দেশরত্ন শেখ হাসিনা : জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী

1664

Published on সেপ্টেম্বর 27, 2021
  • Details Image

ড. মো. মোরশেদুল আলম:

২৮ সেপ্টেম্বর। বঙ্গবন্ধুতনয়া গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মাদার অব হিউম্যানিটি খ্যাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্মদিন। বর্তমান বিশ্বে সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠতম সম্মানজনক স্থান অর্জনকারী একজন বিশ্বনেতা।

বঙ্গবন্ধুর যাদুকরি নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন দুর্বারগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকায় মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় নির্মম এ হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী সরকারের বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দেশের চরম ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি ভঙ্গুর আওয়ামী লীগের হাল ধরে একে পুনর্গঠিত করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সরকার গঠন করেন। এরপর ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনগুলোতেও নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে তিনি পরপর তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন আমাদের জন্য সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূরে এগিয়ে গেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় স্বদেশ। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরসহ সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি ঘরে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। ধান, ফল, মাছ উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্য এসেছে। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে অবস্থান করে নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কৃষিখাতে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য বিশ্বদরবারে বারবার আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সমগ্র বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে সাফল্য, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ গণ্য করছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের ওয়ার্ল্ড লিগ টেবিল ২০২১ রিপোর্টে। রিপোর্ট অনুযায়ী উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ১৫ বছর পর বিশ্বের ১৯৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান হবে ২৫তম। উন্নয়ন গবেষকরা আজকের বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’, দক্ষিণ এশিয়ার ‘তেজি ষাঁড়’, 'অফুরন্ত সম্ভাবনার এক বাংলাদেশ’সহ নানা অভিধায় ভূষিত করেছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে আমরা বিশ্বসভায় অন্য এক মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশকে দেখতে পেয়েছি।

যে বাংলাদেশ ছিল একসময় অবহেলিত, দারিদ্র্যপীড়িত; যে বাংলাদেশকে নিয়ে পশ্চিমা-বিশ্ব উপহাস করত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে; প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সুদক্ষ, সৃজনশীল ও সাহসী নেতৃত্বের ফলে; সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়, উন্নয়নের রোলমডেল। যে বাংলাদেশ এক সময় পরিচিতি সমস্যায় ভুগতো, সেই বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁরই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কারণে। যে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল শূন্য হাতে সেই বাংলাদেশ এখন মহাশূন্যে উপগ্রহ পাঠায়, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু বানায়। ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে যে দেশটি যাত্রা শুরু করেছিল, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের চোখে এক বিস্ময়। এই কৃতিত্বের দাবিদার বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। কারণ তাঁর নেতৃত্ব না হলে এই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হতো না। শেখ হাসিনা এখন শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি একজন বিশ্ব নন্দিত রাষ্ট্রনায়ক। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন; সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের মাধ্যমে, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করার মাধ্যমে এবং খাদ্যঘাটতির দেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করার মাধ্যমে। দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমায় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একদিকে যেমন তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন; তেমনি আবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য উল্লেখযোগ্য এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেছেন।

বাংলাদেশ এখন দ্রুত উন্নয়নশীল প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে একটি। জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ নামের শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছরের অমীমাংসিত স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলের মানুষ অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে। ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ৮৫১ একর জায়গা বাংলাদেশের সীমানায় যুক্ত হয়েছে। সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশের সীমানায় যুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। শত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাবনার রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ি ও মহেশখালিতে কয়লাভিত্তিক ১০,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি মেগাপ্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। চার-লেন, ছয়-লেন ও আট-লেন জাতীয় মহাসড়ক, উড়াল সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মাধ্যমে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিদ্যুৎচালিত বুলেট ট্রেন স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পটুয়াখালীতে পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, ফোর জি মোবাইল প্রযুক্তি চালু, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, অনলাইনে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও ভর্তি প্রক্রিয়া, ই-টেন্ডার প্রবর্তন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা কেন্দ্র, ই-কমার্স প্রভৃতির মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তব।

পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে দ্বিতীয়, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চাল উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম, আম উৎপাদনে নবম, খাদ্যশস্য উৎপাদনে দশম। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার, দুস্থ ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান নিশ্চিত করা হয়েছে। শিল্পায়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বন্ধ থাকা পাটকল এবং বস্ত্রকল পুনরায় চালু করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে সরকার অটল রয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। সরকার কর্তৃক গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স-এ ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭ম। সারাদেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে অন্যান্য দেশ। করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক অতিমারিতেও বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। করোনা মোকাবিলার সক্ষমতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ও বিশ্বে বিশতম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ এবং অনেক উন্নত দেশকেও পেছনে ফেলে জনগণের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা আজ শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-এর গণতন্ত্র সূচক-২০২০ এ চার ধাপ অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে সূচকে ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ৭৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর ৫ দশমিক ৮৮ স্কোর নিয়ে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮০তম। ৫টি মানদণ্ডে ১০ পয়েন্ট ধরে বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির বিচার করে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে (ইআইইউ)। এগুলো হলো: নির্বাচনী-ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারের সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার। এ তালিকায় ভুটান রয়েছে ৮৪তম, নেপাল ৯২তম, পাকিস্তান ১০৫তম অবস্থানে। সামাজিক-অর্থনৈতিক-অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা সূচকে আজকের বাংলাদেশের যে অগ্রগতি-অবস্থান তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিকট রোল মডেল।

বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের শ্রেণীকরণে ২০১৫ সালের ১ জুলাই নিম্ন আয় থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ধারাবাহিক উন্নতির কারণে বাংলাদেশ এ তালিকায় আসে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য বলে স্বীকৃতি দেয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই কমিটি বাংলাদেশকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করে। মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সামাজিক সূচকে উন্নতি এবং অর্থনীতির সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য বলে মনে করেছে জাতিসংঘ। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে ভারত, চীন, মালয়েশিয়ার মতো এলডিসি নয় এমন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে দ্য ইকোনোমিস্ট ৬৬টি সবল অর্থনীতির তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজি’র অনেক সূচক অর্জন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে বাংলাদেশ। এমডিজিতে ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হারে কমাতে বাংলাদেশ সক্ষম হয়। এমডিজি অর্জনের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন তাঁর ভারত : উন্নয়ন ও বঞ্চনা গ্রন্থে লিখেছেন, বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাবে, এ কথা কেউ ভাবেনি। দেশ স্বাধীনের পর অনেকেই তখন বলেছিলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কেউ কেউ তাকে ‘বাস্কেট কেস’ বলে খরচের খাতায় ফেলে দিয়ে বলেছিলেন, এ দেশকে কোনো অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়াই উচিত নয়। কারণ, সে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য উৎপাদন করে উঠতে পারবে না। তিনি আরও বলেছেন, জীবনমানের নানা সুপ্রচলিত মাপকাঠিতে বাংলাদেশ কেবল ভারতের চেয়ে অনেক ভালো করছে না, অনেকটা এগিয়েও গেছে। অনেক সামাজিক সূচক, যেমন: গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, টিকা দেওয়ার মাত্রা, সনাতন প্রজননের হার এবং এমনকি স্কুলশিক্ষার কিছু মাপকাঠিতে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।

২০১০ সালে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনায় জাতিসংঘ দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ‘এমডিজি পুরস্কার’ প্রদান করে। ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, সাউথ-সাউথ নিউজ ও জাতিসংঘের আফ্রিকা সংক্রান্ত অর্থনেতিক কমিশন যৌথভাবে স্বাস্থ্যখাতে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জনের জন্য ‘সাউথ-সাউথ পুরস্কার’ প্রদান করে। ২০১২ সালে বন ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের জন্য ইকুয়েটর পুরস্কার, ওয়াঙ্গারি মাথাই পুরস্কার এবং আর্থ কেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০১১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদানের জন্য ‘গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত হন। ২০১২ সালে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক ‘কালচারাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত হন। ২০১৩ সালে দারিদ্র্য ও অপুষ্টি দূরীকরণে অবদানের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক ‘ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত হন। ২০১৪ সালে নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক ‘শান্তিবৃক্ষ পুরস্কার’-এ ভূষিত হন। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে ইউনাইটেড নেশনস্ উইমেন-এর পক্ষ থেকে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘প্লানেট ৫০: ৫০ চ্যাম্পিয়ন’ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে নারীদের বৈশ্বিক সম্মেলনে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের জন্য ২০১৮ সালে জাতিসংঘ সদর দফতর তাঁকে ‘ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল- ইউনিসেফ ২০১৯ সালে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননায় ভূষিত করে। টিকাদান কর্মসূচিতে অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধিতে ভূষিত হন তিনি। ২০১৯ সালে বার্লিনে নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ‘লাইফ টাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) দারিদ্র দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সকলের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সার্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে অগ্রসর করার জন্য “এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার ২০২১” অর্জন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি ডক্টর অব লজ, ডক্টর অব লিবারেল আর্টস, ডক্টর অব হিউমেন লেটার্স, ডক্টর অব সায়েন্স প্রভৃতি সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন। তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি মাদার তেরেসা পদক, সেরেস পদক, পার্সন অব দ্য ইয়ার, পার্ল এস বাক পদক, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক, নেতাজী মেমোরিয়াল পদক, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফেলিক্স হোফে বোইনি শান্তি পুরস্কার, এম কে গান্ধী পদক প্রাপ্ত হন। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৩০টি। এগুলোর মধ্যে শেখ মুজিব আমার পিতা, সামরিক বনাম গণতন্ত্র, ওরা টোকাই কেন, বিপন্ন গণতন্ত্র, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, People and Democracy, The Quest for Vision 2021 ইত্যাদি গ্রন্থগুলো উল্লেখযোগ্য।

বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দেখানো স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণকে রাজনৈতিক মুক্তি প্রদান করেন, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে দেশের জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি প্রদান করার মাধ্যমে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে উন্নয়নশীল এবং মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২১০০ সালের বাংলাদেশ নির্মাণের কথা ভেবে ‘ডেল্টা প্ল্যান’ মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানব উন্নয়ন সূচকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তিনি। সারাবিশ্ব দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রত্যক্ষ করছে ও প্রশংসা করছে। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি বিশ্বমঞ্চের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। তাই তিনি জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।

লেখক :সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

(মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত