তোমার নৌকা পাল উড়িয়েছে স্রোতে

1100

Published on সেপ্টেম্বর 28, 2022
  • Details Image

আশেক মাহমুদ সোহানঃ 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবদ্দশায় দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে এবং স্বাধিকার আন্দোলনে বাঙালির মুখপাত্র হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে শোষণমুক্তির যে জয়গান গেয়েছিলেন তারই পূর্ণাঙ্গ রুপ স্বাধীন বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেই তিনি দমে যাননি,একটি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ পুর্নগঠনের চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৭২-১৯৭৫ মাত্র এই তিন বছরে প্রাদেশিক সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারে উন্নীতকরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ,বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রত্যাহার,আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন,পরিকল্পনা কমিশন গঠন,স্বাধীন দেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন,সংবিধান প্রণয়ন, অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠন,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ কর্মসূচী,মুদ্রা ও ডাকটিকেট প্রবর্তন,সামরিক বাহিনী গঠন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিসহ দেশের কৃষিখাতে সমবায় ভিত্তিক অগ্রগতি, শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবস্থার একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো তৈরি করেন। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধামুক্ত,দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরে স্বপ্নের সচলায়তন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় সৃষ্টি হয়, কিছু বিপথগামী,উচ্চাকাঙ্খী ও উশৃংখল সেনাসদস্য ঘাতকরুপে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবার উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। একটি দেশের স্থপতি ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ এমন ভয়াবহভাবে হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তবে ভাগ্যক্রমে বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

পচাত্তর পরবর্তী পটভূমিতে কবি নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে 'পথে পথে পাথর' নামে একটি কবিতা রচনা করেন।

শেখ হাসিনা, আপনার বেদনা আমি জানি

জানি, দুঃখরজনী ফুরাতে চায় না সহজে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সিঁড়িতে

আপনি পা রেখেছেন মাত্র।

আপনার পথে পথে পাথর ছড়ানো

পাড়ি দিতে হবে দুর্গম গিরি, কান্তার মরুপথ।

বঙ্গবন্ধুর অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেই দেশের আপামর জনতার ভাগ্যোন্নয়নের শপথ নিয়ে দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে তোলেন যার ফলশ্রুতিতে দলটি অচিরেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে রাজপথে সংগ্রামের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটায়। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিচালিত হয়ে আসছে এবং এর মধ্যে ১৯৯৬,২০০৮,২০১৪,২০১৮ চার বার দলটি সরকার গঠন করেছে। তার চার দশকের নেতৃত্বে তিনি দলকে যেভাবে জনসম্পৃক্ত করে তুলেছেন,তার সরকারও তেমনি জনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে এদেশের মানুষকে সুখী সমৃদ্ধ জীবন উপহার দিয়েছে। জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, দেশে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা, ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ভূমিকা অসীম। বঙ্গবন্ধু বলতেন,সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। তাঁর কন্যা সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তেই একজন 'সোনার মানুষ' হিসেবে এদেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ এর মতো পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিনি প্রমাণ করেছেন সততা আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না। পদ্মা সেতুর মত স্থাপনা, নিজের টাকায় গড়ে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালির ইচ্ছাশক্তির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। এমন অর্জনে গর্বে বুক ভরে ওঠে বাঙালির,পদ্মার স্রোতের গর্জনের সাথে ভেসে আসে কানে 'ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে'।

তবে বাংলাদেশের আজকের যে অবস্থান,এই জায়গায় পৌঁছতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ; মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা চড়াই-উতরাই। গত চার দশকে এদেশের মূলধারার রাজনীতিতে তিনি তার পিতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি,যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে আপষ করেননি, তাই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির কাছে দুর্বার সাহসী এই মানুষটাকে দমানোর একটাই উপায় মৃত্যু। জীবদ্দশায় তিনি প্রায় ২০ বারের বেশি হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন,তবে বাঁধার পাহাড় ডিঙিয়ে তিনি বারবার ফিরে এসেছেন এদেশের জনগণের মাঝে। নির্মলেন্দু গুণের লেখা সেই 'পথে পথে পাথর' এর মতো পাথর বিছানো অন্ধকারাচ্ছন্ন দূর্গম মরুপথ দিয়ে হেঁটে তিনি এদেশের জনগণের জন্য মসৃণ ও আলোকিত পথ তৈরি করছেন। এদেশের আপামর জনতার অপার অবারিত আশ্রয় হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সকল অপশক্তি দমন করে। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে তিনি বলেন,"মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে, জীবন বাজি রেখে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। নিজে কী পেলাম না পেলাম বা স্বীকৃতি বড় বিষয় নয়।"

তার বহু ভাষণে তিনি বলেছেন,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে আরো ২৫/৩০ বছর আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতো। জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে ঘাতকগোষ্ঠী ও ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের অগ্রযাত্রাকে স্থবির করে তোলে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে যারাই ক্ষমতায় এসেছে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধিতে তারা লিপ্ত থেকেছে,যার ফলশ্রুতিতে দেশ বারবার দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে।

তবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার যখনই দেশ পরিচালনা করেছে তখনই দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা তরান্বিত হয়েছে। তিনি সরকার প্রধান হিসেবে দৃঢ়তার সাথে সকল সমস্যা মোকাবিলা করেছেন এবং দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতি-মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। তার আমলেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি যে আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন, দেশের সকল নাগরিক যদি নিজ নিজ দায়িত্বে সৎ থেকে স্বপ্নপূরণের পথে,তার সারথি হিসেবে কাজ করেন তবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তার নেতৃত্বে আমরা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মত উৎসব বিশ্বজুড়ে পালন করেছি,পুরো বিশ্ব বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে বাহবা দিয়েছে।

একটু পেছনে ফিরে যাই,১৯৪৭ সালে দেশভাগের ফলে ভারত পাকিস্তান নামক দুটি দেশের সৃষ্টি হয়,এর কিছুদিন পরেই ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির ফলে বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত প্রদেশ হিসেবে থাকে,পাকিস্তানের বাকি অংশ পশ্চিম পাকিস্তান নাম পায়। তবে প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই দেশ গঠনে অবদান পূর্ব পাকিস্তানিদের বেশী থাকলেও তারা বরাবরই পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে কম সুবিধা পায় এবং তাদের দ্বারা শোষণ নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়। বঙ্গবন্ধু এই নির্যাতিত মানুষের পাশে দাড়িয়ে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন,নির্বাচনের মাধ্যমে শোষকশ্রেণীর পরাজয় ঘটান,জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করতে চাইলেও শোষকের দল ক্ষমতা হস্তান্তর করে না; বাঙালি তার অধিকার ফিরে চায়,পরাধীনতার বিরুদ্ধে শুরু হয় লড়াই,বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শোষকশ্রেণীর সাথে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনতা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দেয়।

আজ ২০২২, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের চেয়েও অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশী টাকার মান,পাকিস্তানি রুপির দ্বিগুণেরও বেশী। অথচ দেশটিই একসময় আমাদের দেশকে শোষণ করতো,বঙ্গবন্ধু সেই শোষণ থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন আর তাঁর কন্যা তাদের থেকেও সমৃদ্ধ করেছেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বয়স বঙ্গবন্ধু কন্যার বয়সের প্রায় সমান কিন্তু মাত্র ২০ বছরেরও কম সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থেকে পাকিস্তানের মত দেশকে তিনি অর্থনৈতিকভাবে হারিয়ে দিতে পেরেছেন তবে আগামীতে তার নেতৃত্বে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

তাইতো আজ বিশ্বনেতারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে উন্নয়নের জাদু জানতে চান,আর শেখ হাসিনা উত্তর দেন উন্নয়নের জাদু হচ্ছে দেশপ্রেম।

 লেখকঃ  শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত