খালেদা-তারেকের ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং: ১ কোটি ২৩ লাখ জাল ভোট, গণপ্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা

1560

Published on নভেম্বর 28, 2022
  • Details Image

 ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি সাজানো নির্বাচন করার জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ভোট জালিয়াতির লক্ষ্যে খুব দ্রুততার সাথে ২০০৬ সালে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে ৩০০ জন ছাত্রদল নেতাকে নিয়োগ দেওয়া হয় তারেক রহমানের তালিকা অনুসারে। এমনকি স্থানীয় পর্যায়েও দলীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে জাল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে খালেদা জিয়ার সরকার। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যাচাই-বাছাইয়ের সময় তাদের এই জালিয়াতি ধরা পড়ে এবং ছবিসহ নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৬ সালের ৯ আগস্ট প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়, নতুন ভোটার নথিভুক্ত করার নামে ১৮ বছরের কম বয়সীদের নাম ভোটার তালিকায় তোলা হয় বিএনপি নেতাদের নির্দেশে। এমনকি ১৪ বছরের স্কুল পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্ত করা হয় ভোটার হিসেবে। এদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াত পরিবারের আত্মীয়-স্বজন। এর বাইরে, জাল ভোট দেওয়ার জন্য, নিজেদের প্রভাব বলয়ের ভেতরে থাকা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নাম তাদের অজান্তেই ভোটার তালিকায় তোলে খালেদা জিয়ার সরকার। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকদের নাম একাধিক স্থানের ভোটার হিসেবে পৃথকভাবে নথিভুক্ত রাখা হয়। যা পুরোপুরি সংবিধানবিরোধী।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে আসে, বরিশালের গৌরনদীতে ১৫০ জন ভুয়া ভোটারের নাম অন্তভুক্ত করা হয়েছিল তালিকায়, যারা সবাই ১৮ বছরের নিচে। তাদের মধ্যে লাখে রাজ কসবা গ্রামের তারকি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল বেশ কয়েকজন। উপজেলার দক্ষিণ গোবর্ধণ এলাকার স্থানীয়রা জানান, যাদের বয়স হয়নি তাদের ভোটার করা হচ্ছে। আবার যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য , তাদের ভোটার করা হচ্ছে না।

মংলাতেও নিজেদের ভোট বাড়াতে স্কুলপড়ুয়াদের ভোটার বানাতে উঠেপড়ে লাগে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসব কিশোর-কিশোরীর বাবা-মারাও তাদের সন্তানদের নাম ভোটার তালিকায় ওঠার ব্যাপারে কিছু জানেন না।

ভোলার আলতাফ রহমান কলেজ, ওবায়দুল হক কলেজ, ইলিশ ইসলামিয়া কলেজ, ফজিলাতুন্নেচ্ছা কলেজ, ভোলা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভুয়া বয়স দেখিয়ে গণহারে ভোটার বানানো হয়েছে।

আবার বরগুনার ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের খাজুরা গ্রামের অনেক ব্যক্তি দুইস্থানে ভোটার হয়েছেন। হারুন মাস্টার পৌর এবং গ্রাম উভয় স্থানের ভোটার। পৌরতে তার ভোটার নং ৪২৯ এবং গ্রামে ভোটার নং ২৩৭। আবার শামসুদ্দিন শিকদারের পৌর ও গ্রামের ভোটার নং যথাক্রমে ৬৯১ ও ২৪৭, রাসেল শিকদারের ভোটার নং ৯৪১ ও ২০৫, মতিয়ার রহমানের ভোটার নং ৯৪৫ ও ১৮৭, মাহাবুবুর রহমানের ভোটার নং ৯৪৯ ও ১৮৯।

বিএনপি নেতাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও তাদের পরামর্শ অনুসারে ও তালিকা অনুসারে এসব ভোটার তালিকায় জালিয়াতি ও ভুয়া ভোটার তৈরি করা হয়েছে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও দুই আসনে ভোটার হয়েছিল। ফটিকছড়ি এবং চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া দুই আসন থেকে ভোট করার জন্য মনোনয়ন তুলেছিল সে। এরপর তার ডাবল ভোটার হওয়ার তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ে। নির্বাচন কমিশনের কর্তকর্তারা এই ঘটনাকে প্রতারণা ও বেআইনি বলে অভিহিত করেন।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদ জানায়, সাকা চৌধুরীর ভোটার তালিকায় জালিয়াতির ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনাররা বলেন, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারেন। কিন্তু তিনি ভোটার হবেন যেকোনো একটি স্থানের। একজন ব্যক্তি দুই জায়গায় ভোটার হতে পারেন না। এটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। এটি এক ধরণের প্রতারণা।

বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা এভাবেই অনেকে একাধিক স্থানের ভোটার হয়েছেন এবং ভুয়া নাম-পরিচয় দিয়ে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভোটার তালিকা তৈরি করে তারা। কারণ এই ভোটগুলো দলীয় ক্যাডারদের মাধ্যমে কাস্ট করে অবৈধভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত