কোনো সংঘাত-যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাইঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

1246

Published on মে 29, 2022
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কোনো সংঘাত চাই না, কোনো যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক সেটিই আমাদের কাম্য।

রোববার (২৯ মে) সকালে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে যুক্ত ছাড়াও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিতদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন।

বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির পর জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাতির পিতার সেই ভাষণে ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ জানিয়ে বলেন, ‘এই নীতি তিনি ঘোষণা করেছিলেন। যে নীতি এখনও আমরা মেনে চলি। আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করার দিকে মনোনিবেশ করেছি। কাজেই বাংলাদেশ সবসময় চায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। যুদ্ধ না, আমরা শান্তি চাই। সংঘাত না, আমরা উন্নতি চাই।’

আজ আমরা সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরবের ৩৪বছর উদযাপন করছি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত ৩৪বছর ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রতিটি শান্তিরক্ষী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন। আজ সমগ্র বিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বজনবিদিত।

জাতিসংঘ মিশনে কার্যকর অংশগ্রহণ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একইসঙ্গে সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশসমূহের সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়াও শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।’

সমসাময়িক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার অগ্রযাত্রার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় এবং অরাষ্ট্রীয় অপশক্তিসমূহ নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে এই নতুন চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় আমরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করে তুলছি।’

‘পিপল পিস প্রগ্রেস দ্য পাওয়ার অব পার্টনারশীপ’ ২০২২ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা দিবসের প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আরও জোরালো ভূমিকা বাংলাদেশ পালন করবে, সেই অঙ্গীকার আমরা করছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যগণ ২১ শতকের বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম।

আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এ মূহূর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১২১টি দেশে ৭৫ হাজার ৫১৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮২৫ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন।’ যা বিশ্বে নিয়োজিত সর্বমোট শান্তিরক্ষীর ৯ দশমিক ২শতাংশ বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৫১৯জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্বশান্তি রক্ষার কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। আমি জেনে আনন্দিত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী তাদের নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করছে। তা ছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব নিজেই বিশেষভাবে বলেছেন, তিনি আরও বেশি সংখ্যক নারী সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে চান। আমি বলেছি, আমরা সবসময় প্রস্তুত।

আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশে ৫৫টি মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পূর্ণ করেছেন। বর্তমানে ১৩টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বেশকিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিভিন্ন মিশনে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার এবং সেক্টর কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শান্তিরক্ষী সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য সহযোগী শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে শান্তি ফিরে নিয়ে আপনারা ওইসব দেশের জনগণের অকুষ্ঠ ভালবাসা আস্থা বিশ্বাস অর্জন করেছেন। কারণ আমাদের শান্তিরক্ষীদের একটা বিশেষ গুণাবলি হলো শুধুমাত্র শান্তি রক্ষার দায়িত্বই পালন করেন না, তার সঙ্গে অনেক সামাজিক দায়িত্বও পালন করেন। তাই শিশু নারী থেকে সর্বস্তরের মানুষের একটা বিশ্বাস আস্থা আপনারা অর্জন করেন।’

শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে নিজেরে জীবনকে উৎসর্গ করে বিশ্ব দরবারে যারা বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত করেছে তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে বলেন, ‘আমি জানি আপনজন হারাবার বেদনা কত কঠিন কত নির্মম।’

এ পর্যন্ত ১৬১ জন আমাদের শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত দুইজন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। তাই তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে দুই শহীদ শান্তিরক্ষী পরিবারসহ ১৪জন আহতদের পরিবারে সদস্যদের সম্মাননা জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে জানিয়ে শান্তিরক্ষী সদস্যদের পেশাদারিত্ব সততা বজায় রেখে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবেন এবং নিজেদের জীবনকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করবেন। দেশের ভাবমূর্তি যেন উজ্বল হয়, সেভাবেই আপনারা কাজ করবেন।’

‘সবসময় মনে রাখবেন যে কোনো দায়িত্ব পালনে আত্মবিশ্বাসটা সব থেকে বড়। কাজেই সকলেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন। তাহলেই আপনারা সফল হবেন। জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রয়োজন হলে আমরা আরও সমসংখ্যক শান্তিরক্ষী পাঠাতে প্রস্তুত। সেটুকু জাতিসংঘকে বলতে পারি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্ব করোনাভাইরাসের মতো মহামারি অতিক্রম করতে করতে আবার একটি যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। যা আজকে সারাবিশ্বের অর্থনীতির ওপর একটা বিরাট প্রভাব ফেলেছে। আমরা কোনো সংঘাত চাই না, কোনো যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক সেটাই আমাদের কাম্য। বিশ্ববাসীর পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের শান্তিরক্ষাসহ সকল শান্তিরক্ষাবাহিনীরা যেভাবে সকলে কাজ করে যাচ্ছেন, আমি মনে করি সকলের এই অবদান অবশ্যই মনে রাখবে।’

আপনারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালি শান্তিরক্ষাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন। বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন, এটিই আমাদের প্রত্যাশা বলে অবহিত করেন শেখ হাসিনা।

 - সারাবাংলা 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত