারা ছাড়াও রয়েছেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পর্যায়ক্রমের এ সব জেলা উপজেলা তদন্ত দলগুলো পরিদর্শন করবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে তদন্ত দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একসঙ্গে কাজে বেড়িয়ে পড়েছেন। প্রথম দফায় সারাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাগুলোকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে পরিদর্শন শুরু করেছে। আগামী চারদিন আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলো পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে যা পাবেন তদন্তে তার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেবেন।

উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে যাওয়া একটি টিমে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার। তিনি সারবাংলাকে বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের ভাষানচর এলাকা পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। ভাষানচরে একসঙ্গে ২শ ঘর রয়েছে। যার নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত অভিযোগ এসেছে তার ভিত্তিতেই এ এলাকা চিহ্নিত করে পরিদর্শনে এসেছি। এখানে এসে দেখেছি নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে বাড়ি নির্মাণ হয়েছে এমন যে অভিযোগ উঠেছিলো, তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

তবে সেখানে পাইলিং এর কিছু বালু ধুয়ে গেছে। কিছু ঘরের সামনের মাটি সরে গেছে। এখানকার ঘরগুলোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে, দেবে গেছে এসবের সত্যতা পাওয়া যায়নি তবে যে মাটি বালু সরে গেছে তা দেখা গেছে। আমরা তদারকি যে সব কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলছেন অতিবৃষ্টির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ঘরগুলোর চারপাশে মজবুত দেয়াল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচটা টিমে ভাগ হয়ে কাজ করছি। মুন্সীগঞ্জ পরিদর্শন শেষ টাঙ্গাইলের কয়েকটা উপজেলায় যাব।’

জানা গেছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনিয়মের সংবাদ ধরেই তদন্ত দলগুলো পরিদর্শন শুরু করেছে। বাড়িগুলোর গুণগত মান, নির্মাণশৈলী, অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছে কীনা, তা যাচাই করার পাশাপাশি অসঙ্গতি বা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন। এরপর সেসব ঘরের ছবিসহ প্রতিবেদন জমা দেবেন।

এ প্রসঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ আর পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সারাবাংলাকে জানান, গঠিত টিমগুলো প্রথম পর্যায়ে কয়েকটি বিভাগের জেলা উপজেলায় ঘর পরিদর্শন শুরু করেছেন। মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের পাশাপাশি তারা সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করছেন। ত্রুটি কী কী রয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন।

এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে মানবিক প্রকল্প উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ আমলে নিয়ে মাঠে নেমেছি। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। যে সব বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবগুলো ঠিক করে দেওয়া হবে।’

এর আগে গত ৪ ও ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে মাঠ প্রশাসনের পাঁচ কর্মকর্তাকে ওএসডি করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদের একজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে, বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, জমিও নেই, ঘরও নেই কিংবা ঘর আছে তাতে মাথা গোঁজার অবস্থা নেই। দেশের এমন মানুষদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। এমন পৌনে নয় লাখ পরিবারকে ঘর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

সৌজন্যেঃ সারাবাংলা

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত